প্রতিশোধ হিসেবে রাতভর ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। পাল্টা জবাবে ইসরায়েলও হামলা চালিয়েছে ইরানে।
হামলার আশঙ্কায় বিভিন্ন সময়ে ইসরায়েল তাদের নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়েছে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইরানি হামলা ঠেকাতে সক্রিয় থাকলেও কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে আঘাত হানে। গ্যালিলি, বাত ইয়াম, হাইফাসহ বিভিন্ন এলাকায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণে ক্ষয়ক্ষতির খবর মিলেছে।
ইরানের হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০০ জনের বেশি। রাতে প্রচারিত ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, সাধারণ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ছুটে যাচ্ছেন আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে।
ইসরায়েলের বাত ইয়ামে একটি ১০তলা আবাসিক ভবনে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার কয়েক ঘণ্টা পরও চলছে উদ্ধার তৎপরতা। এই হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো প্রায় সাতজন আটকে আছেন। কয়েক ঘণ্টা আগেও আটকে ছিলেন ৩৫ জন।
ভবনটির একটি সম্পূর্ণ অংশ ধসে পড়েছে। বাইরের দিকে বেঁকে যাওয়া লোহার ফ্রেম আর ভাঙা কংক্রিটের স্তূপ যেন এক নিঃশব্দ ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিচ্ছবি। পুলিশের নির্ধারিত সীমারেখার বাইরে স্বজনহারাদের কান্না আর সংবাদকর্মীদের ভিড়। উদ্ধারকারী দল কাজ করছে ধ্বংসস্তূপের ভেতরে, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে জীবনের লড়াই।
বিস্ফোরণের তীব্রতায় ভবনের ১০০ মিটার (৩২৮ ফুট) দূর পর্যন্ত অ্যাপার্টমেন্টগুলোর জানালা ভেঙে গেছে, শাটার উড়ে গেছে।
চলমান আড়াই দিনের সংঘাতে এটিই ইসরায়েলের ওপর সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে পাল্টা ইসরায়েলি হামলায় ইরানে নিহতের সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।
রাতভর দুই দফায় ইরান থেকে ইসরায়েলে হামলা চালানো হয়, আর সকালে আবারও নতুন করে হামলার খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানে পরমাণু স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। পাশাপাশি, তেহরানের তেল ডিপো ও ইসরায়েলের হাইফা তেল শোধনাগারও হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
এই সংঘাত শুরু হয় শুক্রবার, যখন ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এতে ইরানের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা নিহত হন। এরপরই পাল্টা হামলায় নামে ইরান। সেই থেকে মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে-স্থলে চলছে ভয়াবহ সংঘর্ষ।
এটা এক গভীর শোকের ও কষ্টের সকালের সূচনা—ইরানি হামলায় রাতভর বিপর্যয়ের পর এক্স হ্যান্ডলে এমনটাই লিখেছেন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট ইসহাক হারজগ।
তিনি লেখেন, ইরানি হামলায় ইহুদি ও আরব, ইসরায়েলি নাগরিক ও নতুন অভিবাসী—শিশু, নারী, পুরুষ ও প্রবীণ—সকলেই হতাহত হয়েছেন। আমি শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর পাশে আছি, এই ভয়াবহ ক্ষতিতে গভীরভাবে শোক প্রকাশ করছি।
তিনি আরও লেখেন, আমরা আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি, নিখোঁজদের ফিরে পাওয়ার আশায় প্রার্থনা করছি। আমরা একসাথে কাঁদব, একসাথে এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠব।
আরএইচ