ঢাকা, বুধবার, ৫ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ জুন ২০২৫, ২১ জিলহজ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

জামকারান মসজিদের চূড়ায় উড়ছে লাল পতাকা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৩৭, জুন ১৭, ২০২৫
জামকারান মসজিদের চূড়ায় উড়ছে লাল পতাকা

ইরানে লাল পতাকা শুধু কাপড় নয়, প্রতিশোধের প্রতীক। এই পতাকা ওড়ে তখনই, যখন রক্তপাতের বদলা অনিবার্য হয়ে ওঠে।

ইতিহাস বলে, কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসাইন (রা.) এর শাহাদাতের পর শোক ও প্রতিশোধের প্রতীক হিসেবেই শিয়া ইসলামি ঐতিহ্যে এই লাল নিশান ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায়ই এবার ইসরায়েলি হামলার জবাবে যুদ্ধের সংকেত হিসেবে কোম শহরের পবিত্র জামকারান মসজিদের মিনারে উড়ল সেই লাল পতাকা।

গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অনুমোদনে উত্তোলন করা হয়েছে এই পতাকা। যার অর্থ, ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে ‘প্রতিরোধ’ থেকে ‘প্রতিশোধে’ প্রবেশ করছে।

ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের একাধিক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হওয়ার পরই এই পদক্ষেপ নেয় তেহরান। জবাবে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) ঘোষণা করেছে বিশাল সামরিক প্রতিশোধ অভিযান— ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস থ্রি’। লক্ষ্য, ইসরায়েলের বিমানঘাঁটি, রাডার এবং ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়া।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ইসরায়েলের প্রতি একটি স্পষ্ট ও অশনি সংকেত। এই অভিযানের পরিকল্পনা তিনটি ধাপে বাস্তবায়ন হবে— ১. প্রথম ধাপে বিমানঘাঁটি ও রাডার ব্যবস্থা ধ্বংস করা হবে; ২. দ্বিতীয় ধাপে ইরানপন্থী প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর মাধ্যমে সীমান্ত থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হবে; ৩. তৃতীয় ও চূড়ান্ত ধাপে ব্যবহার করা হবে ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি থেকে ছোড়া হাইপারসোনিক ব্যালেস্টিক মিসাইল।

ইরান এই মুহূর্তে একসঙ্গে ৬০০’র বেশি হাইপারসোনিক মিসাইল নিক্ষেপে সক্ষম। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের এমন সিদ্ধান্ত ভয়াবহ পরিণতি সৃষ্টি করবে।

ইসরায়েলের হামলার পর দখলদাদের ভূমিতে ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইরান। বসে নেই ইসরায়েলও। তারা ইরানে আরও তীব্র হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইসরায়েলি সরকার নাগরিকদের সতর্ক করে বলেছে, দেশের সামনে এক ‘গুরুতর নিরাপত্তা হুমকি’ রয়েছে। সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় অবস্থান করার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে তেহরান ছেড়ে যেতে শুরু করেছেন বাসিন্দারা। ইরানে ইসরায়েলের হামলা পঞ্চম দিনে পৌঁছানোর পর অনেকে রাজধানী তেহরান ছেড়ে উত্তরাঞ্চলের কাস্পিয়ান সাগর তীরবর্তী মাজানদারান প্রদেশে আশ্রয় নিতে ছুটছেন।  

বিপুলসংখ্যক মানুষ আশ্রয় নিতে আসায় মাজানদারান প্রদেশের গভর্নর ঘোষণা দিয়েছেন, আগামীকাল থেকে সেখানকার বেকারিগুলো ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে। গভর্নর বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো, মানুষ যেন দিনের যেকোনো সময়, রাত-দিন নির্বিঘ্নে গরম ও টাটকা রুটি পেতে পারে। তেহরানসহ অন্যান্য অঞ্চল থেকে ১ কোটি মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে এই প্রদেশের।  

ইসরায়েলের জরুরি সেবা বিভাগ জানিয়েছে, দেশজুড়ে রক্ত সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে এবং হাসপাতালগুলো তুলনামূলক সুস্থ রোগীদের ছুটি দিচ্ছে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসাসেবা সহজ হয়।

গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের রাজধানী তেহরানে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। এতে সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীরা নিহত হন। পাল্টা জবাবে ইরান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলে হামলা চালায়।

এই পাল্টাপাল্টি হামলা ১৭ জুন পর্যন্ত টানা পাঁচ দিন ধরে চলছে। এতে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ সময় ওমানে নির্ধারিত ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক আলোচনা বাতিল হয় এবং আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।  

এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।