১২ দিন ধরে চলা সংঘাতের পর ইরান আর ইসরায়েল যখন নিজেদের লাভ-ক্ষতির হিসাব কষছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের কপাল খুলে গেছে।
ভারী বোমাবাহী বি-টু বিমান দিয়ে ইরানে দেশটি যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তা এক অর্থে দেশটির কৌশলগত বিমানের ক্ষমতা প্রদর্শনও।
দেশটি দ্রুতই নিজেদের পারমাণবিক অবস্থানকে সবচেয়ে শক্তিশালী করে তুলতে চলেছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কার্যালয় এমনটিই জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্য আপাতত সাবমেরিন থেকে ছোড়ার মতো ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে যে অনিশ্চয়তা, তখন শান্তিকে আর হালকাভাবে নিতে রাজি নয় দেশটি। তাই ব্রিটিশ সরকার জাতীয় নিরাপত্তায় বিনিয়োগ করছে বলে স্টারমার এক বিবৃতিতে বলেছেন। ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট এমন সিদ্ধান্তকে দৃঢ়ভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি একে ন্যাটো জোটে ব্রিটিশদের আরেকটি শক্তিশালী অবদান হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
এত বিমান থেকে এফ-৩৫এ নিয়ে যুক্তরাজ্যের কেন এত আগ্রহ? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রনির্মাতা লকহিড মার্টিনের তৈরি যুদ্ধবিমানটি বর্তমানে যুক্তরাজ্যের বিমানবাহিনীতে ব্যবহৃত এফ-৩৫বি-এর মতোই। তবে প্রচলিত অস্ত্র ছাড়াও এফ-৩৫এ পারমাণবিক বোমা বহন করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং ইতালিসহ সাতটি ন্যাটো সদস্য দেশের হাতে ওই মানের বিমান এখনই রয়েছে। ওইসব বিমান মার্কিন বি৬১ পারমাণবিক বোমা নিয়ে উড়তে সক্ষম। ন্যাটোর পারমাণবিক ডুয়াল ক্যাপাবেল বিমান মিশন হিসেবে বিমানটি মোতায়েন করা হবে।
একজন পাইলটই এই সিঙ্গেল ইঞ্জিনের স্টিলথ বিমানটি ওড়াতে পারে। মাল্টিরোল এই যুদ্ধবিমান একইসঙ্গে আকাশে আধিপত্য বিস্তার এবং হামলা চালাতে পারে। ইলেকট্রনিক যুদ্ধ পরিচালনা এবং গোয়েন্দাগিরিতেও ব্যবহার করা যায় এই আকাশযান। উড়ন্ত এই মৃত্যুদূতের আরও দুটি ভ্যারিয়েন্ট আছে।
সব মিলিয়ে বোঝা যাচ্ছে, ইউরোপ আবারও অস্ত্রশস্ত্র বাড়ানোর খেলায় মেতেছে। মূলত রাশিয়াকে হুমকি হিসেবে দেখিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের সামরিক ব্যয় বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ ম্যাৎস ২৪ জুন তারিখে বলেছেন, জার্মানি ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী নিয়মিত সেনাবাহিনী হয়ে উঠতে ব্যয় বৃদ্ধি করবে।
হেগে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে ন্যাটোর সদস্য ৩২টি দেশ প্রতিরক্ষা ব্যয় ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার অনুমোদন দেবে হয়ত। যুক্তরাজ্য নতুন আক্রমণাত্মক সাবমেরিন এবং যুদ্ধাস্ত্র কারখানা নির্মাণে বড় বিনিয়োগের ঘোষণাও দিয়েছে। এই পরিস্থিতিটিও তৈরি করেছেন ট্রাম্প। তার প্রশাসনের সমালোচনার পরই প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের দাবি দেশটি ন্যাটো জোটের আর্থিক বোঝার বড় অংশ বহন করছে। জোটের ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ দেশগুলোকে রক্ষা করার চেয়ে জোট ছেড়ে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প। তাহলে ইউরোপে তিনি কি কইয়ের তেলে কই ভেজে নিচ্ছেন?
এমএইচডি/এমএম