বেইজিং: জনাব লি চুং চীনের ইউনান প্রদেশের মেনঘাই গ্রামের বাসিন্দা। একসময় তিনি ছিলেন তাঁর গ্রামের আর পাঁচজনের মতোই সাধারণ একজন মানুষ।
ঘটনার সূত্রপাত আজ থেকে এক বছর আগে। স্থানীয় একটি জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় লি’র পিঠে বাঁধা ঝুঁড়ির ভিতর কিছু একটা ঝাঁপিয়ে পরে। চমকে গিয়ে ঝুঁড়ির ভিতর তাকিয়ে লি গুরুতর আহত অবস্থায় বানরটিকে দেখতে পান। সেটিই ছিল তাঁদের দুজনার মধ্যে প্রথম সাক্ষাৎ। ভালভাবে পরীক্ষা করে লি বুঝতে পারেন, বানরটির একটি হাত আর পা সংক্রামিত হয়ে পচন শুরু হয়েছে। সহৃদয় লি বানরটিকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে আসেন। তারপর পচন ধরা হাত আর পা দুটি কেটে ফেলে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দিয়ে বানরটির চিকিৎসা করেন।
লি’র চিকিৎসার গুণে বানরটি খুব দ্রুত সেড়ে উঠে। তারপর থেকেই বানরটি লি’র পরিবারের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে। সে নিজ থেকেই লি’র ঘরের সব কাজকর্মে সাহায্য করা শুরু করে।
সবকিছু ভালই চলছিল, তবে ঘটনা প্যাঁচ বাঁধে যখন বানরটি লি’র সব কাজ নকল করা শুরু করে। একদিন লি রান্না করার জন্য ডিম ভাঙছিলেন। এটা দেখার সঙ্গে সঙ্গেই বানরটি সোজা চলে যায় লি’র মুরগির খাঁচার ভিতর আর ভেঙে ফেলে সব ডিম। আরেক দিন লি’র মুরগি জবাই করার দৃশ্য দেখে ফেলে বানরটি। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, তারপর থেকে আজ পর্যন্ত বানরটির প্রায় ৮০ টি মুরগি জবাই করার রেকর্ড গড়েছে।
লি বলেন, “সেইদিন থেকে যখনি তার কোন কাজ থাকে না, সে সোজা মুরগির খাঁচার ভেতর ঝাঁপ দেয়। মুরগি যতো ছোট বা বড়োই হোক না কেন, সেটিকে সে প্রথমে জবাই করে আর তারপর পালক ছাড়ানোর চেষ্টা করে। তার রেকর্ড হলো একদিনে ৯ টা মুরগি জবাই করার। ”
লি বলেন, “এ ঘটনা থেকে আমি যে শিক্ষাটা পেয়েছি তা হলো, কখনোই বানরের সামনে মুরগি জবাই করা যাবে না। ”
তবে এ ধরনের সামান্য কিছু অঘটন ঘটানো বাদ দিলে লি’র দৈনন্দিন জীবনে বানরটির ভূমিকা অসামান্য। ছোট-বড় সব ধরনের গৃহস্থালী কাজ করে দেওয়ার পাশাপাশি বানরটি লি’র পোষা কুকুর ছানাগুলিরও দেখাশোনা করে। এমনকি লি’র বাবা মারা যাওয়ার পর শোকপালনের সময় তাঁর চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে সমবেদনা জানানোর সাথী ও ছিল এই বানর।
লি’র নিজের কথায়,“সে চুপচাপ আমার পাশে বসে ছিল আর তার একমাত্র হাতটি বাড়িয়ে আমার চোখের জল মুছে দিচ্ছিলো। সে তার হাতের তালু দিয়ে আস্তে আস্তে আমার গালে আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল আর গভীর সমবেদনা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। ”
বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১২০৫ ঘন্টা, ১২ জুলাই , ২০১০