ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

এবছর অবৈধ অভিবাসী ৫৩ হাজার বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৪
এবছর অবৈধ অভিবাসী ৫৩ হাজার বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা

ঢাকা: ভাগ্যান্বেষণে ও জীবন বাঁচাতে ২০১৪ সালে মায়ানমার ও বাংলাদেশের ৫৩ হাজার নাগরিক সমুদ্রপথে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াগামী হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচশ ৪০ জন অভিবাসী যাত্রাপথেই মারা গেছেন বলে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।



ইউএনএইচসিআর শুক্রবার (০৫ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০১৪ সালে রাষ্ট্রহীন মায়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থী জাতিগত বিদ্বেষে এবং বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর লোকজন ভাগ্য বদলের আশায় থাইল্যান্ড ও মায়ানমারে পাড়ি জমান।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে ৫০ হাজারের মতো অভিবাসী বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত এলাকা থেকে সমুদ্রপথে পাড়ি জামান। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে সমুদ্রপথে দেশত্যাগ করেন। ২০১২ সালের একই সময়ের তুলনায় তিনগুণ নাগরিক দেশত্যাগ করেন।

গত দুই মাসে ২১ হাজার নাগরিক দেশত্যাগ করেন। ২০১৩ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দেশত্যাগের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে ৩৭ শতাংশ বেড়েছে বলে ইউএনএইচসিআর জানায়। বাকি তিন হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক মায়ানমারের শীত্তি এলাকা থেকে এসেছেন।

ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে ইউএইএইচসিআর আরো জানায়, সমুদ্রপথে পাড়ি দেওয়ার সময় ধর্ষণ, মানবপাচারের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া অনেকই উদ্দেশ্যহীন হয়ে চোরাচালান চক্রের দলে ভিড়ে গেছেন।

জাতিসংঘের মতে, পৃথিবীর সবচেয়ে বিপর্যস্ত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হচ্ছে, মায়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। বৌদ্ধশাসিত মায়ানমারে নির্যাতনের শিকার। গত দুই বছরে রাখাইনদের সঙ্গে জাতিগত দাঙ্গায় তারা দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন।

এদিকে, সমুদ্রপথে পাড়ি দিতে গিয়ে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি নাগরিকরা খাদ্য, খাবার পানীয় ও নৌকায় স্থান সংকুলানে পড়তে হয়েছে।

অভিবাসীদের যাত্রা আরো বিলম্ব হতো যখন থাইল্যান্ড ও মায়ানমারের সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা তাদের ওপর হামলা চালিয়ে লুটপাট করতো। এরপর নৌকার মালিকরা উপকূলীয় অঞ্চল থেকে আরো অভিবাসী নৌকায় তুলে নিলে যাত্রা দীর্ঘায়িত হতো।  

অভিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে ইউএনএইচসিআর জানায়, ২০১৪ সালে অন্তত পাঁচ ৪০ জন অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে অভিবাসীদের নিষ্ঠুরভাবে মারধর, খাদ্য ও খাবার পানির সংকট, অসুস্থতা এবং গরমের কারণে মৃত্যুই প্রধান।

কেউ কেউ আবার অতি সাহসী হয়ে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে মারা গেছেন।

সবশেষে থাইল্যান্ড কিংবা মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পৌঁছাতে পারলেও তা তাদের জন্য সুখকর ছিল না। পাচারকারীরা যাত্রা শুরুর আগে অল্প অর্থ দাবি করলেও পরে অনেক অর্থ দাবি করে বসে। না দিতে পারলে তাদের আটকে রাখা হয়েছে।

থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া পৌঁছাতে জনপ্রতি এক হাজার ছয়শ মার্কিন ডলার থেকে দুই হাজার চারশ মার্কিন ডলার আদায় করা হতো। এতে করে বছরে একশ মিলিয়ন ডলার অর্থ আদায় করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।

২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও মায়ানমার থেকে সমুদ্রপথে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় সমুদ্রপথে পাড়ি দিয়েছেন এক লাখ ২০ হাজার মানুষ।

এর মধ্যে শত শত অভিবাসী থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের হাতে আটক হন। কেউ কেউ শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়ের আবেদন করেন। আবার কাউকে কাউকে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াতেও পাড়ি জমিয়েছেন অভিবাসীদের কেউ কেউ।

বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।