ঢাকা: পাকিস্তানের পেশোয়ারে সামরিক বাহিনী পরিচালিত একটি স্কুলে বর্বর জঙ্গি হামলায় শতাধিক শিশুসহ অন্তত ১৩২ জন নিহত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালের এ হামলায় বিকেল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে শতাধিক শিশুসহ ১৩২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া ১৩২ জনের মৃত্যুর খবর জানালেও পাকিস্তানি প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম ডন অনলাইনের খবরে ১৩১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। তবে এদের মধ্যে অন্তত ১০০ জন শিশু বলা হলেও সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা যায়নি।
যদিও পাকিস্তান মুসলিম লিগের (কায়েদ) শীর্ষ নেতা নিঘাত ওরাকজাই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে ১২৫ জনই শিশু। তবে, তার এ খবরের সত্যতা পুরোপুরি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
এর আগে, নিষ্ঠুর এ হামলার কড়া নিন্দা জানিয়ে খাইবার পাখতুনখওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ খাত্তাক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, হামলায় নিহতদের মধ্যে শতাধিক শিশু।
সকালে সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, ৫-৬ জন অজ্ঞাত বন্দুকধারী পেশোয়ারের ওয়ারসাক রোডে আর্মি পাবলিক স্কুলে নামে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে হামলা চালায়। স্কুলটিতে অফিসার ও নন-কমিশনড সেনাদের সন্তানরা পড়াশোনা করে। এসব শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগেরই বয়স ১০-১৮ বছরের মধ্যে।
ডন অনলাইনের প্রতিবেদক টিম ঘটনাস্থল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ছয় হামলাকারীই নিহত হওয়ায় সাত ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। আর কোনো হামলাকারী জীবিত নেই এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিশ্চিত হয়ে নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে।
এর আগে, আন্তঃবাহিনী গণসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানানো হয়, নিরাপত্তা বাহিনী ইতোমধ্যে ছয় সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে। আর কোনো হামলাকারী বেঁচে আছে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হবে।
অবশ্য আইএসপিআর’র বিবৃতির আগে সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, হামলা চালিয়ে বেশ ক’জন জঙ্গি পালিয়ে গেছে।
এই হামলার কড়া নিন্দা এবং হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসাইন।
অপরদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দিক নির্দেশনা দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তালেবানের সঙ্গে সবরকমের সমঝোতা সংলাপও স্থগিত করে নওয়াজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় সকল দলের বৈঠকেরও (এপিসি) ডাক দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তাদের সমাগম লক্ষ্য করে হামলে পড়ে বর্বর হামলাকারীরা।
এ হামলার দায় স্বীকার করে তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা (সেনাবাহিনী) যেভাবে আমাদের সন্তান-পরিবারের ওপর হামলা চালিয়েছে, আমরাও তাদের সন্তান-পরিবারের ওপর হামলা চালিয়েছি। এখন প্রিয়জন বিয়োগের ব্যথা তারাও বুঝুক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হত্যাযজ্ঞ নিশ্চিত হওয়ার আগে ঘটনাস্থল থেকে বোমা ও গুলির শব্দ শোনা যায়।
এনডিটিভি জানায়, জঙ্গিরা সেনাবাহিনীর পোশাক পরে স্কুলের ভেতর প্রবেশ করে। ভেতরে ঢুকেই তারা নির্বিচারে গুলি করতে শুরু করে।
সাম্প্রতিককালে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সেনা অভিযানে শত শত তালেবান নিহত হয়। জার্ব-ই-আজ নামের ওই অভিযানে কমপক্ষে ১ হাজার ৬০০ তালেবান নিহত হয়।
সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, অভিযানে একপ্রকার কোণঠাসা হয়ে পড়েই এই নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালালো তালেবান।
তালেবানি হত্যাযজ্ঞে বিধ্বস্ত পাকিস্তানে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার।
এ হামলার প্রেক্ষিতে পেশোয়ারে ডাকা ১৮ ডিসেম্বরের বিক্ষোভ সমাবেশ স্থগিত করেছেন বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ইমরান খান।
একইসঙ্গে এই পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন পিটিআই’র সাবেক জ্যেষ্ঠ নেতা শাহ মাহমুদ কোরেশী।
হামলার কড়া নিন্দা জানিয়ে হতাহতদের পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনসহ বিশ্ব নেতারা।
হামলার ঘটনায় নিজের হৃদয় ভেঙে যাওয়ার কথা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন নোবেলজয়ী কিশোরী মালালা ইউসুফজাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৪/আপডেট ২১২৬ ঘণ্টা
** হৃদয় ভেঙে গেছে মালালার
** পেশোয়ারে হামলার নিন্দা ভারতের
** পাকিস্তানে স্কুলে হামলায় ৮৪ শিশুসহ নিহত শতাধিক
** শিশুর রক্তস্রোতে ভাসছে পাকিস্তান
** পাকিস্তানে সেনা পরিচালিত স্কুলে হামলায় নিহত কমপক্ষে ২৬
** পাকিস্তানে স্কুলে তালেবান হামলায় ৪ শিক্ষার্থী নিহত