ঢাকা: ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভ্যান্ট (আইএসআইএস) এবং বোকো হারাম। উভয় সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রায় অভিন্ন।
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ও নিন্দিত এ দু’টো সংগঠনকে দমিয়ে দিতে পশ্চিমা বিশ্বসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নানা প্রচেষ্টা চালালেও শিগগির কোনো সুখবর দিতে পারছে না। উপরুন্ত বিশ্বসম্প্রদায়ের কপালের ভাঁজ স্পষ্ট করে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে একীভূত হতে চলেছে সংগঠন দু’টি।
সংগঠন দু’টির কার্যক্রম সাম্প্রতিক সময়ে পর্যবেক্ষণের পর বিশেষজ্ঞরা এ ধারণার কথা জানান। তারা বলছেন, গত ছয় মাসে পাথর ছুঁড়ে হত্যা, শিরশ্ছেদকরণসহ সার্বিক তৎপরতায় অভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা বোকো হারাম আইএসের সঙ্গে একীভূত হতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
অবশ্য, গত ডিসেম্বরেই আইএসের প্রতি আনুগত্যের ঘোষণা দেয় বোকো হারাম। এখন আনুষ্ঠানিক ঘোষণার কথাই বিবেচনা করছে তারা।
এ বিষয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি বোকো হারামের নিজস্ব মিডিয়ায় প্রকাশিত এক বার্তায় বলা হয়, ‘আমাদের শুরা কাউন্সিল (সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারক পরিষদ) তোমাদের (আইএস) ব্যাপারে আলোচনা চালাচ্ছে এবং তোমাদের বোঝার চেষ্টা করছে। খলিফা আবু বকর আল-বাগদাদির অধীনে খেলাফত প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত খুব শিগগির জানাবো। আল্লাহ তার হেফাজত করুন’।
বোকো হারামের এই বার্তাটি অনুবাদ করে গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করে জিহাদি ওয়েবসাইট আফ্রিকিয়াহ মিডিয়া।
গত বছরের আগস্টে বোকো হারাম নিজেদের খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে নাইজেরিয়ার বোর্নো অঙ্গরাজ্যের গওজা এলাকা দখল করে নেয়। এরপর বিভিন্ন সময় সংগঠনটির গণমাধ্যম বিভাগ নিজেদের ‘আফ্রিকার ইসলামিক স্টেট’ এবং ‘পশ্চিম আফ্রিকার ইসলামিক স্টেট’ বলে প্রচার করতে থাকে।
আইএসের অনুসরণে অপকর্মের দায়মুক্তির জন্য অপহরণ এবং জিম্মি করার ঘটনা শরিয়তে বৈধ বলেও বিভিন্ন সময় দাবি করে বোকো হারাম।
নিজেদের মিডিয়ায় ইসলামিক স্টেটের মতো করেই বোকো হারামও বিভিন্ন বার্তা, ভিডিও, ছবি ছড়াতে শুরু করে। সেইসঙ্গে গত জুলাই থেকে আইএস’র অনুসরণে পতাকাও ব্যবহার করা শুরু করে সংগঠনটির জঙ্গিরা।
সবশেষ ৯ ফেব্রুয়ারির ওই বার্তায় ইসলামিক স্টেটের অনুশাসন মেনে নিয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানায় বোকো হারাম।
বিশেজ্ঞরা বলছেন, সবচেয়ে প্রভাবশালী দুই বর্বর জঙ্গি গোষ্ঠী একীভূত হয়ে তৎপর হলে বিশ্বসম্প্রদায়কে নতুন করে নড়েচড়ে বসতে হবে।
আইএস ইরাক এবং সিরিয়া ছাড়াও লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল, মিশরের সিনাই এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অঞ্চলে কার্যক্রম বিস্তৃত করেছে। এক পরিসংখ্যান মতে, গত কয়েক বছরে প্রায় ২০ হাজার বিদেশি আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে সিরিয়া এবং ইরাকে জড়ো হয়েছে। এরমধ্যে কেবল যুক্তরাজ্য থেকেই গেছে প্রায় চার হাজার। অবশ্য, যুক্তরাষ্ট্র থেকে গেছে ৫০০-৭০০ লোক। প্রতিষ্ঠার প্রায় ১০ বছর পর ২০১৪ সালের ২৯ জুন খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় আইএস। ২০০৪ সালে আল-জারকাওয়াইর হাতে প্রতিষ্ঠা হলেও বর্তমানে এর সর্বোচ্চ নেতা আবু বকর আল বাগদাদি।
অপরদিকে পশ্চিম আফ্রিকার সংগঠন বোকা হারাম ২০০২ সালে মোহাম্মদ ইউসুফের হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে বর্তমানে এর প্রধান আবুবকর শেকাও। এই সংগঠনটিও খিলাফত প্রতিষ্ঠার নামে নাইজেরিয়া, চাঁদ, ক্যামেরুনসহ পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ০১ ২০১৫