ঢাকা: মস্তিষ্কের ইশারায় প্লেন ওড়ালেন পক্ষাঘাতে পঙ্গু এক নারী! অথচ জটিল কোয়াড্রিপলজিক রোগের কারণে তিনি দুই পা এবং দুই বাহু নাড়াতে সম্পূর্ণভাবে অক্ষম।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স অ্যাডভান্স রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সির (ডারপায়) এক গবেষণা প্রকল্পে অংশ নিয়ে এমন অসাধ্য সাধন করেন ৫৫ বছর বয়সী জান সুয়েরমান।
কম্পিউটার সিমুলেটরে এফ-৩৫ জঙ্গি বিমান এবং একটি সেসনা বিমান ওড়ান তিনি।
মার্কিন প্রতিরক্ষা গবেষণায় অন্যতম পথিকৃত প্রতিষ্ঠান ডারপায় এমন অনেক গবেষণাই পরিচালিত হয় যার বাস্তবায়ন শুধু হলিউডের সায়েন্সফিকশন মুভিগুলোতেই সম্ভব।
এসব গবেষণার অধিকাংশই যদিও গোপন রাখে মার্কিন সরকার তবুও সম্প্রতি এক সেমিনারে সুয়েরমানের এই সাফল্যের কথা তুলে ধরেন ডারপা প্রধান অারতি প্রভাকর।
নিউ আমেরিকা ফাউন্ডেশন আয়োজিত ফিউচার অব ওয়ার ফোরামে আরতি প্রভাকর বলেন, তাদের এক গবেষণায় পক্ষাঘাতে আক্রান্ত সম্পূর্ণ পঙ্গু জান সুয়েরমান শুধু তার চিন্তাশক্তির ব্যবহার করে ফ্লাইট সিমুলেটরে(কম্পিউটার গেম যেখানে পাইলট কৃত্রিম দৃশ্যপটে প্লেন ওড়ানোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন) একটি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ জঙ্গি বিমান এবং একটি সেসনা প্লেন চালিয়েছেন।
গত দুই বছর ধরেই ডারপায় বিশেষ এক নিউরো সিগনালিং গবেষণা প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন সুয়েরম্যান।
গবেষণার প্রথম ধাপে চিন্তাশক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সুয়েরম্যান একটি রোবোটিক বাহু নড়াচাড়ায় সমর্থ হন। মস্তিষ্কের সিগনাল কৃত্রিম বাহুতে সঞ্চালিত করে চকলেট খেতে এমনকি হাই ফাইভ এবং থাম্বস আপ দেখাতেও সফল হন তিনি।
এ সময় গবেষকরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেন যে সুয়েরম্যান তার মস্তিষ্কের বাম পাশের মোটর কর্টেক্স(মস্তিষ্কের যে অংশ শরীরে বিভিন্ন পেশীকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে) দিয়ে একই সঙ্গে ডান এবং বাম পাশের কৃত্রিম বাহুকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।
মূলত বাম দিকের মোটর কর্টেক্সের সাহায্যে শরীরে ডান অংশের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে মানুষ।
এই সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে সুয়েরমান ফ্লাইং সিমুলেটরে একটি এফ-৩৫ ফাইটার প্লেন ওড়ানোর ইচ্ছা পোষণ করেন।
সিমুলেটরে সাধারণত পাইলটরা জয়স্টিকের সাহায্যে কম্পিউটারের পর্দায় থাকা প্লেনকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তবে এর ব্যতিক্রম ঘটিয়ে সুয়েরমান জয়স্টিকের ব্যবহার ছাড়াই শুধু মস্তিষ্ক থেকে সিগনাল পাঠিয়ে প্লেনটিকে নিজের মত নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হন।
অথচ দুই পা এবং দুই হাত নাড়াতে সম্পূর্ণ অক্ষম সুয়েরমান ফাইটার প্লেনতো দূরের কথা জীবনে কখনও কোনো প্লেনই ওড়াননি।
শুধু নিউরো সিগন্যালিংয়ের মাধ্যমে ফ্লাইট সিমুলেটরে এভাবে একটি এফ-৩৫ ওড়ানো এক কথায় বিস্ময়করই বটে।
গত দুই বছর ধরেই সুয়েরমানকে সাফল্যের সঙ্গে গবেষণায় ব্যবহার করছে ডারপা। এখন ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গ মেডিকেল সেন্টার এবং ডারপার রেভ্যুলুশনিজিং প্রসথেটিক কর্মসূচির আরও জটিল গবেষণা কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন তিনি।
শুধু চিন্তা শক্তির ব্যবহারে মানুষ আর কী কী শারীরিক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে সক্ষম তার ওপরই চলছে এসব গবেষণা।
ধারণা করা হচ্ছে এই গবেষণা সম্পূর্ণ অচল পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের নতুন স্বপ্ন দেখাতে সক্ষম হবে।
এ ব্যাপারে আরতি প্রভাকর বলেন, এই গবেষণার ফলাফলে আমাদের এই আশাই দেখায় যে, ভবিষ্যতে আমরা এমন একটি পৃথিবী দেখবো যেখানে আমাদের মস্তিষ্ক শরীরের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৫