ঢাকা: বিরল পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ শেষ হতে হতেই শুক্রবার (২০ মার্চ) রাতে সুপারমুনের সাক্ষী হচ্ছে পৃথিবীবাসী। পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ শেষ হওয়ার পরই সূর্যের রশ্মি সরাসরি বিষুবরেখার ওপর পড়ায় ঠিক সেসময় থেকেই দেখা যায় সুপারমুন।
নিজ কক্ষপথে আবর্তনের সময় পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে অতিক্রান্ত পূর্ণ বা নতুন চাঁদকেই সুপারমুন বলে। অধিকাংশ সময় পৃথিবীর আকাশে বছরে তিন থেকে ছয়টি সুপারমুন দেখা যায়। মার্চে বিষুব অঞ্চলে যে সুপারমুন দেখা দেয়, তা বিশেষ হওয়ার কারণ, এটি দেখা দেওয়ার পরই উত্তর গোলার্ধে বসন্তের সূচনা ঘটে। সেই হিসেবে শুক্রবার রাতের সুপারমুন উত্তর গোলার্ধের মানুষদের কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
সুপারমুনকে প্রথম সংজ্ঞায়িত করেন মার্কিন মহাকাশবিজ্ঞানী রিচার্ড নলে ১৯৭০ সালে। তিনি বলেন, নিজ কক্ষপথে আবর্তনকালে যে সময়টায় চাঁদ পৃথিবীর খুব কাছে থাকে ও পৃথিবী, চাঁদ আর সূর্য একই সারিতে বর্তমান থাকে, সেসময় চাঁদের যে রূপ দেখা যায়, তা-ই সুপারমুন।
পৃথিবীর খুব কাছ থেকে দেখা যায় বলে বছরের অন্য সময়ের তুলনায় সুপারমুনের রাতে চাঁদকে অনেক বড় মনে হয়। মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তথ্য মতে, সুপারমুনের সময় চাঁদকে অন্য সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বেশি বড় দেখায়। এছাড়া, এর উজ্জ্বলতাও বেড়ে যায় ৩০ শতাংশের মতো।
চাঁদের কক্ষপথের ওপর নির্ভর করে একেক সুপারমুনের সময় পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব একেক রকম থাকে। তবে এই দূরত্ব তিন লাখ ৫৭ হাজার কিলোমিটার থেকে চার লাখ ছয় হাজার কিলোমিটারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে সবসময়।
প্রকৃতির ওপর এই সুপারমুনের প্রভাব চোখে পড়ার মতো। বিজ্ঞানীরা বেশ আগেই প্রমাণ করে দেখিয়েছেন, সাগরের জোয়ার-ভাটার ওপর চাঁদ ও সূর্যের প্রভাব রয়েছে। আর সুপারমুনের রাতে যেহেতু পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে যায় চাঁদ, কাজেই এদিন সাগরের জল অন্য দিনের তুলনায় একটু বেশিই ফুলে ওঠে।
বিজ্ঞানীরা জানান, অন্য সময়ের তুলনায় এদিন পৃথিবীর জলরাশির ওপর ১৯ শতাংশ বেশি শক্তিতে প্রভাব ফেলে চাঁদ।
সুপারমুনের প্রভাবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়েরও ঝুঁকি থাকে। ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে ভূমিকম্প ও সুনামি, ২০১১ সালে জাপানে তোহোকুতে ভূমিকম্প ও সুনামির জন্য এর এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে পৃথিবীর আকাশে দেখা দেওয়া সুপারমুনকেই দায়ী করা হয়। এছাড়া, ২০১১ সালের ১৯ মার্চ যুক্তরাজ্যের সলেন্ট প্রণালীর পাঁচটি জাহাজ মাটিতে পাওয়ার জন্যও ওই রাতের সুপারমুনকে দায়ী করা হয়।
এর আগে, আন্তর্জাতিক সময় শুক্রবার সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৪৫ মিনিট) পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ শুরু হয়। এটি পূর্ণতা পেতে থাকে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ৪৩ মিনিট থেকে। পূর্ণতার পর কাটতে শুরু করে এবং বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ১২ মিনিটে (আন্তর্জাতিক সময় ১১টা ১২ মিনিটে) ইউরোপের উত্তরাঞ্চলের দেশ নরওয়েতে পুরো সূর্যের আলো ফিরে আসে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৫
** বিরল সূর্যগ্রহণের সাক্ষী হলো কোটি মানুষ
** চলছে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ