ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ভাঙছে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সংসার!

রাজিউল হাসান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৫
ভাঙছে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সংসার! ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা: সাম্প্রতিক বেশ কিছু ইস্যুকে কেন্দ্র করে ক্রমেই শীতল হয়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক। এরমধ্যে ইরান ও ফিলিস্তিনি ইস্যু বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের অবস্থান এবং এসব ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে বিশ্লেষকরা বলতে শুরু করেছেন, এবার বোধ হয় ভাঙতেই চলেছে ওয়াশিংটন-তেলআবিবের সংসার!

বিশেষত পরমাণু কর্মসূচির বিষয়ে তেহরানের সুর নরম এবং তার জবাবে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার ইঙ্গিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহুর ক্ষোভ প্রকাশ এবং ‘দ্বি-রাষ্ট্র’ নীতিতে তার বারবার অবস্থান বদল এ ভাঙনের সুর তুলেছে।

ভাঙনের সুরটা কেমন? বলা হচ্ছে, দীর্ঘদিন থেকে ফিলিস্তিনি ইস্যুতে ইসরায়েলি নীতিতে ঘোরসমর্থন জানিয়ে এলেও সম্প্রতি দ্বিমত পোষণ করতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

দ্বিমত পোষণের প্রধান কারণ হিসেবে উঠে আসছে নেতানিয়াহুর বারবার অবস্থান বদল। ইহুদী রাষ্ট্রটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এতোদিন ধরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন সংকট নিরসনে ‘দ্বি-রাষ্ট্র নীতি’র বিরোধিতা করে এলেও গত ১৭ মার্চের আকস্মিক নির্বাচনে জয় লাভের পরপরই অবস্থান বদলে ফেলেছেন; বলছেন, তিনি এখন ‘দ্বি-রাষ্ট্র নীতি’তে এই অঞ্চলের সমস্যা নিরসনে রাজি।

আকস্মিক নির্বাচনের আগেও নেতানিয়াহুবিরোধী উদার-মধ্যপন্থি জোট ‘দ্য জায়ওনিস্ট ইউনিয়ন’ ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার কথা বলছিল, তখন পর্যন্ত গোঁ ধরে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি কিছুতেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র মানবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন সেসময়। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হতেই পুরোপুরি সুর পাল্টে যায় তার।

ওয়াশিংটনকে অবাক করে কট্টর অবস্থান থেকে সরে আসার সাফাই গেয়ে নেতানিয়াহু দাবি করছেন, তিনি বারবার নিজ অবস্থান পরিবর্তন করছেন না। তিনি আগের অবস্থানেই আছেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি যে ‘দ্বি-রাষ্ট্র নীতি’ মানবেন না বলে ঘোষণা দিয়ে আসছেন, তা তখনকার পরিস্থিতির কারণেই। তিনি এই অঞ্চলে শান্তি চান। ফিলিস্তিনি ইস্যুকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে এখন সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিচ্ছে। আর এই সন্ত্রাস থেকে বাঁচতেই এখন ‘দ্বি-রাষ্ট্র নীতি’ই একমাত্র সমাধান বলেই তিনি এই পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মধ্য-ডানপন্থি এ নেতার এমন অবস্থান বদলে বিস্মিত হন উদার-মধ্যপন্থি রাজনীতিকরাও।

বিস্ময়ের প্রতিক্রিয়া দেখাতে ভোলেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। নির্বাচনের দু’দিন পর ফোন করে তিনি নেতানিয়াহুকে অভিনন্দন জানান। নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষিত হয় গত ১৮ মার্চ, অথচ নেতানিয়াহুকে অভিনন্দন জানাতে ওবামা সময় নিলেন প্রায় দু’দিন।

কেবলই তাই নয়, নেতানিয়াহুর অবস্থান বদলের প্রতিক্রিয়ায় ওবামা বলেন, তিনি (নেতানিয়াহু) যখন বলেছিলেন এমন সমাধান (দ্বি-রাষ্ট্র নীতি) সম্ভব নয়, তার সে কথাই আমরা গ্রহণ করে সমাধানের পথ খুঁজতে শুরু করেছি। সে পথে অনেক এগিয়েও গেছি। এখন তিনি কী বলছেন, তা আমাদের কাছে ধর্তব্য নয়।

শনিবার (২১ মার্চ) একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই প্রতিক্রিয়ায় ওবামাকে বেশ রূঢ়ভাবে কথা বলতে দেখা যায়।

প্রায় দু’দিন পর অভিনন্দন বার্তা এবং ওবামা-নেতানিয়াহুর এমন পাল্টাপাল্টি বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক ভাঙনের প্রথম স্তর বলেই মনে হচ্ছে বিশ্লেষকদের কাছে।

এতোসব গুঞ্জনের মধ্যেই ১৮ মার্চ সিএনএন’র এক খবরে দাবি করা হয়, খুব সম্ভবত জাতিসংঘে ইসরায়েলের যে কোনো পদক্ষেপে সমর্থন দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার চিন্তা করছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণেই এমনটা চিন্তা করছে ওয়াশিংটন।

খবরে বলা হয়, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে নেতানিয়াহু যদি তার অবস্থান থেকে সরে এসে ওয়াশিংটনের সমাধানে সুর মেলা, তাহলে হয়তো সুর নরম হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে দু’পক্ষই দূরে থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন।

সম্পর্কের এই শীতলতার শুরু ইরান ইস্যুকে নিয়েই বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। তাদের মতে, তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস ও দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে নতুন এক চুক্তির আলোচনা চলছে ওবামা ও ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানির মধ্যে। চলতি মাসেই এই চুক্তি বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। এই চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরুর পরপরই এর বিপক্ষে সরাসরি কথা বলতে শুরু করেছেন নেতানিয়াহু।

যদিও, ইরান ইস্যুতে নেতানিয়াহুর এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়ে তাকে তার বক্তব্য উপস্থাপনে মার্কিন কংগ্রেসে আমন্ত্রণ জানায় ওবামাবিরোধী রিপাবলিকান পার্টি। হোয়াইট হাউসের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে নেতানিয়াহুকে এমন আমন্ত্রণ মোটেই ভালো চোখে দেখেননি প্রেসিডেন্ট। তথাপি এই অসন্তোষের মধ্যেই গত ৩ মার্চ কংগ্রেসে নিজ বক্তব্য উপস্থাপনের পাশাপাশি ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও শক্ত করার পরামর্শ দেন নেতানিয়াহু।

কংগ্রেসে দেওয়া ওই বক্তব্যে ইরানের সঙ্গে সম্পন্ন হতে চলা চুক্তির কড়া বিরোধিতা করে নেতানিয়াহু বলেন, ইরানের সন্ত্রাসী-দালালরা গাজা ও লেবাননে সহিংসতা ছড়াচ্ছে। ইরানের সমর্থনেই সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সেখানকার অধিবাসীদের হত্যা করছে। শিয়াপন্থি মিলিশিয়ারা ইরাকে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে ওই দেশটির সমর্থনেই। শুধু তাই নয়, লোহিত সাগরীয় অঞ্চলের অস্থিরতা এই ইরানের কারণেই।

‍এই চুক্তি করে তেহরানের পরমাণু বোমা তৈরির পথ সামান্যতমও বন্ধ করা যাবে না দাবি করে নেতানিয়াহু বলেন, ইরান ও আইএস জঙ্গিবাদি রাজত্ব প্রতিষ্ঠায় সমানতালে লড়ছে।

পরমাণু কর্মসূচির বিষয়ে ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা বিশ্বাস করতে শুরু করলেও নেতানিয়াহুর এ ধরনের অবিশ্বাস থেকে দেওয়া বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হন ওবামা।

তিনি বলেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে নতুন কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অবশ্য, ওবামার এই প্রতিক্রিয়ার পরপরই ইরানের ব্যাপারে সতর্ক করে ৪৭ রিপাবলিকান সিনেটরের খোলাচিঠি আরও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে ওবামা প্রশাসনকে। ওই চিঠির পেছনে নেতানিয়াহুরই প্ররোচনা কাজ করেছে বলে মনে করে হোয়াইট হাউস।

ওয়াশিংটন-তেলআবিবের বর্তমান সম্পর্কের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হয়তো খুব তাড়াতাড়ি যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল মধুর সম্পর্ক যুগের অবসান দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী!

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।