ঢাকা: যাত্রীবাহী প্লেনটি আকাশে। আবহাওয়া ভালো, ইঞ্জিনে কোনো গোলযোগ নেই, জ্বালানিও ভরা আছে পুরোপুরি।
সম্ভব, কারণ প্লেনটিকে গন্তব্যে নিরাপদে পৌঁছানোর দায়িত্ব থাকে যার কাঁধে সেই পাইলট যদি নিজেই হন আত্মঘাতী, তবে এ রকম হওয়া খুবই সম্ভব।
পাইলটের এ রকম আত্মঘাতী কাণ্ডে গত তিন দশকে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে চারশ’ আরোহী। তার ওপর ফ্রান্সের আল্পসে জার্মানউইংসের এয়ারবাসটিও যদি কো-পাইলটের অন্তর্ঘাতী কর্মকাণ্ডের কারণে বিধ্বস্ত হয়ে থাকে তবে এই তালিকায় যোগ হবে আরো দেড়শ’ মানুষ। এখন পর্যন্ত বিধ্বস্ত প্লেনের ব্ল্যাকবক্স ও অন্যান্য স্থান থেকে পাওয়া সূত্রানুযায়ী প্লেনটিকে পাইলট স্বেচ্ছায় বিধ্বস্ত করেছেন বলে শক্ত নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে।
সম্প্রতি মার্কিন বিমান পরিবহন সংস্থার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১৯৮২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আত্মঘাতী পাইলটের কারণে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছে চারশ’ ২১ জন মানুষ।
গত ২৪ মার্চ ফ্রান্সের আল্পস এলাকায় দেড়শ’ আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত হয় লুফথানসা বিমান সংস্থার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান জার্মানউইংয়ের এ-৩২০ প্লেন। মারা যান সব আরোহী।
তদন্তকারীরা মনে করছেন, কো-পাইলট আন্দ্রেয়াস লুবিৎজই প্লেনটিকে বিধ্বস্ত করেছেন অটো-পাইলট কোর্স সেট করে। ফ্লাইট-৯৫২৫ এর প্রথম ব্ল্যাকবক্সে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই এমন ধারণা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জার্মানউইং জানিয়েছে, বিধ্বস্ত হওয়ার আগে ছয় হাজার ফুট উচ্চতায় থাকা অবস্থায় রাডারের সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় প্লেনটির। এরপর এটি ৩৮ হাজার ফুট উপরে ওঠে। তারপরই মাত্র আট মিনিটে খসে পড়ে আল্পসে বিধ্বস্ত হয় এটি।
ব্ল্যাকবক্সে প্রাপ্ত রেকর্ডের উদ্ধৃতি দিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক সেনা কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওই সংবাদপত্রকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্লেনটি বার্সেলোনা থেকে ওড়ার সময় দুই পাইলটের মধ্যে স্বাভাবিক কথাবার্তা চলছিল। এরপরই অডিও শুনে বোঝা গেল, একজন পাইলট ককপিটের বাইরে। তিনি ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছেন, কিন্তু পারছেন না।
তিনি বলেন, ব্ল্যাকবক্সের রেকর্ডে প্রথমে আমরা ককপিটের দরজায় মৃদু করাঘাতের আওয়াজ পাই। কিন্তু কোনো উত্তর নেই। এরপর বাইরের পাইলট জোরে জোরে করাঘাত করতে শুরু করেন। তখনো কোনো সাড়া দেননি ভেতরের পাইলট।
জানা গেছে, দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট এয়ারবাস এ-৩২০’য়ে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল না। এমনকি পতনের আট মিনিটেও এর কোনো ইঞ্জিন বিকল হয়নি। প্লেনটি সরাসরি আল্পসে আঘাত হেনে বিধ্বস্ত হয় বলে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারীরা।
প্রথম ব্ল্যাকবক্সে প্রাপ্ত তথ্যের অর্থ দাঁড়ায়, শেষ মুহূর্তে একজন পাইলটই ককপিটের ভেতরে ছিলেন।
গত বুধবার (২৫ মার্চ) ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা বিধ্বস্ত প্লেনটির ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করেছে। তবে এর বাইরের আবরণ ভেঙ্গে গেছে। এই ব্ল্যাকবক্সে শুধুমাত্র একজন পাইলটের ককপিটের বাইরে আটকা পড়ার বিষয়টি জানা গেছে। বাকি রহস্য উন্মোচনে দ্বিতীয় ব্ল্যাকবক্সের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে অনুসন্ধান ও তদন্তকাজে নিয়োজিত বিশেষজ্ঞদের। তবে দ্বিতীয় ব্ল্যাকবক্সটি এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে লুফথানসার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কার্সটেন স্পোর।
এয়ারবাস এ-৩২০ এর দুর্ঘটনা সত্যিই যদি এর কো-পাইলটের আত্মঘাতী কর্মকাণ্ডের কারণে হয়ে থাকে, তাহলে ১৯৮২ সালের পর ৩৩ বছরে আত্মঘাতী প্লেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে পাঁচশ’ একাত্তরে।
মার্কিন বিমান পরিবহন সংস্থার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে জানা যায়, ১৯৮২ সালে জাপান এয়ারলাইন্সের একটি এয়ারক্রাফট টোকিও উপকূলে বিধ্বস্ত হয়। এতে থাকা ১৭৪ আরোহীর মধ্যে ২৪জন নিহত হয় সে দুর্ঘটনায়। পরে জানা যায়, প্লেনটির ক্যাপ্টেন শেইজি কাতাগিরি এটিকে বিধ্বস্ত করেন। এছাড়া ১৯৯৪ সালে মরক্কোর একটি প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে ৪৪ জন, ১৯৯৭ সালে সিল্ক এয়ারফ্লাইট দুর্ঘটনায় একশ’ চারজন, ১৯৯৯ সালে মিশরীয় বিমান পরিবহণের একটি প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে ২১৬ জন ও মোজাম্বিক এয়ারলাইন্সের একটি প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে ৩৩ জন নিহত হয়। এর সবুগলোই পাইলটের আত্মঘাতী কর্মকাণ্ডের কারণে ঘটেছে বলে পরবর্তী অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
** বিমানটি ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন কো-পাইলটই
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৫