ঢাকা: চলমান সংকটে ইয়েমেন ধ্বংসের কিনারে দাঁড়িয়ে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘ। দেশটিতে হুথি বিদ্রোহী দমনে সৌদি আরবের নেতৃত্বে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর পরিচালিত যৌথ অভিযানের মধ্যেই এ মন্তব্য করলো বিশ্বসংস্থাটি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দূত জেইদ রা’আদ আল হুসেইন মঙ্গলবার বলেন, ইয়েমেনে পরিস্থিত অত্যন্ত ভয়াবহ। গত চারদিনে বহু নিরপরাধ ইয়েমেনী নিহত হয়েছে সেখানে।
এদিকে, আকাশ ও সমুদ্রপথে প্রতিবন্ধকতার কারণে দেশটিতে মানবিক সহায়তা পাঠানো যাচ্ছে না বলে অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা (ইউনিসেফ) জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে অন্তত ৬২ শিশু নিহত হয়েছে। এছাড়া আরো অন্তত ৩০ শিশু আহত হয়েছে।
ইউনিসেফের প্রতিনিধি জুলিয়েন হার্নিস বলেন, ইয়েমেনে শিশুরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
ডক্টর্স উইথআউট বর্ডার্স (এমএসএফ) জানিয়েছে, গত ১৯ মার্চের পর এখন পর্যন্ত তাদের কাছে অন্তত সাড়ে পাঁচশ’ হতাহত রোগী এসেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করে বলেছে, সৌদিআরবের নেতৃত্বে যৌথ সামরিক অভিযানে বেসামরিক লোকজনই বেশি হতাহত হচ্ছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবও এর আগে ইয়েমেনের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সংকট নিরসনে সকল মহলকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
তবে সৌদি নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ আসিরি বলেছেন, বেসামরিক লোকজনকে হত্যার উদ্দেশ্যে তারা হামলা চালাচ্ছেন না। হুথি বিদ্রোহীরা বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে পড়েছে। তাদের লক্ষ্য করে পরিচালিত অভিযানে সাধারণ মানুষ হতাহত হচ্ছে।
এদিকে, লোহিত সাগরের পাড়ে ইয়েমেনের হোদায়দা বন্দরে বিমান হামলায় একটি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কারখানা বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় কারখানাটির অন্তত ২৩ কর্মী নিহত হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স।
সাবেক প্রেসিডেন্ট আলি আব্দুল্লাহ সালেহের অনুগত এক সেনা ক্যাম্পের কাছে এই হামলা হয় বলে স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে জানায় সংবাদসংস্থাটি।
গত ২৫ মার্চ হুথি বিদ্রোহীদের দমনে ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্বে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো সামরিক অভিযান শুরু করে। জাতিসংঘ ও গালফ কাউন্সিলভুক্ত উপসাগরীয় ছয় দেশ- সৌদি আরব, বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে হুথিদের দমনে ইয়েমেন সরকারের ‘হস্তক্ষেপ‘ কামনার প্রেক্ষিতে এ হামলা শুরু করা হয় বলে সে সময় সৌদি আরব জানায়।
এর আগে ইরানি পৃষ্ঠপোষকতাপুষ্ট শিয়া হুথি বিদ্রোহীরা সম্প্রতি ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ বেশ কিছু অঞ্চল দখল করে দেশটির প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদিকে সানা থেকে পালিয়ে বন্দর নগরী এডেনে চলে যেতে বাধ্য করে।
আনসার আল্লাহ বা হুথি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনে জায়দি সম্প্রদায়ভুক্ত শিয়া সংগঠন। জায়দি শিয়ারা হযরত হোসেনের (রা.) দৌহিত্র জায়দ ইবনে আলির অনুসারী। সংগঠনটির নামকরণ করা হয় হুসেইন বদরেদ্দিন আল-হুথির নাম থেকে। ২০০৪ সালে ইয়েমেনে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে নিহত হন তিনি। তাকেই নিজেদের আধ্যাত্মিক নেতা মনে করে হুথিরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৫