ঢাকা: দেড়শ’ আরোহী নিয়ে ফ্রান্সের আল্পসে পর্বতমালায় বিধ্বস্ত জার্মান উইংসের এয়ারবাস এ-৩২০ এর কো-পাইলট আন্দ্রেয়াস লুবিৎজ ঘটনার আগে লম্বা সময় অনলাইনে ‘আত্মহত্যা’র বিভিন্ন তত্ত্ব পড়ালেখা করে কাটিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটররা।
গত সপ্তাহে প্লেনটির বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় মামলা পরিচালনাকারী প্রসিকিউটররা সংবাদমাধ্যমকে বৃহস্পতিবার (০২ এপ্রিল) এ তথ্য জানান।
লুবিৎজের অ্যাপার্টমেন্টে পাওয়া একটি ট্যাবলেট কম্পিউটারে এসব তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে বলে জানান তারা।
প্লেনটির প্রথম ব্ল্যাক বক্স উদ্ধারের পরই এটি বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে লুবিৎজের আত্মহত্যা প্রবণতার বিষয়টি সামনে চলে আসে। ব্ল্যাক বক্সের রেকর্ডে ককপিটের বাইরে আটকে পড়া পাইলটের দরজা ভাঙ্গার চেষ্টার শব্দ শুনে প্রথম ধারণা করা হয়, কো-পাইলটই প্লেনটির দুর্ঘটনার কারণ।
এরপরই লুবিৎজের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বিভিন্ন তথ্য উদ্ধার করে তদন্তকারীরা। প্রাপ্ত তথ্যে তিনি অনেকদিন ধরেই হতাশা ও আত্মহত্যা প্রবণতায় ভুগছিলেন বলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে আলোচনায় চলে আসে তার দৃষ্টিজনিত সমস্যার বিষয়টিও।
অন্যদিকে, জার্মানভিত্তিক পত্রিকা ‘দ্য বিল্ড’কে এক সাক্ষাৎকারে লুবিৎজের বান্ধবী মারিয়া ডব্লিউ জানান, একটা কিছু করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন তার প্রেমিক।
ডুসেলডর্ফের প্রসিকিউটররা জানান, গত ১৬ মার্চ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত লুবিৎজের ট্যাবলেট কম্পিউটারের ব্রাউজার মেমোরির তথ্য তাদের হাতে এসেছে।
জানা গেছে, অনলাইন সার্চে একদিকে লুবিৎজ চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছেন, অন্যদিকে নিজেকে আত্মহত্যাপ্রবণ উল্লেখ করে বিভিন্ন পন্থা সম্পর্কে খোঁজখবর করেছেন।
তবে কি ধরণের চিকিৎসার বিষয়ে লুবিৎজ অনলাইনে সার্চ করেছিলেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি প্রসিকিউটররা।
ফ্রান্সে প্লেন বিধ্বস্তের মামলায় তদন্তকারী প্রসিকিউটর ব্রাইস রবিন জানিয়েছেন, প্লেনটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত লুবিৎজ জীবিত ও সচেতন ছিলেন।
এদিকে, তদন্ত ও উদ্ধারকাজে নিয়োজিতরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাস্থল থেকে তারা দেড়শ প্রকারেরই ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তবে পরীক্ষা করে ফলাফল পেতে সময় লাগবে।
গত ২৪ মার্চ ফ্রান্সের আল্পস এলাকায় দেড়শ’ আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত হয় লুফথানসা বিমান সংস্থার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান জার্মানউইংয়ের এ-৩২০ প্লেন। নিহত হন এর সব আরোহী।
জানা যায়, বিধ্বস্ত হওয়ার আগে ছয় হাজার ফুট উচ্চতায় থাকা অবস্থায় রাডারের সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় প্লেনটির। এরপর এটি ৩৮ হাজার ফুট উপরে ওঠে। তারপরই মাত্র আট মিনিটে খসে পড়ে আল্পসে বিধ্বস্ত হয়। দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট এয়ারবাসটিতে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল না বলেও জানা গেছে।
এমনকি পতনের আট মিনিটে এর কোনো ইঞ্জিন বিকলও হয়নি। প্লেনটি সরাসরি আল্পসে আঘাত হেনে বিধ্বস্ত হয় বলে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৫