ঢাকা: অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় পর বৈঠক করলেন যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার প্রেসিডেন্ট। স্বায়ুযুদ্ধকালের পর দু’দেশের সম্পর্কে এতোদিন ধরে যে পাথর চেপে বসেছিল, তা এখন এ বৈঠকের সুবাদে বরফ হয়ে গলতে শুরু করেছে।
কেবল বিশ্ব সংবাদমাধ্যমই নয়, মধ্য আমেরিকার পানামায় শনিবার (১১ এপ্রিল) উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর দুই দিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলনের (এসওএ-সামিট অব দ্য আমেরিকাস) ফাঁকে কাস্ত্রোর সঙ্গে এ বৈঠককে ‘ঐতিহাসিক’ বলছেন ওবামাও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই ‘বরফ গলার ধারাকে’ যুক্তরাষ্ট্র-কিউবার সম্পর্কের জন্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ দিক’ (টার্নিং পয়েন্ট) বলেও অভিহিত করছেন।
সংবাদমাধ্যম বলছে, গত ডিসেম্বরে ওয়াশিংটন-হাভানা সম্পর্কে উষ্ণতা ছড়ানোর যে আভাস মিলেছিল, পানামায় ওবামা-কাস্ত্রোর বৈঠকের মধ্য দিয়ে সে আভাস সুস্পষ্ট হয়ে গেল। এতো বেশি সুস্পষ্ট হলো যে, কিউবান প্রেসিডেন্ট তার দেশের ওপর ১৯৫৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বানও জানিয়ে ফেলেছেন।
বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে কাস্ত্রোর আহ্বানের সুতো ধরে কথা বলেন ওবামা। তিনি বলেন, এখনই সময় নতুন কিছুর চেষ্টা করার। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কিউবান সরকার ও জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কে জড়ানোটা গুরুত্বপূর্ণ।
এখনও অনেক বিষয়েই দু’পক্ষের মতপার্থক্য আছে স্বীকার করলেও ওবামা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, পুরোনো অধ্যায়ের পৃষ্ঠা উল্টানো সম্ভব। তিনি এ সময় দু’দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি ওয়াশিংটন ও হাভানায় দু’দেশের দূতাবাস খোলার বিষয়েও কথা বলেন।
সংবাদমাধ্যমের সামনে কাস্ত্রোও মার্কিন প্রেসিডেন্টের সুরে সুর মেলান। তিনি বলেন, আমি অনেক সূক্ষ্ম বিষয়ে (সেনসিটিভ ইস্যু) আলোচনায় প্রস্তুত, কিন্তু এক্ষেত্রে ধৈর্য্যশীলতা দেখাতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেভাবে ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন আমরাও সেভাবে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চাই।
মার্কিন ও কিউবান দুই নেতার এই সমঝোতার স্পষ্ট আভাসে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন লাতিন আমেরিকান ও ক্যারিবিয়ান রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা।
এর আগে, শুক্রবার (১০ এপ্রিল) সম্মেলনে যোগ দিতে আসা ওবামা ও ক্যাস্ত্রোর মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়। দু’জনই হাসিমুখে করমর্দন করেন। ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল ওবামা-কাস্ত্রোর।
দুই প্রেসিডেন্টের দেখা হওয়ার আগে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরও সাক্ষাৎ হয়। বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ওই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৫৮ সালে ফিদেল ক্যাস্ত্রোর বিপ্লবী গেরিলা বাহিনী ক্ষমতা নেওয়ার এক বছর আগে দু’দেশের মধ্যকার সর্বশেষ কূটনৈতিক আলাপের পর বৃহস্পতিবার ওই বৈঠক হয়।
এদিকে, পানামা থেকে একেরপর এক যখন এই শুভ সংবাদ আসছে, ঠিক তার আগে থেকে আরও কিছু ভালো খবর দিয়ে যাচ্ছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যমগুলো। তারা বলছে, কিউবাকে ‘সন্ত্রাসী তালিকা’ থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুপারিশ করেছে। এ সুপারিশ দুই দেশের মধ্যে চলমান শীতল সম্পর্কে খানিকটা উষ্ণতা ছড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর কিউবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে দু’দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৮ সালের পর আর কখনও মুখোমুখি হননি দুই দেশের নেতারা। ১৯৫৯ সালে কিউবার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৬১ সালে দেশটিতে দূতাবাসও বন্ধ করে দেয় ওয়াশিংটন। এরপর ১৯৮২ সালে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কিউবাকে কালো তালিকাভুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির কালো তালিকাভুক্ত দেশগুলোর তালিকায় কিউবাই প্রথম কোনো রাষ্ট্র হিসেবে জায়গা পায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘কালো তালিকা’ভুক্ত হওয়ার কারণে কিউবাকে এতোদিন অর্থনৈতিক ও অস্ত্র রফতানির ওপর বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকতে হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থঋণের বিষয়ে বিভিন্ন বাধার মুখে পড়তে হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৫
এইচএ