ঢাকা: আট দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রানঘাতী ভূমিকম্পে হিমালয়কন্যা নেপালে নিহতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বুধবার (২৯ এপ্রিল) এ খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। এছাড়া, এ ঘটনায় অন্তত দশ হাজার মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
শনিবার (২৫ এপ্রিল) নেপাল, বাংলাদেশ ও ভারতে একযোগে আঘাত হানে শক্তিশালী এই ভূমিকম্প। উৎপত্তিস্থলে রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৯।
মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস’র তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল কাঠমাণ্ডুর অদূরে পোখরার কাছে লামজুং। এর ২৬ মিনিট পর দ্বিতীয় এবং ৮ মিনিট পর তৃতীয় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এরপর পরবর্তী গত তিন চার দিনে বিভিন্ন মাত্রার ৬০টির বেশি কম্পন অনুভূত হয় বলে স্থানীয়দের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায় সংবাদমাধ্যম।
এর আগে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ এ ভূমিকম্পের প্রভাবে আগামী ‘কয়েক সপ্তাহ’ ধরে নেপালে আরও বেশ কয়েকটি ভূকম্পনের আশঙ্কা প্রকাশ করে ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভে।
রোববার (২৬ এপ্রিল) যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ব্রায়ান ব্যাপ্টি বলেন, মূল আঘাতের পর ভূমিকম্পের প্রভাবে আরও কয়েকটি মৃদু কম্পন হওয়ার সম্ভাবনা সবসময়ই থাকে। শনিবারের (২৫ এপ্রিল) আঘাতের পর আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে এর প্রভাবে আরও বেশ কয়েকটি ভূকম্পন আঘাত হানতে পারে নেপালে।
এসময় তিনি ভূকম্পন পরবর্তী আঘাতগুলোর মাত্রা রিখটার স্কেলে সাড়ে ছয় ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নেপালে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার প্রধান রামেশ্বর দাঙ্গাল সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহতের সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন নেপাল প্রধানমন্ত্রী সুশিল কৈরালা।
ভূমিকম্পে প্রায় দশ ফুট (প্রায় ৩ মিটার) দক্ষিণে সরে গেছে কাঠমান্ডু উপত্যকার তলদেশ। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) বিশেষজ্ঞরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকটনিকস বিভাগের বিশেষজ্ঞ জেমস জ্যাকসন বলেন, রাজধানী কাঠমান্ডু দশ ফুট (৩ মিটার) দক্ষিণে সরে গেছে। তবে এভারেস্টের উচ্চতায় এ ভূমিকম্প কোনো প্রভাব ফেলেনি। আগের মতোই রয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা।
জেমস জ্যাকসনের বিশ্লেষণের সঙ্গে এক মত পোষণ করেছেন এডেলেইডে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌতবিজ্ঞানের প্রধান স্যান্ডি স্টিকি।
তিনি বলেন, ভূমিকম্পের প্রভাবে ইউরেশিয়ার দিকে ধাবমান ভারতীয় উপমহাদেশের ভূ-প্লেটের সীমানা আলাদা হয়ে গেছে। এই ধাক্কা প্রায় ১০ ডিগ্রির মতো উত্তর-উত্তরপূর্বে পড়েছে। ফলে কাঠমান্ডুর অবস্থান তিন মিটার পর্যন্ত দক্ষিণে সরে গেছে।
এদিকে, মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) রাতেও চতুর্থ দিনের মতো খোলা আকাশের নিচে কেটেছে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নেপালের বাসিন্দাদের। রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে হাজার হাজার মানুষ তাঁবু টাঙিয়ে রাত পার করেছেন। এদের অধিকাংশের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। বাকিরা ঘরে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন বলে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে, কাঠমাণ্ডু মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা তাঁবুতে অপারেটিং থিয়েটার তৈরি করে আহত মানুষকে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
এদিকে, মানবিক সহায়তা দিতে নেপালের ডাকে এগিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। যুক্তরাষ্ট্র একটি বিশেষ দল পাঠিয়েছে। প্রাথমিক সহায়তা হিসেবে তারা ১০ লাখ ডলার সাহায্য দিয়েছে। ভারত হেলিকপ্টার, মোবাইল হাসপাতাল, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ৪০টি শক্তিশালী উদ্ধারকর্মী দল ও ডগ স্কোয়াড পাঠিয়েছে।
চীন ডগ স্কোয়াডসহ ৬২টি উদ্ধারকর্মী দল পাঠিয়েছে। পাকিস্তান চারটি এয়ারক্রাফট, ৩০টি হাসপাতাল শয্যা, সেনাবাহিনীর চিকিৎসক দল, খাবার, তাঁবু ও কম্বল পাঠাচ্ছে। যুক্তরাজ্য আটটি সাহায্যকারী দল ও ৫০ লাখ পাউন্ড সাহায্য পাঠিয়েছে। এছাড়া জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, ইসরায়েল ও স্পেনের কাছ থেকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।
এদিকে, ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সহযোগিতা সংস্থা (আসিয়ান)। দশ দেশের এই সংস্থা প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত দেশগুলোর উদ্দেশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে।
এর আগে, ১৯৩৪ সালে ভয়াবহ এক ভূমিকম্প আঘাত হানে নেপালে। রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে নিহত হয় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এছাড়া, ১৯৮৮ সালে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পেও মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় হিমালয়কন্যা। সেবার সাতশ’ ২২ জন নিহত হয় দেশটিতে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৫
আরএইচ