ঢাকা: আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এরপরই শুরু হবে যুক্তরাজ্যের ৫৬তম জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ।
বৃহস্পতিবার (০৭ মে) ব্রিটিশ গ্রীষ্মকালীন সময় সকাল ৭টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায়) শুরু হবে ভোটগ্রহণ।
গ্রেট ব্রিটেনের ৫০ হাজার ভোটকেন্দ্রে পাঁচ কোটি নিবন্ধিত ভোটার এদিন হাউজ অব কমন্সের ৬শ’ ৫০টি আসনে ৩ হাজার ৯শ’ ৭১ জন প্রার্থীর মধ্যে থেকে পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবেন।
এর মধ্যে পাঁচশ’ ৩৩টি আসনেরই প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন ইংল্যান্ডের জনগণ। বাকি আসনগুলোর ৫৯টিতে স্কটল্যান্ড, ৪০টিতে ওয়ালস ও ১৮টিতে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন।
এছাড়া একই দিন ৯ হাজারের বেশি কাউন্সিল আসনের প্রতিনিধিসহ বেলফোর্ড, কোপল্যান্ড, লাইসেস্টার, ম্যানসফিল্ড, মিডিলসব্রো ও টরবে’র মেয়র নির্বাচনেও ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন গ্রেট ব্রিটেনের ভোটাররা।
গ্রেট ব্রিটেনের প্রথম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৭০৮ সালে। ‘এক্টস অব ইউনিয়ন’ আইনের অধীনে ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আইনের বলেই ইংল্যান্ডের সংসদ ও স্কটল্যান্ডের সংসদ একীভূত হয়ে গ্রেট ব্রিটেন সংসদে পরিণত হয়।
তবে ওই সময় ইংল্যান্ডের নিজস্ব কোনো সরকার ব্যবস্থা ছিল না। রাজপরিবারের অধীনেই শাসিত হত ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। যুক্তরাজ্যে গণতন্ত্রের চর্চা পূর্ণতা পেতে শুরু করে ১৮০০ সালের পর থেকে। এরপর দিনে দিনে তা ক্রমেই
শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন যুক্তরাজ্যের ৭৫ তম প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবারের নির্বাচনের পর ইংল্যান্ড, ওয়ালস, স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের জনগণ তাদের ৭৬তম প্রধানমন্ত্রীকে পাবেন।
নির্বাচনের দিন স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। শেষ সময়ের মধ্যে যেসকল ভোটার ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হবেন, তাদের সবাই ভোট দিতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে ব্রিটিশ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে।
ভোটগ্রহণ শেষ হতেই শুরু হয়ে যাবে গণনা। গণনা শেষে ঘোষণা করা হবে নির্বাচনের ফলাফল।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশেও চলছে বিভিন্ন আলোচনা। তিন নারী প্রার্থী- টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক, রূপা হক ও রুশনারা আলী। এই তিনজনসহ যুক্তরাজ্যের এবারের নির্বাচনে ১২ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
২৩ বছর ধরে লেবার পার্টির দখলে রয়েছে হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন। কিন্তু এবার জটিল এক সমীকরণে রয়েছে এই আসন। ২০১০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে লেবার দলীয় প্রার্থী গ্লেন্ডা জ্যাকসন অনেকটা হারতে হারতেই মাত্র ৪২ ভোটে জিতে যান হ্যামস্টেড ও কিলবার্নের এ আসন। এ কারণেই ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি এবার এই আসনটিকে ‘টার্গেট সিট’ বানিয়েছে। আর এই আসন থেকেই লেবার পার্টির হয়ে লড়ছেন টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক।
অপরদিকে, আগে থেকেই সুপরিচিত নাম ও নির্বাচিত লেবার পার্টির এমপি রুশনারা আলী এবারও জয়ী হবেন বলে সবাই নিশ্চিত। তিনি লড়ছেন তার পূর্বের নির্বাচনী এলাকা বেথনাল গ্রিন এন্ড বো থেকে। সেই সঙ্গে লেবার পার্টির ব্যানারে রুপা হক লড়ছেন মধ্য ইলিং থেকে।
এবারের নির্বাচনে অপর বাংলাদেশি ব্রিটিশ প্রার্থীরা হচ্ছেন- বেকেনহাম আসনে লেবার পার্টির ব্যারিস্টার মেরিনা আহমেদ, ওয়েলউইন অ্যান্ড হাটফিল্ড আসন থেকে লেবার পার্টির ব্যারিস্টার আনোয়ার বাবুল মিয়া, নর্থহ্যামটন সাউথ আসন থেকে লিবারেল ডেমোক্রেট দলের প্রিন্স সাদিক চৌধুরী, সারের রায়গেইট ও বানস্টেড আসনে লেবার পার্টির আলী আখলাকুল, লুটন সাউথ থেকে লিবারেল ডেমোক্রেটের আশুক আহমেদ, নর্থ ইস্ট হ্যাম্পশায়ার আসন থেকে লেবার পার্টির এমরান হোসাইন, স্কটল্যান্ডের এভারডিনশায়ারের বেনফ অ্যান্ড বুখান আসন থেকে লেবার পার্টির সুমন হক এবং ওয়েলসের আরফন আসন থেকে লিবারেল ডেমোক্রেট দলের মোহাম্মদ সুলতান।
এদিকে, বুধবার (০৬ মে) ছিল নির্বাচনী প্রচারণার সর্বশেষ দিন। এদিনও প্রার্থীরা নিজের ও দলের পক্ষে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। তবে দিন শেষে জনমত জরীপে এখনো শীর্ষেই রয়েছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি।
কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালিত জরীপে বুধবার দিন শেষে কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষে সমর্থন দেখা গেছে ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
অন্যদিকে, নিজের পক্ষে ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ জনমত নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ডেভিড ক্যামরনের ক্ষমতাসীন দলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা এড মিলিব্যান্ডের লেবার পার্টি।
এছাড়া, ১৩ দশমিক ১ শতাংশ জনসমর্থন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টি (ইউকিপ)। সেই সঙ্গে ৯ দশমিক ১ শতাংশ সমর্থনের আভাস দিয়ে বর্তমান ব্রিটিশ পার্লামেন্টের তৃতীয় শক্তিশালী দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি রয়েছে চতূর্থ অবস্থানে।
নির্বাচন পূর্ববর্তী জনমত জরীপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে বেশ আগেই বিভিন্ন সংস্থা হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। সেই সঙ্গে কোনো কোনো বিশ্লেষক তো বলেই বসেছেন, এবারের নির্বাচনে কোনো একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল খুঁজে নাও পাওয়া যেতে পারে। হয়তো যৌথ সরকার ব্যবস্থার পথেই হাঁটতে হতে পারে রাজনৈতিক দলগুলোকে। সেক্ষেত্রে ছোট দলগুলো আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৬ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৫
আরএইচ