ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

‘মৃত্যুর নৌকায়’ সাগর পাড়ির চেষ্টা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৫
‘মৃত্যুর নৌকায়’ সাগর পাড়ির চেষ্টা ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: একটু বাতাসের জন্য ছটফট করছে ফুসফুস। শ্বাস-প্রশ্বাসে প্রতিমুহূর্তে যে বাতাস দেহের ভেতরে ঢুকছে আর বের হচ্ছে, যার জন্য কোনো দাম বা কর দিতে হয় না মানুষকে।

কিন্তু সেই বাতাসই যেন এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী বস্তু। বদ্ধ পাটাতনের ফাঁক গলে একটু দম নেওয়ার জন্য মুখটা এগিয়ে ধরেন আব্দেল।

বলা হচ্ছে, ২৭ আগস্ট লিবিয়া উপকূলের কাছে পৃথক দুই নৌকাডুবির ঘটনায় জীবিত উদ্ধার অভিবাসন প্রত্যাশীদের সাগর জীবনের অভিজ্ঞতার কথা। ২৫ বছর বয়সী যুবক আব্দেল তাদেরই একজন। ইউরোপ পাড়ি জমাতে তিনি সুদান থেকে এসেছিলেন।

এ তো গেল শুধু বাতাসের জন্য হাহাকার। বেঁচে থাকার জন্য যা প্রয়োজন, তার সবকিছুই যেন ওই নৌকায় অনুপস্থিত। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) এক প্রতিবেদনে এভাবেই উঠে এসেছে অভিবাসন প্রত্যাশীদের কথা।

ওই নৌকাডুবির ঘটনায় প্রায় তিনশ অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে লিবিয়ার কোস্টগার্ড। তাদেরকে ত্রিপোলির জুয়ারা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আব্দেল বলেন, বদ্ধ পাটাতনে আমাদের বন্দি করে রেখেছিল ওরা। ভেতরে যেতে চাইতাম না আমরা। ওরা আমাদের পিটিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। বদ্ধ পাটাতনের ভেতর ছিল না কোনো বাতাস। একটু বাতাসের জন্য ছটফট করতে করতে আমরা উপরে উঠে আসার চেষ্টা করতাম। কিন্তু অন্য যাত্রীরা নৌকা ডুবে যাওয়ার ভয়ে আমাদের টেনে নিচে নামিয়ে আনতো। তারাও আমাদের পেটাতো।

ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, নৌকাতেই ৫২ জন অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃত্যু হয়। এরা বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও সুদানের নাগরিক ছিলেন। এদের মধ্যে একজন পানি খাওয়ার জন্য পাটাতনের উপরে উঠে আসার চেষ্টা করলে তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। তিনি সুদানের নাগরিক ছিলেন। বাকিরা মারা গেছেন দম বন্ধ হয়ে।

বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) স্থানীয় সময় দিনগত রাতেই জীবিতদের পাশাপাশি মরদেহগুলোও পালেরমো বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।

জীবিত উদ্ধার অভিবাসন প্রত্যাশীদের কয়েকজন জানিয়েছেন, নৌকার পাটাতনের উপরে চড়ে সাগর পাড়ি দিতে তারা মানবপাচারকারীদের হাজার ইউরো/ডলার দিয়েছিলেন।

৪৫ বছর বয়সী হাসনাকেও তার স্বামী, তিন মেয়ে ও এক শিশু ছেলেসহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, সাগরের মধ্যে থাকাকালে নৌকার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে আমি জানতে পারি। তখনই আমি ফিরে যেতে চেয়েছিলাম। ওটা একটা মাছধরা নৌকা ছিল। এর বর্ণনা দেওয়া যেতে পারে শুধু ‘মত্যুর নৌকা’ উপমা দিয়ে।

অপর এক প্রতিবেদনে ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, চলতি বছর তিন লাখেরও বেশি অভিবাসন প্রত্যাশী বিপজ্জনকভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেছেন। এর মধ্যে দুই লাখ গ্রিসে ও এক লাখ ১০ হাজার ইতালিতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

সংস্থাটি জানায়, ২০১৪ সালের তুলনায় এ চলতি বছর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার হার অনেক বেশি। গত বছর দুই লাখ ১৯ হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছিলেন অভিবাসনের খোঁজে।

চলতি বছর এরই মধ্যে সাগরে ডুবে আড়াই হাজার অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। এ সংখ্যার সঙ্গে এখনও ২৭ আগস্টের দুর্ঘটনায় মৃতদের সংখ্যা যোগ করা হয়নি।

** আরও ১৬ বাংলাদেশির মরদেহ উদ্ধার!
** ৮ বাংলাদেশির মৃত্যু, উদ্ধার ৪৬

বাংলাদেশ সময়: ২২২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৫
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।