ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

সেই ছবিতে কাঁদছে বিশ্ব

হুসাইন আজাদ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৫
সেই ছবিতে কাঁদছে বিশ্ব

ঢাকা: ‘...আমি কেবল কাঁদছিলাম। সৃষ্টিকর্তা এই নিষ্পাপ স্বর্গশিশুকে শান্তিতে রাখুন!’ তুরস্কের সমুদ্র সৈকতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা নিষ্প্রাণ শিশুর মরদেহ উদ্ধারের খবরটি আল জাজিরায় পড়ে এই মন্তব্য করেন পাঠক জহির আব্বাস।

ওই খবর ও ছবি দেখার পর আইরিশ সাংবাদিক কনোর পোপ’র মন্তব্য, ‘সৈকতে এই নিষ্প্রাণ শিশুর পড়ে থাকা যে কতোটা হৃদয়বিদারক...’। আসলে কেবল জহির আব্বাস বা কনোর পোপ’র হৃদয়ই কাঁদছে না, ৩-৪ বছর বয়সী শিশুর মরদেহ উদ্ধারের ছবিটি দেখে এখন যেন গুমরে কাঁদছে পুরো বিশ্ব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি ছবিটির নির্মমতায় স্তম্ভিত বিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলোও।

বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) তুরস্কের পূর্বাঞ্চলীয় সমুদ্র সৈকত থেকে উদ্ধার করা হয় সিরীয় শরণার্থী শিশুটির মরদেহ। লাল গেঞ্জি, গাঢ় সবুজ হাফ প্যান্ট আর কেডস পরিহিত শিশুটির বালুতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকার ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই আলোড়ন শুরু হয়। ছড়িয়ে পড়ে মূলধারার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও।

ওই ছবি ও শরণার্থীদের নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী পত্রিকা ডেইলি মিরর’র প্রধান খবরের শিরোনাম করা হয়, ‘নির্মম’। সেখানকার আরেক প্রভাবশালী দৈনিক ‘মেট্রো’ তাদের বৃহস্পতিবারের সংখ্যায় ওই ছবি নিয়ে প্রকাশিত প্রধান খবরের শিরোনাম করে ‘ইউরোপ তাকে বাঁচাতে পারেনি’। যুক্তরাজ্যের মূলধারার আরেক দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান’র বৃহস্পতিবারের সংখ্যায় নিষ্পাপ শিশুটির মরদেহ উদ্ধারের ছবিসহ প্রকাশিত প্রধান খবরের শিরোনাম করা হয় ‘ইউরোপের অভিবাসী সংকটের নির্মম-নিষ্ঠুর’ বাস্তবতা। এই খবর দ্য সান প্রকাশ করে ‘জীবন ও মৃত্যু’ শিরোনাম দিয়ে।

কেবল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমই নয়, ফরাসি, জার্মান, ইতালিয়ান, হাঙ্গেরিয়ান, অস্ট্রিয়ান, গ্রিক সংবাদমাধ্যমগুলোও বৃহস্পতিবার স্তব্ধ থেকেছে সৈকতে পড়ে থাকা নিথর শিশুর ছবিটি নিয়ে।

আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি এসব সংবাদমাধ্যমের খবরের নিচে মন্তব্য করে নিজেদের শোক-সমবেদনার কথা জানাচ্ছেন পাঠকরা। একইসঙ্গে তারা ধুয়ে দিচ্ছেন যুদ্ধবাজ সিরিয়া ও ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যকে। ধুয়ে দিচ্ছেন প্রাণ বাঁচাতে আসতে থাকা শরণার্থীদের ঠেকানোর পরিকল্পনকারী ইউরোপের নেতাদেরও।

ওই ছবি আর খবর দেখার পর ব্রিটিশ লেবার পার্টির নেতা ডেভিড মিলিব্যান্ড তার টুইটারে বলেন, ‘সৈকতে শিশুর মরদেহ পড়ে থাকার এ নির্মম ছবি দেখার পরও যদি শরণার্থীদের বিষয়ে ইউরোপের মানসিকতায় পরিবর্তন না আসে, তবে কী হবে?’

সংবাদমাধ্যম জানায়, সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের গৃহযুদ্ধ থেকে প্রাণ বাঁচাতে ইউরোপ অভিমুখে নিরীহ মানুষের যে স্রোত নেমেছে, সে স্রোতে নেমে মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) যুদ্ধপ্রবণ এলাকা ছাড়তে চাইছিল ১২ সিরীয়। দুই নৌকায় করে তুরস্কের বোদরাম উপদ্বীপ থেকে গ্রিসের এজিয়ান দ্বীপের উদ্দেশে রওয়ানা হয় তারা। এই ১২ জনের মধ্যে ছিল শিশুটিও। কিন্তু সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ আর বৈরী আবহাওয়া তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছুতে দিলো না। মায়ের কোল থেকে শিশুটিকে আছড়ে ফেলে দিলো সমুদ্রে, ভাসিয়ে নিয়ে এলো তুরস্কের সমুদ্র সৈকতে। মাকে ভাসিয়ে নিয়ে ফেললো দূরের অন্য এক সৈকতে।

সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহারকারীদের মতে, সৈকতে শিশুর মরদেহ উদ্ধারের এ মর্মান্তিক ঘটনার পরও যদি যুদ্ধবাজ বিশ্বের মানসিকতায় পরিবর্তন না আসে, শরণার্থীদের বিষয়ে ইউরোপের মানসিকতায় পরিবর্তন না আসে, তবে আরও অসংখ্য ‘সমুদ্র সৈকত ট্র্যাজেডি’ দেখতে হবে বিশ্ববাসীকে!

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৫
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।