ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

সন্তানদের খাবার দিতে না পেরে আগুনে পুড়লেন মা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৫
সন্তানদের খাবার দিতে না পেরে আগুনে পুড়লেন মা ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ক্ষুধার্ত সন্তানদের মুখের দিকে তাকাতেই তার মুখই শুকিয়ে যেতো। দুয়েক বেলা সান্ত্বনা দিতেন, পরের বেলায় ঠিকই খাবার দেবেন বলে।

পরের বেলায়ও পারতেন না কথা রাখতে। সন্তানরা আবার তার মুখের দিকে চেয়ে থাকতো, তিনি কোনো উত্তর দিতে পারতেন না। এভাবে আর ক’বেলা, ক’দিন, ক’সপ্তাহ? ছোট ছোট ক্ষুধার্ত মুখগুলোর দিকে আর তাকাতে পারছিলেন না তিনি। অসহ্য মানসিক যন্ত্রণা সইতে না পেরে অবশেষে নিজেকে আগুনে পুড়িয়ে ‘রেহাই পেলেন’ পাঁচ সন্তানের জননী।

শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) এমন নির্মম আত্মহননের ঘটনা ঘটেছে ভারতের মহারাষ্ট্রের ওসমানাবাদ জেলার মারাঠবাদ এলাকায়। বেলার পর বেলা সন্তানদের উপোস রাখার যন্ত্রণা সইতে না পেরে আত্মহনন করেছেন মানিষা গাটকাল নামে ৪০ বছর বয়সী ওই মা।

গ্রামবাসী বলেন, পুরো ভারত যখন ‘রাখী বন্ধন’ উৎসব উদযাপন করছিল, তখন নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়ে মরছিলেন মানিষা। স্বামী লক্ষ্মণ গাটকাল বাড়ির বাইরে থাকার সুযোগ নিয়ে আত্মহনন করেন এলাকায় চুক্তিতে শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা মানিষা।

মানিষাকে পুড়ে অঙ্গার করা কেরোসিনের গন্ধ এখনও যেন ভাসছে মারাঠবাদের বাতাসে। প্রতিবেদক যখন তার বাড়িতে যান, বারান্দায় অনুভূতিশূন্য হয়ে বসেছিলেন স্বামী লক্ষ্মণ ও তিন মেয়ে, এক ছেলে। মাটির ঘরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে মরিচা ধরা দু’টি চাপাতির পাশে একটি অ্যালুমিনিয়ামের প্লেট, খাবারের ‍হাঁড়ি-পাতিল। নেই চাল, আটা-ময়দা, তেল, খাবারের কিছুই।

কথা তুলতেই মানিষার স্বামী লক্ষ্মণ বলেন, ‘আর পারি না। কোনো খাবার নেই...কোনো কাজও নেই। আজ (শনিবার) যখন কাজ পেয়ে বাইরে গেলাম, সে (মানিষা) দরজা বন্ধ করে নিজেকে শেষ করে দিল...। জীবিকা নির্বাহের কোনো উপায় নেই...। ’

সাম্ভাজি নামে মানিষা-লক্ষ্মণদের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘ওরাও সরকারি রেশন পায়। কিন্তু যা পায়, তা দিয়ে সাতজনের পরিবার চলা সম্ভব নয়। ১২ কেজি চাল আর ১২ কেজি গম দিয়ে ১২ দিন চলা যায়, ৩০ দিন নয়। ’

সংবাদমাধ্যমের তথমতে, মারাঠবাদ মহারাষ্ট্রের খরাপ্রবণ এলাকা বলে পরিচিত। অনিশ্চিত জীবিকার অভিশাপে এখানে প্রায়ই গরিব কৃষকের আত্মহননের ঘটনা ঘটে। ২০১৪ সালে এখানে ৫৭৪ জন এবং ২০১৫ সালে (এখন পর্যন্ত) ৬২৮ জন কৃষক আত্মনন করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৫
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।