ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মধ্যপ্রাচ্যে প্রত্যাবর্তন

সিরিয়ায় যেসব অস্ত্র মোতায়েন করলো রাশিয়া

বাংলানিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৫
সিরিয়ায় যেসব অস্ত্র মোতায়েন করলো রাশিয়া

রাশিয়া সিরিয়ায় আইসিসের বিরুদ্ধে লড়তে গেল মাত্র দিনকয় আগে। সিরিয়ায় নতুন বিমানঘাঁটিতে সামান্য কিছু বিমান আর হাজার দুই সেনা মোতায়েন করেছে কেবল।

এর মধ্যে মাত্র কয়েক দফা বিমান-আক্রমণ করেই গোটা বিশ্বকে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের রীতিমতো চমকে দিয়েছে তারা। মানে, বড় ধরনের সাফল্য পেয়ে গেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক দু’দিক থেকেই খুব বড় আকারের এই সাফল্য। বিশ্ব মিডিয়া একে বর্ণনা করেছে ‘ outsized political and diplomatic gains’ হিসেবে। গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবার পর মধ্যপ্রাচ্যে এটাই রাশিয়ার প্রথম যুদ্ধ-মিশন। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে, এই মিশনের জন্য রাশিয়া এ-ক’দিনে ৫০টির মতো বিমান (এসবের মধ্যে আছে যুদ্ধবিমান, সামরিক পরিবহন বিমান ও গোয়েন্দা বিমান) ও ২ হাজারের মতো সেনা। পাশাপাশি সাপোর্ট ও লজিস্টিক সরঞ্জামও পাঠিয়েছে তারা।

এবার দেখা যাক কি কি সামরিক সরঞ্জাম সেখানে পাঠিয়েছে রাশিয়া।


ওয়ার্কহর্স ওয়ারপ্লেনস: এসইউ-২৪ এবং এসইউ-২৫ ( Su-24s and Su-25s)
Su_24
এরা আসলে কেমন বিমান: এখন পর্যন্ত সিরিয়ায় মোতায়েন করা রুশ বিমানশক্তির কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এর আগে যুদ্ধ-সফল ও পরীক্ষিত দুটো মডেল। এদের একটি হচ্ছে Su-24 ফাইটার বিমান (ন্যাটোর ভাষায় ফেনসার) ও  Su-25 গ্রাউন্ড অ্যাটাক জেট বিমান (ন্যাটোর ভাষায় ফ্রগফুট)। সোভিয়েত আমল থেকেই এ-দুই মডেলের যুদ্ধবিমান ব্যাপক সফল ও পরীক্ষিত বলে প্রমাণিত। চেচনিয়া থেকে শুরু করে ইউক্রেন পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার যুদ্ধক্ষেত্রে এই দু’ধরনের বিমানের উড়ে যাবার দৃশ্য সবার কাছে খুবই পরিচিত।  

কেনইবা এগুলো সেখানে: ফ্রগফুটের মতো (পুরনো আমলের) বিমান কেন সিরিয়ায় পাঠাল ক্রেমলিন, এ-প্রশ্নের সোজা উত্তর হচ্ছে তারা মনে করে সিরিয়ার মতো দেশের লো-টেক যুদ্ধে এগুলোই হবে মোক্ষম কার্যকর অস্ত্র। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া বিমান থেকে ব্যাপক বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাবে। আর এ-কাজে তারা ব্যবহার করবে লক্ষ্যবস্তুর খুব কাছাকাছি থাকা তাদের নতুন বিমানঘাঁটিকে। এ-কাজে কম উন্নত প্রযুক্তির (লো-টেক) ফ্রগফুট যুদ্ধবিমান সর্বাধুনিক প্রযুক্তির যুদ্ধবিমানের চেয়ে অনেক বেশি উপযোগী ও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

এগুলো কেন জরুরি: সিরীয় বিমান বাহিনিতেও Su-25 যুদ্ধবিমান রয়েছে। তবে রাশিয়ার এসইউ-২৫ রাত্রিকালীন যুদ্ধের উপযোগী করা হয়েছে। মানে এগুলো উন্নততর এভিয়োনিক্স এবং নাইট ভিশন সরঞ্জামে সজ্জিত করা হয়েছে। যা সিরীয় বিমানগুলোতে নেই।  
su_25

এসইউ-৩০ এম (Su-30M) ফ্ল্যাংকার্স
এগুলো আসলে কেমন: খুবই কসরত-সক্ষম এসব যুদ্ধবিমান মূলত ডগফাইট বা মুখোমুখি যুদ্ধের জন্য তৈরি করা হয়েছে। বলা বাহুল্য, ডগফাইটে এরা সর্বাধুনিক মার্কিন বিমানের চেয়েও কার্যকর। ভারতীয় বিমান বাহিনীর সাথে মার্কিন বাহিনীর মহড়ার সময় প্রতিবারই জিতেছে এসইউ ফ্ল্যাংকার্স ।

কেন সিরিয়ায় এগুলো পাঠানো হলো: সিরিয়ায় এগুলোর উপস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন মার্কিন বিমানবাহিনির জন্য রীতিমতো মাথাব্যথার কারণ। কেননা সিরিয়ায় আইএস—এর মতো অনুন্নত বাহিনীকে শায়েস্তা করতে এগুলোর প্রয়োজনীয়তা নেই (...they would not seem to have an obvious mission)। আকাশে মুখোমুখি যুদ্ধ করবার মতো কোনো বিমান রাশিয়ার সম্ভাব্য শত্রু আইএস বা আসাদবিরোধী বিদ্রোহী বাহিনির নেই। ফলে মার্কিনিদের উদ্বেগটা অমূলক নয়।
su_30
রাশিয়ার সঙ্গে কথা না বলে য়ুক্তরাষ্ট্রের নেতৃতাধীন পশ্চিমা বাহিনি যেন সিরিয়ায় একতরফা ‘বিমান উড্ডয়ন নিষিদ্ধ এলাকা’ বা ‘নো-ফ্লাই জোন’ তৈরি করার সাহস না পায় সেজন্যই মূলত এগুলোকে পাঠানো হয়েছে। ন্যাটো ও মার্কিন বিমানবাহিনিও এ-নিয়ে তাদের উদ্বেগ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। কি আছে পুতিনের মনে তা কেউ জানে না আপাতত। তাই এতো উদ্বেগ পশ্চিমাদের।

এসইউ—৩৪ ফুলব্যাক (Su-34 Fullbacks)
এগুলো আসলে কেমন যুদ্ধবিমান: সিরিয়ায় পাঠানো এই যুদ্ধবিমানগুলো নতুন মডেলের এবং হালফিল প্রযুক্তিতে সজ্জিত। ভূমিতে শত্রুপক্ষের অবস্থান কার্যকরভাবে গুঁড়িয়ে দিতে এগুলোর জুড়ি মেলা ভার। ২০০৮ সালে জর্জিয়ান বিমানবাহিনিকে অনেকটাই পঙ্গু করে দিয়েছিল এ-বিমান।

এগুলো কেন পাঠানো হলো সিরিয়ায়: জর্জিয়া যুদ্ধের বাইরে বিদেশের মাটিতে যুদ্ধের জন্য এবারই প্রথম পাঠানো হলো। যুদ্ধক্ষেত্রের বিরাজমান পরিস্থিতিতে এগুলো কতোটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম তা পরীক্ষা করার জন্যই মূলত এগুলোকে পাঠানো হয়েছে সিরিয়ায়।
su_34
এগুলোর সামরিক গুরুত্ব:  রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় নিউজ মিডিয়া একটি ফ্যাক্ট শিট (fact sheet) প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা বলেছে, এসব যুদ্ধবিমানের রয়েছে ফ্রগফুটের চেয়ে দূরপাল্লায় আঘাত হানার ক্ষমতা। পাশাপাশি আকাশে অন্য যুদ্ধবিমানের সাথে লড়াই করার (ডগফাইট) অধিকতর সক্ষমতা। রুশরা গত শুক্রবার পূর্ব সিরিয়ায় শত্রুর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার কাজে এগুলোকে ব্যবহার করেছে। এগুলো এমনসব এলাকার উপর দিয়ে উড়ে গিয়েছে যেখান দিয়ে মার্কিন বাহিনির যুদ্ধবিমানগুলো উড়ে গিয়ে আইএস-র লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে সচরাচর। ব্যাপারটা মার্কিনিদের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ নি:সন্দেহে।

পান্তসির এস-আই গ্রেহাউন্ড সিস্টেম (Pantsir S-1 Greyhound systems)
Pantsir_S_1_Greyhound_systems
এগুলো আসলে কি: এগুলো মূলত র‌্যাডার গাইডেড বিমানবিধ্বংসী কামান ও মিসাইল সিস্টেম। এগুলো মূলত ট্রাকের উপর স্থাপিত হয়। স্বল্প পাল্লার এই অস্ত্র খুবই নিখুঁত ও কার্যকর এক অস্ত্র।  

এগুলো কেন সিরিয়ায়: রুশ বিমানঘাঁটির নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই এগুলো মোতায়েন করা হয়েছে।

এগুলোর গুরুত্ব কতোটা: এগুলো বিমানঘাঁটি ও এর আশপাশের এলাকাকে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষার উপযোগী হলেও এদের পাল্লা সীমিত। তবে এগুলোর মোতায়েনের মধ্য দিয়ে অন্যসব বিমানবাহিনিকে রাশিয়া একটা কড়া সতর্কবার্তাই দিয়েছে। যার মানে দাঁড়ায় ‘আমাদের ঘাঁটাতে এসো না বাছা’।

রুশ নৌবাহিনীর উপস্থিতি (Naval forces presence)
Naval_forces_presence
এ ব্যাপারে সামান্য তথ্য: রাশিয়া পূর্ব ভূমধ্যসাগরে একটা নেভাল ব্যাটল গ্রুপ মোতায়েন করেছে। এর পাশাপাশি শিপ বেজড সারফেস টু এয়ার মিসাইলও মোতায়েন করা হয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র তেমনটাই জানালেন সংবাদ মাধ্যমকে।

কেন তাদের মোতায়েন করা হলো: আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধটা সিরীয় জলসীমার বাইরেও অনেক দূরের প্রত্যন্ত ও দুর্গম মরু এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। তা সত্ত্বেও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র প্রেসিডেন্ট আসাদের জন্য রুশ বাহিনির সামরিক সহায়তা মূলত উত্তর পশ্চিমের উপকূলীয় পার্বত্য এলাকায়ই সীমাবদ্ধ আপাতত। ওই এলাকায় কিছু ধর্মীয় সংখ্যালঘুর বাস। এখানে লাতাকিয়া (Latakia) বন্দরের কাছে রাশিয়ার সামরিক বিমানঘাঁটি রয়েছে। এছাড়া সোভিয়েত আমল থেকেই এই এলাকায় তারতুস (Tartus)বন্দরে নৌঘাঁটি রয়েছে। এখন তা মূলত নেভাল সাপ্লাই ও যুদ্ধজাহাজের প্রয়োজনীয় মেরামতের কাজে লাগাচ্ছে রাশিয়া। এখানে পূর্ণাঙ্গ ও বৃহৎ সামরিক নৌঘাঁটি করার পরিকল্পনা রয়েছে পুতিনের।  

এদের উপস্থিতির গুরুত্ব: অন্যসব সক্ষমতার পাশাপাশি নৌ উপস্থিতির সুবাদে রুশ বাহিনি বিশাল এলাকার আকাশ শত্রুমুক্ত রাখতে সক্ষম হবে। এরই মধ্যে রাশিয়া সতর্কবাণী প্রচার করেছে, যুদ্ধবিমানতো দূরের কথা কোনো বেসামরিক বিমান যেন রুশ নৌবাহিনির ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় মধ্যে দিয়ে উড়ে না যায়। এমনকি খুব উঁচু দিয়েও নয়। এটা আসলে মার্কিন বিমানবাহিনির প্রতি এক প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারিও বটে (It is a warning, needless to say, to the United States Air Force as well.)!

বাংলাদেশ সময়: ০১৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৫
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।