ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

২২৪ জন নিয়ে রুশ প্লেন বিধ্বস্ত

১০০ জনের মরদেহ ও প্লেনের ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৫
১০০ জনের মরদেহ ও প্লেনের ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: মিশরের সিনাই উপদ্বীপের মধ্যাঞ্চলে বিধ্বস্ত রাশিয়ান উড়োজাহাজটির ১০০ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে পাঁচটি মরদেহ শিশুর।

উদ্ধার করা হয়েছে উড়োজাহাজটির ব্ল্যাকবক্সও (ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার)। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ উদ্ধার তৎপরতা আরও জোরদার করেছে।

রাশিয়ার কোলাভিয়া এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি শনিবার (৩১ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার আগে সিনাইয়ের পার্বত্য এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। এ৩২০ এয়ারবাসের ৭কে৯২৬৮ নং ফ্লাইটটিতে ২২৪ আরোহী ছিলেন। এদের মধ্যে ১৭ শিশুসহ ২১৭ জন যাত্রী ছিলেন। বাকি সাত জন ছিলেন ক্রু। যাত্রীদের সবাই রাশিয়ান পর্যটক।

মিশরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, দুর্ঘটনার পরই ঘটনাস্থলে অর্ধশত অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়। এরপর ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ শিশসহ ১০০ জনের মরদেহ উদ্ধার করে জরুরি বাহিনী। কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল থেকে উড়োজাহাজটির ব্ল্যাকবক্সও উদ্ধার করেন।

উদ্ধার তৎপরতা আরও জোরদার করা হয়েছে বলেও জানাচ্ছে মিশরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কায়রোয় নিযুক্ত রাশিয়ান দূতাবাসের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ঘটনাস্থলে আরও উদ্ধারকারী সদস্য পাঠাচ্ছে সরকার।

৭কে৯২৬৮ ফ্লাইটটি মিশরের লোহিত সাগর উপকূলের পর্যটন শহর শার্ম আল-শেইখ থেকে বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা ৫১ মিনিটে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের উদ্দেশে উড়াল দেয়। উড্ডয়নের ২৩ মিনিট পর ১০টা ১৪ মিনিটে সিনাই উপদ্বীপে পৌঁছালে এটি সংশ্লিষ্ট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। পরে সিনাইয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, উড়োজাহাজটি সেখানকার পার্বত্য এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা ছিল ফ্লাইটটির।

দুর্ঘটনার পর মিশরীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাশিয়ার উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শরিফ ইসমাইল একটি জরুরি সংকট মোকাবেলা কমিটি গঠন করেছেন।

দুর্ঘটনার বিষয়ে মিশরের বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, উড্ডয়নের ২৩ মিনিট পর সাইপ্রাসের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করার কথা ছিল ফ্লাইটটির। কিন্তু এতে পাইলট ব্যর্থ হলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে উড়োজাহাজটি। শেষ পর্যন্ত সিনাইয়ে বিধ্বস্ত হয়।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে রাশিয়ান একটি সংবাদ সংস্থা জানায়, উড্ডয়নের পরই যান্ত্রিক ত্রুটিতে পড়েছিল উড়োজাহাজটি। এজন্য এটি কায়রো বিমানবন্দরে অবতরণের জন্য এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগও করে। তবে এরপরই উড়োজাহাজটি নিখোঁজ হয়ে যায়।

আরেকটি সূত্রের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যের একটি সংবাদ সংস্থা জানায়, উড়োজাহাজটি ৩০ হাজার ফুট দিয়ে উড়ছিল। এক মিনিটের মধ্যে হঠাৎ এটি পাঁচ হাজার ফুট নিচে নেমে যায়। এরপরই উড়োজাহাজটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের।

দুর্ঘটনার পরই ঘটনাস্থলে ছুটে যাওয়া প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যমকে জানান, উড়োজাহাজটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আরোহীদের সবাই নিহত হয়েছেন।

উড়োজাহাজটি যোগাযোগ হারিয়ে ফেললে সংবাদমাধ্যমে এর ‘নিখোঁজ’ হওয়ার খবর ছড়ালেও কিছুক্ষণ পরই মিশরের বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা দাবি করেন, ‘উড়োজাহাজটি নিরাপদ রয়েছে। এটি অল্প সময়ের জন্য যোগাযোগ হারালেও পরে আবার পুনর্স্থাপন করতে সমর্থ হয় এবং তুরস্কের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করে গন্তব্যের উদ্দেশে যাচ্ছে। ’ কিন্তু এরপরই মিশরীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে কিছু সময়ের জন্য ধোঁয়াশারও সৃষ্টি হয়।

এদিকে, উড়োজাহাজটিকে গুলি করে বিধ্বস্ত করা হয়েছে কি-না, সে ব্যাপারে মিশরীয় নিরাপত্তা বাহিনী কোনো আলামত না পাওয়ার কথা জানালেও পশ্চিমা একটি সংবাদমাধ্যম এ ব্যাপারে তাদের সন্দেহ প্রকাশ করেছে। সিনাই উপদ্বীপ ইসলামিক স্টেটসহ (আইএস) বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। সম্প্রতি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতায় ধরে রাখতে আইএস নির্মূলে সিরিয়ায় বিমান হামলা শুরু করে রাশিয়া। সিরিয়া ইস্যুতে মস্কোর এই অবস্থানই তাদের সন্দেহের কারণ বলে জানানো হচ্ছে।

অন্যদিকে, উদ্ধার তৎপরতায় মিশর সরকারকে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল সরকার। তবে এ বিষয়ে কায়রো বা মস্কোর তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। মিশরের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক সংহত হলেও সিরিয়া ইস্যু নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে টানাপোড়েন চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৫/আপডেট ১৮২৭ ঘণ্টা
আরএইচ/এইচএ/

** মিশরে ২২৪ আরোহী নিয়ে রুশ প্লেন বিধ্বস্ত
** বিধ্বস্ত যাত্রীবাহী প্লেনের সবাই রাশিয়ান
** যোগাযোগ হারানোর পর নিরাপদ রাশিয়ান যাত্রীবাহী প্লেন!
** রাশিয়ার যাত্রীবাহী প্লেন নিখোঁজ নিয়ে ধোঁয়াশা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।