ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

জয়ললিতার মৃত্যুর গুজব নাকচ, নিবিড় পর্যবেক্ষণে চলছে চিকিৎসা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৬
জয়ললিতার মৃত্যুর গুজব নাকচ, নিবিড় পর্যবেক্ষণে চলছে চিকিৎসা জয়ললিতা

ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং ‘আম্মা’ খ্যাত জনপ্রিয় নেত্রী জয়ললিতার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছে কিছু টেলিভিশনে। এ গুজব নাকচ করে দিয়েছে রাজ্যের রাজধানী চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতাল। তারা বলেছে, জয়ললিতার ‘প্রাণরক্ষা’য় সবরকমের চিকিৎসা চলছে।

ঢাকা: ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং ‘আম্মা’ খ্যাত জনপ্রিয় নেত্রী জয়ললিতার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছে কিছু টেলিভিশনে। এ গুজব নাকচ করে দিয়েছে রাজ্যের রাজধানী চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতাল।

তারা বলেছে, জয়ললিতার ‘প্রাণরক্ষা’য় সবরকমের চিকিৎসা চলছে।

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার আগে বিভিন্ন টেলিভিশনে গুজব ছড়ানোর পর এক বিবৃতিতে এ কথা জানায় হাসপাতালটি। ভারতীয় কয়েকটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম সে বিবৃতির খবর জানিয়েছে।

অনলাইনগুলো জানায়, তামিলনাড়ুর জনপ্রিয় জয়া টিভিসহ অন্তত ৩টি সংবাদমাধ্যমে খবর ছড়ায়, মুখ্যমন্ত্রী জয়া আর নেই। তৎক্ষণাৎ বিষয়টি নজরে এলে অ্যাপোলো হাসপাতাল বিবৃতিতে জানায়, “কিছু টিভি চ্যানেল মুখ্যমন্ত্রী মারা গেছেন বলে ভুল খবর ছড়িয়েছে। এসব একেবারেই ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা। এ খবর সংশোধনের জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। ”

এতে আরও বলা হয়, “অ্যাপোলো ও দিল্লি থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্য গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং তার প্রাণরক্ষায় সবরকমের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ”

৭৪ দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জয়ললিতা রোববার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন, তারপর থেকেই দক্ষিণ ভারতের এ জনপ্রিয় নেত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।

এ প্রেক্ষিতে সোমবার দুপুরে হাসপাতালটির পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, “গতকাল সন্ধ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার শারীরিক অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। তাকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্রে (ইসিএমও) বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে এবং অন্যান্য লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। একটি বিশেষজ্ঞ দল তার চিকিৎসা করছে এবং গভীরভাবে তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। ”

পানিশূন্যতা ও জ্বর আক্রান্ত হলে গত ২২ সেপ্টেম্বর জয়ললিতাকে অ্যাপোলোতে ভর্তি করা হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি স্বাভাবিক খাবার-দাবার করছেন। ২৯ সেপ্টেম্বর এক বুলেটিনে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসায় ভালোভাবে সাড়া দিচ্ছেন এবং কয়েকদিনের মধ্যে তিনি সেরে উঠবেন। ৩ নভেম্বর অ্যাপোলো জানায়, জয়ললিতা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এর ১০ দিন পর ১৩ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী এক চিঠি দিয়ে জানান তিনি কর্মস্থলে ফিরতে চান। ১৯ নভেম্বর তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু ৪ ডিসেম্বর আসে জয়ললিতার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, মুখ্যমন্ত্রী হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সকালে তার হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার। এ বিষয়ে সব তথ্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অবহিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও সার্বক্ষণিক জয়ললিতার স্বাস্থ্যের অবস্থার খোঁজখবর রাখছে। এছাড়া দিল্লি থেকে বিশেষ মেডিকেল টিম এসেছে তার চিকিৎসায় সহযোগিতা করতে। এসেছেন অনেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-নেতাও।

নতুন করে জয়ললিতার অসুস্থতার খবরে পুরো রাজ্যে আরাধনা-প্রার্থনা শুরু হয়ে গেছে। এমনকি ‘আম্মা’র হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার খবরে হৃদরোগে ভুগে মারা যান তার এক ভক্ত, অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর মিলেছে আরও বেশ ক’জন ভক্তের।  

এরইমধ্যে ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধীসহ কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের অনেক নেতা জয়ললিতার দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বার্তা দিয়েছেন, একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দল ও তার স্বজনদের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন।

এদিকে, জয়ললিতার অবস্থা ‘খুবই সংকটাপন্ন’ হয়ে পড়ার খবরে অ্যাপোলো হাসপাতালের বাইরে জড়ো হয়েছেন তার দল অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাবিড়া মুনেত্রা কাজাগাম (এআইএডিএমকে) নেতাকর্মী ও একনিষ্ঠ ভক্তরা। জড়ো হয়েছেন স্বজনরাও। তবে চিকিৎসকরা সবাইকে শান্ত থ‍াকার আহ্বান জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, জয়ললিতার স্বাস্থ্যের অবস্থার খবরকে কেন্দ্র করে চেন্নাইসহ তামিলনাড়ুর বিভিন্ন শহরে বিপুলসংখ্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সতর্কাবস্থান নিয়েছেন। সজাগ থাকতে বলা হয়েছে পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোর বাহিনীকেও। সমর্থকদের শান্ত রাখতে বাহিনীগুলোর সদস্যদের সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখানোর কথাও বলে দেওয়া হয়েছে।

৬৮ বছর বয়সী জয়ললিতা এআইএডিএমকের মহাসচিব পদে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনীতিতে পদার্পণের আগে ১৯৬১ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তামিল, তেলুগু ও কান্নাডা মিলিয়ে প্রায় ১৪০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। নৃত্যে নজরকাড়া এ অভিনেত্রীকে তার অভিনয়দক্ষতার জন্য ‘কুইন অব তামিল সিনেমা’ নামেও ডাকা হতো। তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬, ২০০২ থেকে ২০০৬ এবং ২০১১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করেন। মাঝে একটি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হলেও তাতে খালাস পেয়ে ২০১৫ সালে আবারও দক্ষিণের অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ রাজ্যটির সর্বোচ্চ অধিকর্তার আসনে বসেন। রূপালি অঙ্গনে জয়া নামে পরিচিত জয়রাম জয়ললিতা রাজনীতিতে নামার পর উপাধি পান পুরাচ্চি থালাইভি অর্থাৎ বিপ্লবী নেত্রী নামে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৬
এইচএ/

আরও পড়ুন
** তামিলনাড়ুর ‘আম্মা’ জয়ললিতার অবস্থা ‘খুবই সংকটাপন্ন’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।