ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিন গড়তে ফাতাহর সঙ্গে ‘মিলছে’ হামাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭
ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিন গড়তে ফাতাহর সঙ্গে ‘মিলছে’ হামাস যখন ঐক্যবদ্ধ ছিলেন, মাহমুদ আব্বাস ও ইসমাইল হানিয়া। (ফাইল ফটো)

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন পশ্চিম তীরের শাসকগোষ্ঠী ফাতাহর সঙ্গে দশকেরও বেশি সময়ের বিরোধ নিরসনে আগ্রহী গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস। সংগঠনটির নেতৃত্ব বলেছে, হামাসের নতুন প্রশাসনিক কমিটি বিলুপ্তর পর পুরো ফিলিস্তিনের জন্য সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করতে প্রস্তুত তারা। আর ‘ভুল বোঝাবুঝি’র অবসানে আগে থেকেই আগ্রহী ফাতাহ এতে সায় দিলে ২০০৬ সালের পর প্রথম সাধারণ নির্বাচন হবে পুরো ফিলিস্তিনে।

রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) হামাসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এই আগ্রহের কথা জানিয়ে বলা হয়, দশকব্যাপী কোন্দলের অবসানের লক্ষ্যে সংগঠনের নেতৃত্ব প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতাহর সঙ্গে আলোচনা করতে চায়। এই বিরোধ নিরসন হলে ফিলিস্তিনের সরকার পরিচালনা পদ্ধতি এবং বিশ্ব দরবারে সেখানকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব আরও কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আর তাতে ফিলিস্তিনি জনগণই লাভবান হবে।

বর্তমানে মিশরের রাজধানী কায়রোতে রয়েছেন হামাস ও ফাতাহর প্রতিনিধিরা। হামাসের প্রতিনিধিরা মিশরের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন এরইমধ্যে।

তাদের এই আগ্রহের বিষয়ে ফাতাহর আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানা না গেলেও সংগঠনটির উপ-প্রধান মাহমুদ আল-আলাউল বলেছেন, হামাসের এই আগ্রহ ‘ইতিবাচক’ এবং ‘প্রতিশ্রুতিশীল’।

সমঝোতায় আগ্রহ দেখিয়ে অবশ্য প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গত মার্চে গঠিত হামাসের প্রশাসনিক কমিটি বিলুপ্ত করতে সম্প্রতি আহ্বান জানান। তিনি সেজন্য গাজায় বিদ্যুৎ বিলের হারও কমিয়ে দেন। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে হামাস তাদের কমিটি বিলুপ্ত করে রোববার এই আগ্রহের কথা জানালো।

২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত সবশেষ নির্বাচনে জয়লাভ করে গাজাভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন হামাস। কিন্তু বিবাদমান সংগঠন দু’টি ২০০৭ সালে সহিংসতায় জড়ালে হামাসের প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল হানিয়াকে বরখাস্ত করেন পশ্চিম তীরভিত্তিক ফাতাহর নেতা প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। এর জবাবে ফাতাহকে গাজা থেকে বিতাড়িত করে দেয় হামাস।

এরপর থেকে গাজা শাসন করছে হামাস, আর ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা পশ্চিম তীরের অংশ শাসন করছে ফাতাহ। ফাতাহর সরকারকে ‘ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ’ (পিএ) হিসেবে স্বীকৃতি দেয় পশ্চিমা বিশ্ব। কিন্তু হামাসকে—বিশেষত সামরিক শাখার তৎপতার কারণে—সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমারা।

আগে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে পিএ’র প্রতি সব রাজনৈতিক সংগঠনের সমর্থন থাকলেও ২০০৪ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত মারা গেলে ২০০৫ সাল থেকে হামাস-ফাতাহর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ফাতাহ পশ্চিমা মিত্রদের পরামর্শে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তির স্বার্থে সমঝোতার মধ্য দিয়ে চললেও হামাস তাদের স্বীকৃতি দিতে প্রত্যাখ্যান করায় এই দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এরমধ্যেই ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে হামাস আইন পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও ফাতাহর সঙ্গে জোট সরকার গঠনের প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়। এর জেরে ২০০৭ পর্যন্ত সংঘাতে ৬ শতাধিক মানুষ নিহত হয়।

এরপর ২০০৭ সালে হামাস-ফাতাহ পৃথক হয়ে যথাক্রমে গাজা ও পশ্চিম তীর অধীনে নিয়ে সরকার চালাতে থাকে। দু’পক্ষই নিজেদের ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে দাবি করে। ফাতাহর প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ফিলিস্তিনের অধিকার আদায়ে বিশ্ব পর্যায়ে সভা-সেমিনারে অংশ নিলেও হামাসের সামরিক শাখা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে থাকে। যার জেরে তাদের ওপর ইসরায়েলসহ পশ্চিমারা অবরোধ আরোপ করে।

এখন নতুন করে সমঝোতার এই আওয়াজ ফিলিস্তিনি জনমনে আশার সঞ্চার করছে। ফাতাহর উপ-প্রধান মাহমুদ আল-আলাউল বলছেন, এখন সীমান্ত কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক সমঝোতাসহ নানা বিষয়ের বিরোধ মীমাংসা করতে হবে দু’পক্ষকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।