ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

কাতালোনিয়ায় মাদ্রিদের শাসন জারির প্রস্তাব পাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৭
কাতালোনিয়ায় মাদ্রিদের শাসন জারির প্রস্তাব পাস কাতালোনিয়ায় মাদ্রিদের শাসন জারির প্রস্তাব পাস

স্পেন থেকে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার পর অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে সেখানে মাদ্রিদের সরাসরি শাসন জারির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় সংসদ।

সংসদের উচ্চকক্ষ সিনেটে কাতালোনিয়ার স্বায়ত্তশাসন বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ১৫৫ নম্বর অনুচ্ছেদ পাস হয়ে যাওয়ায় এখন সেখানে সরাসরি সরকার চালাবে মাদ্রিদ।

 

শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) স্থানীয় সময় বিকেলে কাতালান পার্লামেন্টে অঞ্চলের ‘স্বাধীনতা ঘোষণা’র প্রস্তাব পাস হওয়ার ঘণ্টাখানেকেরও কম সময় পর তাদের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের এ প্রস্তাব অনুমোদন করে মাদ্রিদ।

এ বিষয়ে শুক্রবারই প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয়ের নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ আরও দু’টি বৈঠক করবে বলে জানানো হচ্ছে।

সিনেটে এই প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর মাদ্রিদভিত্তিক সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, চলতি সপ্তাহান্তেই (শনি ও রোববার, ২৮ ও ২৯ অক্টোবর) অনুচ্ছেদটি বাস্তবায়নের কার্যক্রম শেষ করবে কেন্দ্রীয় সরকার। অনুমোদিত বিধানে কাতালোনিয়ায় মাদ্রিদের শাসন জারির পাশাপাশি সেখানকার ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতাচ্যুত করার কথা বলা হয়। তবে কাতালোনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে ফেলায় কী উপায়ে এই অনুচ্ছেদ বাস্তবায়ন হবে, সে বিষয়টি স্পষ্ট করছে না কেউ।

গত ১ অক্টোবর গণভোটের পর পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এবং গণভোট ইস্যুতে পরস্পরের স্বাধীনতা ঘোষণা ও স্বায়ত্তশাসন বাতিলের হুমকির ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সিনেটে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী রাজয়। তিনি আবেগপূর্ণ ভাষণে সিনেটরদের উদ্দেশে বলেন, যখন কোনো পথই খোলা থাকে না, তখন সংবিধান সুরক্ষায় কাতালোনিয়ার স্বায়ত্তশাসনই বাতিল করতে হবে। এই পথ সুগম করতে কাতালান প্রেসিডেন্টসহ (কার্লেস পুজদেমন্ত) ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ নেতাদের ক্ষমতা থেকে অপসারণ করতে হবে। সুতরাং সিনেটকে সেরকম পদক্ষেপই অনুমোদন দিতে হবে। কাতালান স্বায়ত্তশাসন বাতিলে সংবিধানের ১৫৫ নম্বর অনুচ্ছেদ বাস্তবায়নই একমাত্র উপায়।

তার ঘণ্টাকয়েক পর কাতালোনিয়ার পার্লামেন্টে পাস হয়ে যায় ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’। প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর কাতালান সরকারের অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে দেওয়া বার্তায় বলা হয়, কাতালোনিয়ার পার্লামেন্ট আইনের শাসনের অধীনে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক ও সামাজিক রাষ্ট্র হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী কাতালোনিয়া গঠন করেছে।

এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী রাজয় স্পেনবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে ‘কাতালোনিয়ায় আইনের শাসন বজায় থাকবে এবং সংবিধান পুনর্প্রতিষ্ঠিত হবে’ বলে ঘোষণা দেন। তার বক্তব্যের পর সিনেটে পাস হয়ে যায় কাতালোনিয়ার স্বায়ত্তশাসন বাতিলের প্রস্তাবটি।

স্পেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী প্রায় ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের কাতালোনিয়ায় রয়েছে ৭৫ লাখ মানুষের বসবাস, যা স্পেনের মোট জনগণের ১৬ শতাংশ। স্পেন থেকে যা রফতানি হয়, তার ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ রফতানি হয় এই অঞ্চল থেকে। স্প্যানিশ জিডিপিতে কাতালোনিয়ার অবদান ১৯ শতাংশ। স্পেনে বিদেশি বিনিয়োগের ২০ দশমিক ৭ শতাংশ যায় এই অঞ্চলে।

নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির কাতালানরা সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ভোগ করলেও সাংবিধানিকভাবে পৃথক রাষ্ট্র হতে চায়। এখানকার আঞ্চলিক সরকার গত প্রায় পাঁচ বছর ধরেই আলাদা রাষ্ট্র গঠনের চাপ হজম করছে জনগণের। ২০১৫ সালের আঞ্চলিক নির্বাচনে স্বাধীনতাকামী দল বিজয়ী হলে এই চাপ আরও স্পষ্ট হয়।

তবে স্বাধীনতার দাবিতে কাতালানরা সরব হওয়ার পর থেকেই বিরোধিতা করে আসছে স্প্যানিশরা। এই বিরোধিতার মধ্যেই ২০১৪ সালে কাতালানরা পরীক্ষামূলক গণভোট করলে তার ফলাফলকে উড়িয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী রাজয়। তিনি সেসময় বৈধ উপায়ে গণভোট আয়োজনের আবদারও না মানার কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত গণভোটের পর দফায় দফায় বাকযুদ্ধ হয় রাজয় ও পুজদেমন্তের মধ্যে। পুজদেমন্ত এক পর্যায়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করেও তা আলোচনার স্বার্থে স্থগিত করলেও রাজয় স্পেনের ঐক্য ও সংবিধান সুমন্নত রাখার স্বার্থে কাতালোনিয়াকে একীভূত রাখতে স্বায়ত্তশাসন বাতিলের কথাই বলেন। দু’পক্ষের অনড় অবস্থান শেষ পর্যন্ত শুক্রবারের এই উত্তেজনায় গড়িয়েছে।

এদিকে, স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষে কাতালান নেতাদের স্বাগত জানাতে রাস্তায় নেমেছে লাখো মানুষ। বার্সেলোনার রাস্তা এখন স্বাধীনতাকামীদের পদভারে মুখরিত। বেশিরভাগ লোকজন অবস্থান নিয়েছে আঞ্চলিক পার্লামেন্টের প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশে।

বাংলাদেশ সময়: ২২২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৭
এইচএ/

**স্পেন থেকে ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ কাতালোনিয়ার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।