বৃহস্পতিবার ইরানের রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে মার্কিনবিরোধী এই প্রতিক্রিয়া প্রচারিত-প্রকাশিত হয়। এদিন ইরানজুড়ে সরকারপন্থিদের বিশাল জমায়েত ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ইরানের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা হিসেবেই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এহেন অপপ্রয়াস সকল আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও শিষ্টাচারের চরম লঙ্ঘন। এই পাঁয়তারার অংশ হিসেবেই মার্কিন প্রশাসন উস্কানিমূলক প্রচারণা চালিয়ে গেছে। আর স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিক বিদ্বেষপূর্ণ টুইটবার্তা দিয়ে গেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরকম টুইটবার্তা একের পর এক দিয়েছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের গোপন মদদ ও উস্কানিতেই ষড়যন্ত্রকারীরা এমন আস্কারা পেয়েছে, দেশজুড়ে সংঘাত সহিংসতার আগুন জ্বালিয়েছে।
উল্লেখ্য, টানা ছয়দিন ধরে ইরানের প্রধান প্রধান শহরগুলোতে চলা বিক্ষোভ সহিংসতায় ২০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বহু লোক আহত ও জখম হয়েছে। সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ সময় স্বাভাবিক জনজীবন ও অর্থনীতির চাকা কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। এর প্রভাব পড়ে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে। ২০০৯ সালের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর দেশটিতে এমন সার্বত্রিক প্রতিবাদ বিক্ষোভ আর হয়নি।
দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও সীমাহীন দুর্নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হলেও পরে দ্রুতই তা সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি, এলিট গোষ্ঠি ও সরকারের অপসারণের দাবিতে পর্যবসিত হয়। অবশ্য পরে প্রশাসনের নজিরবিহীন মারমুখী অবস্থানের কাছে প্রতিবাদকারীরা টিকতে পারেনি। গত দুদিন ধরে ইরানের কোথাও আর বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এ মুহূর্তে সরকার ও সরকারপন্থিরা রাজপথ দখলে নিয়েছে। বৃহস্পতিবার সরকারপন্থিরা দেশজুড়ে ব্যাপক শো-ডাউন করে নিজেদের সক্ষমতার বহির্প্রকাশ ঘটিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইরানের ক্ষোভের কারণ
ইরানের সব ক্ষোভ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর। ট্রাম্প আগে থেকে ইরানবিদ্বেষী এবং একই সঙ্গে মুসলিমবিদ্বেষীও। তাছাড়া সম্প্রতি তিনি জেরুজালেমকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইহুদিরাষ্ট্র ইসরায়েলের অখণ্ড রাজধানী বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বরাবরই ইরানের প্রতি নানা রকম বিষোদগার করে যাচ্ছেন। ট্রম্পের সর্বশেষ ভূমিকাটি ইরানকে সবচেয়ে বেশি ক্ষেপিয়ে তুলেছে।
ইরানে ভয়ানক প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরুর পরপরই ট্রাম্প তড়িঘড়ি করে বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে টুইট বার্তা দিয়ে বসেন। হোয়াইট হাউসও এ বিষয়ে বিবৃতি দেয়। প্রতিবাদ বিক্ষোভ যখন মিইয়ে আসতে শুরু করেছে, তখনই যুক্তরাষ্ট্র ‘প্রতিবাদকারীদের ব্যাপক সহযোগিতা ও সমর্থন দিতে প্রস্তুত’ বলে ট্রাম্প বুধবার নতুন এক টুইট বার্তা দেন। ‘You will see great support from the United States at the appropriate time!’ এই ছিল প্রতিবাদকারীদের আবার নতুন করে উস্কে দেবার জন্য ট্রাম্পের টুইট বার্তা।
অস্থিতিশীলতার সৃষ্টির পাঁয়তারার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি সৌদি আরব ও ইসরায়েলসহ বেশকিছু বিদেশি শক্তিকে দায়ী করছে ইরান।
ইরানি দূতের চিঠি: ‘সব সীমা ছাড়িয়েছে মার্কিনীরা’
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত গোলাম আলি খসরু এ সংক্রান্ত এক পত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে সকল নষ্টের মূল বলে আখ্যায়িত করে বলেন, ইরানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নগ্ন হস্তক্ষেপের দীর্ঘ অতীত রেকর্ড রয়েছে ওয়াশিংটনের।
পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেন, বর্তমান মার্কিন প্রশাসন সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তারা আন্তর্জাতিক রীতিনীতিকে মোটেই তোয়াক্কা করছে না।
রাশিয়াও ইরানের প্রতি সংহতি জানিয়ে বলেছে, ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে নাক গলাচ্ছে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
অভিযোগ্ হাস্যকর: নিক্কি হ্যালি
তবে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত নিক্কি হ্যালি ইরানের অভিযোগকে পুরোপুরি অর্থহীন ও হাস্যকর আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘ইরানের জনগণ মুক্তির জন্য আহাজারি করছে। সবার উচিত তাদের (প্রতিবাদকারীদের) পাশে দাঁড়ানো। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৮
জেএম