আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিতে দেশটির সাংগঠনিক প্রতিনিধি চ্যাঙ উং শনিবার (০৬ জানুয়ারি) বলেছেন, তারা আগামী ০৯ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী দেশের পিয়ংচ্যাঙ গেমসে প্রতিনিধি দল পাঠাতে পারেন। সুইজারল্যান্ড যাওয়ার পথে যাত্রা বিরতিকালে বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংকালে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
আগামী সপ্তাহে অলিম্পিক গেমস্সহ সম্পর্কের নানা বিষয় নিয়ে উত্তর-দক্ষিণ বিরল আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এদিকে সিউল ও ওয়াশিংটন যৌথ সমারিক মহড়াও স্থগিত ঘোষণা করেছে। এসব তথ্য তুলে ধরে জাপানের কাইডো নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, পেনিনসুলা উপদ্বীপ নিয়ে দুই কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা কমানোর ক্ষেত্রে এটি সর্বশেষ অগ্রগতি।
অসমর্থিত সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে কাইডো জানিয়েছে, চ্যাঙ সুইজারল্যান্ডে আইওসি’র বৈঠকে যাচ্ছেন। পিয়ংচ্যাঙ গেমসে গেমসে সম্ভাব্য অংশগ্রহণের বিষয়ে আলোচনার জন্য কমিটির বৈঠকটি হতে পারে।
এদিকে গত শীতকালীন অলিম্পিক গেমসে উত্তর কোরিয়ার অংশগ্রহণের স্মরণে স্ট্যাম্পের একটি সেট পিয়ংইয়াংয়ের দোকানে প্রদর্শিত হচ্ছে।
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং অলিম্পিক গেমসের সাফল্য কামনা করে তার দেশের একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর কথা ভাবছেন বলে জানিয়েছিলেন নববর্ষের ভাষণে। এর প্রেক্ষিতে সিউল দুই দেশের মধ্যে আলোচনার প্রস্তাব দিলে তাতে সম্মত হয়েছে পিয়ংইয়ং। বৈঠকটি দুই দেশের সীমান্তবর্তী পানমুনজম গ্রামে আগামী ০৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে সেখানে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এর আগে বৈঠকের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে দুই বছর বন্ধ থাকার পর গ্রামটিতে থাকা হটলাইন ফের চালু করে উত্তর কোরিয়া। ‘যুদ্ধবিরতির গ্রাম’ বলে পরিচিত পানমুনজমেই এর আগে দুই কোরিয়ার সমস্ত আলোচনাগুলো হয়ে এসেছে। পুনঃস্থাপিত আন্তঃকোরিয়ান যোগাযোগ লাইনটিতে ইতোমধ্যেই আলোচনা করেছেন দুই দেশের শীর্ষ সমারিক কর্মকর্তারা।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরের পরে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের আর কোনো আলোচনা হয়নি।
দক্ষিণ কোরিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অলিম্পিক গেমসে উত্তর কোরিয়ার অ্যাথলেটরা কিভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেন, আলোচনায় সে উপায় খোঁজা হবে। আর এ আলোচনাকে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক থেকে উত্তরণের দ্বার খুলে দিতে পারে বলে মনে করছে দুই দেশই।
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বিষয়টিকে ‘দু’দেশের জনগণের মধ্যে ভাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির বিশাল সুযোগ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। একই কথা বলেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে।
কোরিয়ান যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকেই বিশ্বের সবচেয়ে ভারী সামরিক বাহিনী বলে পরিচিতি পাওয়া কোরিয়া দুই ভাগে আলাদা হয়ে গেছে।
কোরিয়ান উপদ্বীপে উত্তর কোরিয়ার কোমল ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ বন্ধ করা ও অলিম্পিকে অংশগ্রহণে আগ্রহী সিউল ও আয়োজকরা কিমকে তার দেশের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি হ্রাসে রাজি করতে বিশ্বজুড়ে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উত্তর কোরিয়া একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ এবং সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক পরীক্ষা করেছে। ৬ষ্ঠ পরীক্ষাটি ছিল হাইড্রোজেন বোমা নিয়ে, যা জাতিসংঘের প্রস্তাবনার লঙ্ঘন করেছে। প্রস্তাবনাটি এ ধরনের কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করেছে।
এ পরীক্ষা কিম ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে এ অঞ্চলে আরও তীব্র প্রতিযোগিতার আতঙ্ক এবং হতাশা ও অপ্রীতিকর অবস্থা দেখা দিয়েছে।
কিন্তু নতুন বছরের শুরুর দিনগুলো উভয় পক্ষের একটি নরম অবস্থানের সাক্ষী হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া পিয়ংইয়াংয়ের সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে অলিম্পিক পর্যন্ত তাদের যৌথ সামরিক অনুশীলন বিলম্বিত করতে সম্মত হয়েছে। নিয়মিত ওই অনুশীলন আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ানো ছাড়াও বিশেষ করে বেইজিং ও মস্কোর সমালোচনা কুড়িয়েছে।
উত্তর কোরিয়ান খেলোয়াড়দের মধ্যে মাত্র দু’জন অ্যাথলেট রওম টিই-ওকে ও কিম জু-সিক পিয়ংচ্যাঙ গেমসের জন্য যোগ্য। যদিও এ দুই ফিগার স্কেটার তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আনুষ্ঠানিক সময়সীমা মিস করেছেন, তবে এখনও আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির আমন্ত্রণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন তারা।
এ বিষয়ে নিশ্চয়তাও রয়েছে। কেননা, পিয়ংচ্যাঙ গেমসের সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি লি হি-বিওম এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ সংস্থা ইয়োহাপকে উত্তরের সম্ভাব্য অংশগ্রহণের কথা শুনে আনন্দিত প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন।
‘এটি নতুন বছরের একটি উপহারের মতো’- বলেছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৭
এএসআর