আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জনপ্রিয় টেলিভিশন টকশো উপস্থাপিকা অপরাহ উইনফ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন মর্মে খবর প্রকাশ হওয়ার পর হোয়াইট হাউসের তরফ থেকে এই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়।
হোয়াইট হাউস মুখপাত্র হোগ্যান গিডলে এয়ারফোর্স ওয়ান-এর ফ্লাইটে ন্যাশভিল যাবার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘অপরা হোন আর অন্য যে-ই হোন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যিনিই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আসবেন, সে চ্যালেঞ্জকে আমরা স্বাগত জানাই।
আগের দিন রোববার রাতে ৬৩ বছর বয়সী অপরাহ উইনফ্রে বিখ্যাত সেসিল বি ডিমিলে পুরস্কার গ্রহণ করতে গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড শো তে হাজির হন। সেখানে দেওয়া বক্তৃতায় অপরাহ সবাইকে মুগ্ধ-অভিভূত করেন। এক কথায় পুরো অনুষ্ঠানস্থল মাতিয়ে রাখেন অপরাহ। তার ৯ মিনিট স্থায়ী বক্তব্যের সময় উপস্থিত সবাই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে দু’দুবার তাকে মুহুর্মুহু করতালির বন্যায় ভাসান।
এরপর লাখো-কোটি ভক্ত-শুভানুধ্যায়ী তাকে নিয়ে টুইটার মাতিয়ে তোলেন। “Oprahforpresident” এবং “Oprah2020”— হ্যাশট্যাগে প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়াবার জন্য অনুরোধ জানিয়ে করা লাখো টুইটে সয়লাব হয়ে যায় টুইটার।
পরদিন সোমবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বরাত দিয়ে সিএনএন এক রিপোর্টে জানায়, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াবার ব্যাপারে অপরাহ ‘সক্রিয়ভাবে চিন্তা-ভাবনা’ করছেন। তার কয়েকজন আস্থাভাজন সহযোগীও নির্বাচনী দৌড়ে নামার জন্য তাকে উৎসাহিত করে চলেছেন।
এদের একজন অবশ্য বলেন, অপরাহ এখনো নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নেননি।
উল্লেখ্য, এর আগে, ২০১৭ সালের মার্চে ব্লুমবার্গের ডেভিড রুবেনস্টেইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন নির্বাচনে লড়াইয়ে নামার কথা ভাবছেন বলে জানিয়েছিলেন অপরাহ উইনফ্রে।
অপরাহ আসলেই নামবেন কিনা, সে ব্যাপারে সবচে গুরুত্বপূর্ণ আভাসটি দিয়েছেন অপরাহর দীর্ঘদিনের ব্যবসাসঙ্গী ও জীবনসঙ্গী স্টেডম্যান গ্রাহাম। লস এঞ্জেলেস টাইমস তার বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়েছে: ‘সিদ্ধান্ত নেবার ব্যাপার জনগণের...সে অবশ্যই সেটাই করবে (নির্বাচনে দাঁড়াবে)। ’’
উল্লেখ্য, দীর্ঘকাল ধরে অপরাহ ডেমোক্রেটিক দলের জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজ করে আসছেন। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাইমারিতেও বরাবরের মতোই হাজির থেকে সবার নজর কাড়বেন অপরাহ—এমনটাই আশা করছেন সবাই। ।
বোস্টনের নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর অ্যালান শ্রোয়েডার বলেন, নি:সন্দেহে অপরাহ উইনফ্রে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে অনেক বড় এক সেলিব্রেটি। বিশেষ করে শ্রোতাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের বেলায় অপরাহর জুড়ি মেলা ভার। এটা অবশ্যই অপরাহর জন্য এক বড় সুযোগ। এই বিরল যোগ্যতা নিয়ে অপরাহ কি করেন সেটাই দেখার বিষয়। ’’
উল্লেখ্য, রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্পও তার যৎসামান্য টিভি-স্টার ইমেজকে কাজে লাগিয়েছিলেন। এই স্টার ইমেজের সুবাদে খুব কম খরচেই নির্বাচনী প্রচারাভিয়ান চালাতে সক্ষম হয়েছিলেন ট্রাম্প।
প্রাইমারি ও চূড়ান্ত নির্বাচনী প্রচারাভিয়ানে ট্রাম্প-কমিটিকে সব মিলিয়ে ব্যয় করতে হয়েছিল মাত্র ৩৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
অথচ তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে ব্যয় করতে হয়েছিল ৫৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
অপরাহ উইনফ্রে উঠে এসেছেন খুবই দরিদ্র এক পরিবার থেকে। যাকে বলে ‘র্যাগস টু রিচেস’ তার মা-ই অনেক অভাব অনটনের মধ্যে কষ্ট করে তাকে লালন পালন ও বড় করে তোলেন। পরে তিনি নিজ প্রতিভা ও যোগ্যতাবলে দুনিয়াকাঁপানো এক টিভি স্টার এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ধনীদের একজন হয়ে ওঠেন। তার উপস্থাপিত ‘‘দ্য অপরাহ উইনফ্রে শো’’ টানা পঁচিশ বছর দুনিয়াশুদ্ধ মানুষকে মাতিয়ে রাখে। ২০১১ সালে অপরাহ বিখ্যাত এই শোর সমাপ্তি টানেন।
নির্বাচনে দাঁড়ালে মানুষকে মুগ্ধ করার ক্ষমতার পাশাপাশি তার যে গুণটা খুব কাজে লাগবে, তা হচ্ছে তাকে ঘিরে মানুষের অগাধ বিশ্বাস। তার এই বিশ্বাসযোগ্যতা তাকে অনেক দূর এগিয়ে দেবে। এদিকটায় অনায়াসে ট্রাম্পকে ছাড়িয়ে যাবেন তিনি।
মার্কিন রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক পার্টির আগামী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী চূড়ান্ত করার ব্যাপারে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। তবে এখন থেকেই প্রেসিডেন্ট পদে লড়াইয়ে অনেক প্রার্থী মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
***http://www.banglanews24.com/international/news/bd/629407.details
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৮
জেএম