সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, শনিবার সকালে মোবাইল ফোন ব্যববহারকারীরা এই মর্মে একটি বার্তা পান। তাতে বলা হয়, ‘‘হাওয়াইয়ের দিকে আগুয়ান ব্যালিস্টিক মিসাইল থ্রেট (হুমকি)।
এমন একটি গা-হিম করা ভুয়া মিসাইল অ্যালার্ট দেবার পর রাজ্যের গভর্নর ডেভিড ইগে সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেছেন, একজন কর্মচারী ভুলক্রমে ভুল বাটনে চাপ দিয়ে ফেলায় এমন বিপত্তিকর ঘটনা ঘটেছে।
হনলুলু স্টার-অ্যাডভার্টাইজার এক প্রতিবেদনে জানায়, মোবাইল ফোনে ভুয়া মেসেজটি দেওয়া হয় স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৭ মিনিটে (১৮:০৭ জিএমটি)। মোবাইল ফোনে দেয়ার পাশাপাশি বেতার ও টেলিভিশনেও বার্তাটি প্রচার করা হয়েছে দীর্ঘক্ষণ। ভুলটি সংশোধন করে লোকজনকে ইমেইল করে জানাতে ১৮ মিনিট লেগে যায়। আরও অবাক করা ব্যাপার ছিল, মোবাইল ফোনে ফলস অ্যালার্ট দেয়া হলেও সংশোধনবার্তা প্রথমে মোবাইল ফোনে না পাঠিয়ে পাঠানো হয় ইমেইলে। তা-ও ১৮ মিনিট পর। আর মোবাইল ফোনে সংশোধনবার্তা পাঠাতে কর্তৃপক্ষ সময় নেয় ৩৮ মিনিট।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে এমন অব্যবস্থাপনা বিস্ময়কর।
এ ব্যাপারে দেওয়া এক ব্যাখ্যায় গভর্নর ইগে বলেন, এই মানবিক ভুলটি ঘটেছে রাজ্যের মিসাইল সতর্কীকরণ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির(ইএমএ)ডিউটি শিফট বদলের সময়। সেখানে ২৪ ঘণ্টায় তিনটি শিফটে কাজ করেন কর্মীরা। তখন একজন কর্মী ভুল বাটনে চাপ দিয়ে বসেন। তিনি এজন্য ইএমএ’কে দায়ী করেছেন।
আর ইএমএর প্রশাসক ভার্ন মিয়াগি এ ব্যাপারে তার সংস্থার পক্ষ থেকে দু:খ প্রকাশ করে বলেন, এটি ছিল অনিচ্ছাকৃত এক মানবিক ভুল। তবে এমন ভয়ানক ভুল হওয়া মোটেই উচিত হয়নি।
নিজেদের ভুল বোঝার পর সংস্থাটির পক্ষ থেকে বহু পরে একটি সংশোধন দিয়ে বলা হয়, ‘কোনো মিসাইল হুমকি নেই (Hawaii EMA
NO missile threat to Hawaii.
12:20 AM - Jan 14, 2018 · Honolulu, HI)।
কিন্তু গভর্নর অফিস আর ইএমএ—এই দুই অফিসের সমন্বয়হীনতার কারণে দীর্ঘ সময়জুড়ে হাওয়াইয়ের মানুষকে কাটাতে হয়ে বিভীষিকাময় চরম এক আতঙ্কের মধ্যে। ভুয়া বার্তা পাবার পরপরই বেতারকেন্দ্র ও টিভি চ্যানেলগুলো নিজেদের নিয়মিত অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে রেকর্ড করা বার্তাটি ঘনঘন প্রচার করে যেতে থাকে। সেখানে বারবার বলা হচ্ছিল, কেউ যেন ঘরে বাইরে বের না হয়। সবাই যেন দরজা ও জানালা থেকে দূরে থাকে। বসে বা দাঁড়িয়ে না থেকে মেঝেতে শুয়ে থাকার পরামর্শও দেয়া হচ্ছিল বারবার।
সবচে আতঙ্কের দুটি বাক্য ছিল, ‘‘হুমকি শেষ হলে আমরা তা জানিয়ে দেব। এটা কোনো মহড়া নয়!’’
হাওয়াই থেকে নির্বাচিত মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য ম্যাট লোপরেস্তি তখন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে হাওয়াইতেই অবস্থান করছিলেন।
তিনি জানান, ভুয়া বার্তাটি পাবার পর আতঙ্কিত হয়ে তারা সবাই বাথরুমে ছুটে গিয়ে বাথটাবে আশ্রয় নেন। সবাই মিলে বারবার ঈশ্বরের করুণা ভিক্ষা করছিলেন।
হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়, এই ভুয়া বার্তাটি যখন প্রচার করা হয়, তখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছিলেন ফ্লোরিডাতে। তাকেও তৎক্ষণাৎ এ বিষয়ে ব্রিফ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে হাওয়াই বৈরী রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার দূরপাল্লার পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের সবচে নাগালের মধ্যে। এ কারণে হাওয়াইতে একটি মিসাইল অ্যালার্ট কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়:১২৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৮/ আপডেট১৪০৮ ঘণ্টা
জেএম