প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রোববার (১৪ জানুয়ারি) দেয়া একট টুইটে এই মনোভা ব্যক্ত করেন। সেখানে তিনি তার ‘সবার আগে আমেরিকা’("America First") নীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বাছবিচারহীন ‘ডিভি লটারি’র মাধ্যমে কেউ আর যুক্তরাষ্টে অভিবাসী হয়ে আসতে পারবে না।
এজন্য রোববার ‘মেধাভিত্তিক অভিবাসন নীতি’ প্রণয়ন করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হিসেবে কেবল সেইসব লোকদেরই চান যারা আমেরিকাকে ‘আবারও শক্তিশালী ও মহান’ করে তুলতে সহায়ক হবে।
রোববার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একাধিক টুইট বার্তা পোস্ট করেন। এসবের একটি হুবহু তুলে দেয়া হলো:
"I, as President, want people coming into our Country who are going to help us become strong and great again, people coming in through a system based on MERIT. No more Lotteries! #AMERICA FIRST,"
‘মেধাভিত্তিক অভিবাসন ব্যবস্থা’ হলে যুক্তরাষ্ট্রে কেবল সেইসব লোকেরাই প্রবেশ করতে পারবে, যারা মেধাবী এবং যাদের ‘চমৎকার অতীত রেকর্ড’ রয়েছে।
এছাড়া তিনি বলেন, তার কাছে সবার আগে মুখ্য বিষয় হচ্ছে আমেরিকানদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মাদকের ব্যাপক প্রবেশে ইতি টানা।
ট্রাম্প যে মেধাভিত্তিক অভিবাসন ব্যবস্থার কথা বলছেন তাতে করে যুক্তরাষ্ট্রে মোট অভিবাসীর হার কমবে। এর ফলে ভারতের মতো দেশগুলো বড় ধরনের সুফল ভোগ করবে।
ট্রাম্পের নতুন এই অভিবাসন নীতি বাস্তবায়িত হলে বিশ্বের বহু দেশের কোটি কোটি অভিবাসনপ্রত্যাশীর স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাবে। কয়েক দশক ধরে চলা ডাইভারসিটি লটারির ভিসা পদ্ধতির মাধ্যমে গ্রিন কার্ড পাওয়ার পথও চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। বিভিন্ন দেশের মানুষ নিজেদের মেধাগত যোগ্যতা ছাড়া অন্য কোনো উপযুক্ত কারণ দেখিয়েও আর যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হতে পারবে না। স্বল্প সংখ্যক বাছাই করা মেধাবীর বাইরে আর সবাই থেকে যাবে বঞ্চিত।
অন্য একটি টুইটে ট্রাম্প যা বলেছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ করাদের জন্য তা রীতিমতো বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। তিনি বলেছেন, অবৈধদের মধ্যে যারা শিশু হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছিল, তাদের বিষয়টির সুরাহা করার জন্য ডেমোক্রেটরা ‘DACA’ (Deferred Action on Childhood Arrivals program)নামের যে সমঝোতা চুক্তির ব্যবস্থা করেছিল, সেটিকেও ট্রাম্প ‘সম্ভবত মৃত’ বলে উল্লেখ করেন টুইটে।
টুইটে তিনি বলেন, এদের জন্য ডেমোক্রেটদের এই দরদ আসলে লোক দেখানো। তারা আসলে এটা (‘DACA’) অন্তর থেকে চায় না। তারা কেবল এসব নিয়ে বকবক করে আর মিলিটারির জন্য বরাদ্দ করা অর্থ অন্যখাতে নিয়ে যেতে যায়।
DACA নামের এই মানবিক ব্যবস্থাটি চালু করা হয়েছিল ২০১২ সালে, ট্রাম্পের পূর্বসুরী প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামার সময়ে। যেসব শিশু তাদের বাবা-মা বা অভিভাবকদের সঙ্গে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিল, তাদেরকে কোনোমতেই যাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো না হয় এই সুরক্ষা দিয়ে আসছে DACA। কিন্তু ট্রাম্প DACA-কে ‘সম্ভবত মৃত’ ঘোষণার মধ্যে এসব ‘শিশুকে’ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়ার পাঁয়তারারই ইঙ্গিত দিলেন।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরেও ট্রাম্প একবার বলেছিলেন, তিনি এই ব্যবস্থাটি রহিত করে দেবেন। অবশ্য এজন্য তিনি এজন্য সিদ্ধান্ত নেবার জন্য কংগ্রেসকে আগামী মার্চ পর্যন্ত ৬ মাসের সময়সীমা বেঁধে দেন। এরপরই তিনি ব্যবস্থাটি চিরতরে উঠিয়ে দেবেন।
এমনটি হলে অসংখ্য মানুষকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে। ছাড়তে হবে সেখানকার চাকরি, বাসস্থানসহ দীর্ঘদিনের গোছানো জীবন। তাদের ফিরে যেতে হবে পূর্ব পুরুষের দেশে। যেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করবে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।
বাংলাদেশ সময়:১৪৩০ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৮
জেএম