পাকিস্তানের আইনসভার উচ্চকক্ষ সিনেট সোমবার মান্দারিনকে পাকিস্তানের অফিসিয়াল ভাষা করার একটি প্রস্তাবকে অনুমোদন দিয়েছে বলে কয়েকটি পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যম জানায়।
‘আব তক নিউজ’ নামের একটি সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, মান্দারিনকে পাকিস্তানের অফিসিয়াল ভাষার মর্যাদা দেবার মূল কারণ হচ্ছে পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের বহুমুখী সম্পর্ক।
দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক, বিশেষত অর্থনৈতিক সম্পর্ক, ক্রমশ আরো জোরদার হচ্ছে। চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর তৈরি হচ্ছে। চীনের বহুমুখী প্রকল্পসমূহের অংশীদার হচ্ছে পাকিস্তান। পাকিস্তানে চীনা বিনিয়োগ ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম। বিনিয়োগ আরও বাড়বে। এসব অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে ঘিরে চীনাদের সঙ্গে পাকিস্তানের মানুষের যোগাযোগ, আদানপ্রদানও বাড়ছে। এই কানেকটিভিটির কারণে মান্দারিনকে পাকিস্তানের অফিসিয়াল ভাষা করা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।
মান্দারিনের মতো একটি বিদেশি ভাষাকে পাকিস্তানের অফিসিয়াল ভাষার মর্যাদা দেবার এই উদ্যোগ বাস্তবসম্মত হলেও ন্যায়সঙ্গত হয়নি মোটেই। কেননা পাকিস্তানের মানুষের একটি বড় অংশের এবং পাঞ্জাব প্রদেশের মানুষের ভাষা পাঞ্জাবিকে কিন্তু অফিসিয়াল ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়নি। তেমনি পশতুসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মায়ের ভাষা অফিসিয়াল ভাষার মর্যাদা পায়নি আজও।
অথচ গত ৭০ বছরে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠি এ পর্যন্ত যে কয়টি ভাষাকে অফিসিয়াল ভাষার মর্যাদা দিয়েছে সেগুলোর মধ্যে উর্দু ছাড়া সব ক'টিই বিদেশি ভাষা। ভাষাগুলো হচ্ছে ইংরেজি, আরবি এবং সবশেষে চীনাদের ভাষা মান্দারিন।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হুসাইন হাক্কানি এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে একটি টুইটবার্তা দিয়েছেন। তাতে তিনি দেশের মানুষের মায়ের ভাষাগুলোকে উপেক্ষা করে একাধিক বিদেশি ভাষাকে অফিসিয়াল ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। তার কথা যথার্থ।
এদিকে ডন নিউজ জানিয়েছে, আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে পাকিস্তানিরা এখন চীনাদের ভাষা শেখার ব্যাপারে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কারণ তারা বুঝতে পারছে হাওয়া ও স্রোত কোনদিকে বইছে। তারা জানে, মান্দারিন শিখলে চীনে এবং পাকিস্তানে চাকুরির সুযোগ বেড়ে যাবে।
আশ্চর্যের ব্যাপার এটাই যে, পাকিস্তানের চারটি অফিসিয়াল ভাষার মধ্যে তিনটিই বিদেশি ভাষা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮
জেএম