শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, সেনাপ্রধানের এমন ‘রাজনৈতিক’ মন্তব্যে সমালোচনামুখর ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআইএম) এবং অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমইএম)। তবে মন্তব্য করতে শোনা যায়নি প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসকে।
যদিও ক্ষমতাসীন বিজেপির মুখপাত্র সমবিত পত্র রীতিমতো জেনারেল বিপিন রাওয়াতের বক্তব্যের পক্ষে সাফাই গাইলেন। তিনি বললেন, ‘এ বক্তব্যের জন্য তাকে (জেনারেল বিপিন রাওয়াত) স্যালুট দেওয়া উচিত। ’
সম্প্রতি উত্তর-পূর্ব ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেন, চীনের সহযোগিতায় পাকিস্তানের পরিকল্পনায় উত্তর-পূর্ব ভারতে ‘বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ’ ঘটানো হচ্ছে। ওই অঞ্চলের পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে এ কাজ করছে পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটি।
আরও পড়ুন>>
** সেনাপ্রধানের বক্তব্য এড়িয়ে গেলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী
এরপর থেকেই সেনাপ্রধানের ওই বক্তব্যের সমালোচনা শুরু হয়। দিল্লিভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের সিনিয়র ফেলো শ্রীনাথ রাগবান বলেন, ‘তার প্রত্যেকটি কথায় প্রশ্ন তোলা যায়। ’
তিনি উল্লেখ করেছেন, ১৯ শতকের পর থেকে বাংলার পূর্বাংশের জনগণের অভিবাসন হয়েছে। পাকিস্তান ও চীনের দ্বারা ‘পরিকল্পিত অভিবাসন’ হয়েছে-বিষয়টি বললে অতিকথা এবং অদ্ভূত মনে হতে পারে।
রাগবান বলেন, এ ধরনের পর্যবেক্ষণ চীন ও বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক তিক্ততা সৃষ্টি করতে পারে।
আসামে মুসলিম ভিত্তিক দল অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের (এআইইউডিএফ) উত্থান নিয়েও কথা বলেন জেনারেল রাওয়াত। ওই রাজ্যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাগুলোর কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধানের এ বক্তব্যে সরাসরি সেখানকার নাগরিকরা ভুক্তভোগী হবেন। বিশেষ করে ভারতীয় জাতীয় নিবন্ধনে নাম পড়া জনগোষ্ঠী।
তার ভাষ্যমতে, ‘অবশ্যই, সেনাপ্রধানের এ বক্তব্য অসচেতনভাবে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ছিল না। ’
তিনি বলেন, সেনাপ্রধানের মনে রাখা উচিত তার বক্তব্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাব ফেলবে। কথা হবে পররাষ্ট্রনীতি নিয়েও।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অনারারি ফেলো মনোজ যোশী বলেন, জেনারেল রাওয়াতের বক্তব্য ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’।
২০০৫ সালে গঠিত আসামের রাজনৈতিক দল এআইইউডিএফ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে দলের প্রধান বদরুদ্দিন আজমল বলেন, ‘জেনারেল বিপিন রাওয়াত রাজনৈতিক মন্তব্য করেছেন। যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ’
এদিকে সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে দেশটির জনপ্রিয় পত্রিকা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, টাইমস অব ইন্ডিয়াও সমালোচনামূলক নিবন্ধ ছেপেছে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, ভারতীয় গণতন্ত্রের চরিত্রের জন্য সেনা ও তার প্রধানের অগণতান্ত্রিক প্রকৃতি অপরিহার্য এবং বেসামরিক ও সামরিক সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
‘একেবারেই অপ্রয়োজনীয়’ হিসেবে উল্লেখ করে টাইমস অব ইন্ডিয়া তাদের সম্পাদকীয় নিবন্ধ ছেপেছে। পত্রিকাটি বলছে, ‘রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ তার কাজের অংশ নয়, যে কোনো মূল্যে এটা তার এড়িয়ে যাওয়া দরকার। ’
তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সিতারমন।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৮
এমএ/