ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানি সিনেটে হিন্দু নারী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৮
ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানি সিনেটে হিন্দু নারী দলিত শিশুদের সান্নিধ্যে তাদের 'আপনা লোগ' কৃষ্ণা কুমারী কুলহি। ছবি-সংগৃহীত

কোনো হিন্দু নারীর, বিশেষত কোনো নিম্নবর্ণের দলিত নারীর, পাকিস্তানের সিনেট সদস্য হবার মতো ঘটনা আগে আর কখনো ঘটেনি। কিন্তু দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসে এবার সেই নজির সৃষ্টি করলেন কৃষ্ণা কুমারী কুলহি।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলো পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ‘ডন’-র একটি রিপোর্টের বরাত দিয়ে রোববার দিয়েছে এই যুগান্তকারী খবর।

খবরে বলা হয়, সিন্ধু প্রদেশের বাসিন্দা ৩৯ বছর বয়সী মিস কুলহি পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সদস্য।

সিনেটে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত হন তিনি।   

সিনেটে তার নির্বাচিত হওয়াটা পাকিস্তানে নারীদের, বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দু ও দলিত নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় এক মাইলফলক। পাকিস্তানের জন্মের পর আজ পর্যন্ত এমন ঘটনা এটাই প্রথম।  

এর আগে রত্না ভগবান দাস চাওলা নামের পিপিপির সদস্য আরেক হিন্দু নারী সিনেট সদস্য হয়েছিলেন।

মিস কৃষ্ণা কুমারী কুলহি খুবই হতদরিদ্র এক দলিত পরিবারের সন্তান। সিন্ধু প্রদেশের থর জেলার নাগরপারকার নামের এক অজ পাড়াগাঁয় জন্ম নেয়া কুলহির জীবনকাহিনী সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। তার গোটা পরিবারকে জমিদারদের অমানবিক নিষ্পেষনের শিকার হতে হয়েছে। বলা যায়, গোটা পরিবারটাই ছিল ভূস্বামী মালিকের দাস।

কৃষ্ণা কুমারী কুলহির জন্ম ১৯৭৯ সালে, হতদরিদ্র কৃষক জুগনো কুলহির ঘরে। উমেরকোট জেলার ভূস্বামী কুনরির ব্যক্তিগত জেলখানায় তাদের গোটা পরিবারকে টানা তিনবছর বন্দিজীবন কাটাতে হয়। অর্থাৎ তাদের গোটা পরিবারটাই ছিল শ্রমদাস বা কেনা গোলাম।

যখন তিনি তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী তখন তাকেও দাসী হিসেবে আটকে রাখেন ওই ভূস্বামী। ১৬ বছর বয়সে ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী থাকাকালে তার বিয়ে হয়ে যায় লালচান্দ নামের এক লোকের সঙ্গে।

কিন্তু জীবনের এসব ভয়াবহতা ও বিরূপতার কাছে হার মানার পাত্রী ছিলেন না কৃষ্ণা কুমারী কুলহি। তিনি শত বাধা, শত নিপীড়ন আর শত হাহাকারের মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকেন। ২০১৩ সালে সিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিদ্যায় কৃতিত্বের সঙ্গে মাস্টার্স করেন।    

এরপর তিনি ও তার ভাই সোশাল অ্যাকটিভিস্ট হিসেবে পিপিপিতে যোগ দেন। এক পর্যায়ে তার ভাই বেরানো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আর কৃষ্ণা কুলহি নেমে পড়েন সমাজের সবচেয়ে বঞ্চিত জনগোষ্ঠি দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার আদায়ের কঠিন সংগ্রামে। তিনি তাদের অধিকার সচেতন করতে থাকেন, সংগঠিত করতে থাকেন। থর জেলা ও আশপাশের জেলায় তার সুনাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তিনি হয়ে ওঠেন দলিত, দরিদ্র, ভাগ্যাহত মানুষের বন্ধু, পথপ্রদর্শক আর ‘আপনা লোগ’ (আপনজন)।

মানুষ তার ত্যাগ ও ভালোবাসার প্রতিদানও দিয়েছে তাকে নেত্রীর আসনে বসিয়ে।

কুলহিদের পরিবার হতদরিদ্র আর দলিত হলেও ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে তাদের পরিবারের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। কৃষ্ণা কুমারী কুলহির পূর্বপুরুষ রূপলো কুলহি ছিলেন একজন অকুতোভয় স্বাধীনতা-সংগ্রামী। ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশ বাহিনী যখন নাগরপারকারের দিক থেকে সিন্ধুর ওপর হামলা চালায় তখন রূপলো কুলহিরা প্রবল প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করেন। কিন্তু এক পর্যায়ে ব্রিটিশরা তাকে বন্দি করে এবং ১৮৫৮ সালে ২২ আগস্ট ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৮

জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।