‘সর্বাগ্রে আমেরিকা’ নীতির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী মানসিকতা থেকেই তার প্রশাসন এই আইনে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছে সেখানকার সংবাদমাধ্যম। এ নিয়ে এখন আমেরিকান সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই চলছে তুমুল আলোচনা।
সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, প্রস্তাবিত নতুন আইনে কোনো বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আবেদন করতে গেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ব্যবহৃত অ্যাকাউন্টের নাম ও এসব ব্যবহারের অন্তত শেষ পাঁচ বছরের ইতিবৃত্ত থাকতে হবে। এসব মাধ্যমের মধ্যে রয়েছে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ অন্যান্য প্লাটফর্ম। বরাবরের মতো লাগবে ইমেইল অ্যাড্রেস, ফোন নম্বর ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণের যাবতীয় তথ্য।
আমেরিকার একটি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী ও পর্যটক প্রবেশের প্রক্রিয়াকে ‘কঠোরতর’ করার জন্য ট্রাম্পের অব্যাহত প্রচেষ্টার বড় ধরনের পদক্ষেপ এটি।
এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তাব জমা দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর মনে করছে, বছরে যে ১৪.৭১ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৪৭ লাখেরও বেশি বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে আবেদন করে, আইনটি কার্যকর হলে তারা এর আওতায় আসবে, যেখানে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও পর্যটকরাও থাকবেন। কূটনীতিক ও সরকারি ভিসা আবেদনকারীরা এর বাইরে থাকবেন।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র দফতরের কনস্যুলার অ্যাফেয়ার্সের মুখপাত্র ভার্জিনিয়া ইলিয়ট বলেন, যেকোনো ধরনের হুমকি ঠেকানোর জন্য ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে সবকিছু সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে যাচাই করে দেখাটা প্রশংসনীয় কৌশল। ভিসা আবেদনকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত এসব অতিরিক্ত তথ্য প্রক্রিয়ায় সূক্ষ্মভাবে নিরীক্ষা এবং আবেদনকারীদের পরিচয় নিশ্চিতের সুযোগ বাড়াবে।
গত মাসে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা মার্কিন দূতাবাসগুলোকে বলা হয়, যদি ভিসা প্রক্রিয়ায় জড়িত কনস্যুলাররা কোনো আবেদনকারীর বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন, তবে তিনি যেন প্রয়োজনীয় বাড়তি তথ্য চান। তার ধারাবাহিকতায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ইতিবৃত্ত সংযুক্তির আইনের প্রস্তাব জমা দেওয়ার খবর এলো।
প্রস্তাবিত নতুন আইন অনুযায়ী, ভিসা আবেদনকারীর আগেকার পাসপোর্ট নম্বর, পরিবারের সদস্যদের বিস্তারিত তথ্য, আবেদনকারীর আন্তর্জাতিক ভ্রমণ-আবাসনসহ ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের সবশেষ ১৫ বছরের যাবতীয় তথ্যও লাগবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ও পরে ‘সর্বাগ্রে আমেরিকা’ নীতি দেখিয়ে আসছেন। গত বছরের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি সেই চিন্তা থেকে অভিবাসী ও শরণার্থী ঠেকাতে বেশ কিছু পদক্ষেপও নেন। ‘উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে মিশর, ইরান, ইরাক, লিবিয়া, মালি, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, সুদান, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেন ক্ষমতা নেওয়ার বছরেই। অবশ্য সমালোচনার প্রেক্ষিতে চলতি বছরের জানুয়ারি সে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও কঠোর যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ঘোষণা দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। প্রস্তাবিত আইন সেই কঠোরতাই নিয়ে আসছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৮/আপডেট ১৭৩৬ ঘণ্টা
এইচএ/