সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া ড. শোয়েব সুডল কমিশনের সপ্তম প্রতিবেদনে পাকিস্তানে হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র স্থানগুলোর একটি হতাশাজনক ছবি তুলে ধরা হয়েছে।
৫ ফেব্রুয়ারি শীর্ষ আদালতে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে আফসোস করে বলা হয়েছে, ইভাকিউয়ি ট্রাস্ট প্রপার্টি বোর্ড (ইটিপিবি) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রাচীন ও পবিত্র স্থানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
কমিশন ৬ জানুয়ারি চাকওয়ালের কাটাস রাজ মন্দির এবং ৭ জানুয়ারি মুলতানের প্রহ্লাদ মন্দির পরিদর্শন করে। প্রতিবেদনে পাকিস্তানে হিন্দুদের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় চারটি উপাসনালয়ের মধ্যে দুটি ক্ষয় এবং বিলুপ্তির একটি সাধারণ চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রতিবেদনের সঙ্গে সেগুলোর ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে।
এক সদস্যের কমিশন গঠন করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু এর তিনজন সহায়ক সদস্য আছে। তারা হলেন এমএনএ ড. রমেশ ভাঙ্কওয়ানি, সাকিব জিলানি এবং পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল, যিনি কমিশনের তথ্য অনুসন্ধান কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে মনোনীত করেছেন।
প্রতিবেদনে টেরি মন্দির/সমাধি পুনর্নির্মাণের জন্য খাইবার পাখতুনখোয়া সরকারের সাথে সমন্বয় করতে ইটিপিবিকে নির্দেশনা দিতে সুপ্রিম কোর্টকে অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে টেরি মন্দির (কারাক), কাটাস রাজ মন্দির (চাকওয়াল), প্রহ্লাদ মন্দির (মুলতান) এবং হিংলাজ মন্দির (লাসবেলা) সংস্কারে যৌথ প্রচেষ্টার সুপারিশ করা হয়েছে। হিন্দু ও শিখদের পবিত্র স্থানগুলির পুনর্বাসনের জন্য একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের জন্য ইটিপিবি আইনের একটি সংশোধনীরও সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট ইটিপিবিকে নির্দেশ দিয়েছে পাকিস্তানের সব মন্দির, গুরুদুয়ারা এবং অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনার বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে।
কমিশন ১২ জানুয়ারি ইটিপিবির কাছে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে আবেদন করে যাতে পরবর্তী শুনানির তারিখের আগে মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া যায়। ২১ জানুয়ারি এ বিষয়ে একটি স্মারক জারি করা হয়, কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
অবশেষে ইটিপিবি ২৫ জানুয়ারি সাড়া দেয়। কিন্তু বিস্তারিত তথ্য এড়িয়ে যাওয়ার জন্য কমিশনের বিন্যাস উপেক্ষা করা হয়।
ইটিপিবির চিঠি অনুসারে, ৩৬৫টি মন্দিরের মধ্যে মাত্র ১৩টি তাদের অধীনে পরিচালিত হয়। ৬৫টি স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২৮৭টি মন্দির কার্যত ভূমি মাফিয়াদের দখলে।
ইটিপিবি বলেছে, প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং তারা মোট ৪৭০টির মধ্যে ৩১টি উপাসনাস্থল পরিচালনা করছে।
কমিশন ইটিপিবির প্রতিক্রিয়া নিয়ে আপত্তি তুলে বলেছে, হিন্দু ও শিখ জনসংখ্যার অভাবে কিছু মন্দির ও গুরুদুয়ারা অকার্যকর হয়ে আছে। আবার যেখানে কোনো হিন্দু বসতি নেই সেখানে কিছু মন্দির সক্রিয় আছে। যেমন- বেলুচিস্তানের হিংলাজ মাতা মন্দির এবং কেপি-এর কারাক জেলার টেরিতে শ্রী পরম হংস জি মহারাজ মন্দির/সমাধি...
টেরিতে মন্দির ও সমাধি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশ বিভাগের পর হিন্দুরা ভারতে চলে গেলে স্থানীয়রা অবৈধভাবে মন্দিরের সম্পত্তি দখলে নেয়। ইটিপিবি এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা রাখেনি।
এরপর বিভিন্ন সময় ইটিপিবি মন্দির সম্পত্তি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়।
২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর পরই বোর্ড অবৈধ দখলদারের কাছ থেকে দখল পায়, কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের সক্রিয় সমর্থন ছাড়া তারা কিছু করতে পারেনি।
যাইহোক, হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে মাত্র ১৬০৪ বর্গ ফুট এলাকা হস্তান্তর করার পর নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এমনকি আদালতের নির্দেশ থাকলেও ইটিপিবি মাসের পর মাস কোনো সাড়া দেয়নি।
কমিশন জানিয়েছে যে কেপি সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ২মিলিয়ন রুপি বিয়োগ করার পর ইটিপিবি এখনো ৩৮ মিলিয়ন রুপি সংস্কার ব্যয় পরিশোধ করতে পারেনি।
প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, ইটিপিবি শুধু অভিবাসী সংখ্যালঘুদের মূল্যবান সম্পত্তি দখল করতে আগ্রহী। এমনকি ৭৩ বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শত শত প্রতিষ্ঠানের যৌথ সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে ইটিপিবি। সূত্র: ডন
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২১
নিউজ ডেস্ক