উইগুরদের ‘পুনঃশিক্ষা’ দেওয়ার নামে যেসব ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে, সেখানে ভয়ঙ্কর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন সেখানকারই এক সাবেক শিক্ষিকা, যাকে ক্যাম্পের বন্দিদের মান্দারিন ভাষা শেখাতে বাধ্য করা হয়েছিল।
সম্প্রতি সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কেলবিনুর সিদ্দিক নামের ওই শিক্ষিকা জিনজিয়াংয়ে উইগুর বন্দি শিবিরের গা শিউরে ওঠা অত্যাচারের বর্ণনা দেন।
তিনি বলেন, বন্দি শিবিরে উচ্চস্বরে কাঁদতে থাকা নারী পুরুষদের মান্দারিন ভাষা শেখানোর জন্য আমাকে বাধ্য করা হয়।
তিনি জানান, ২০১৬ সালে সেবাগ জেলা শিক্ষা ব্যুরোর একটি সভায় তাকে তলব করা হয় এবং বলা হয়, নিরক্ষর শিশুদের নিয়ে তাকে কাজ করতে হবে। এরপর ২০১৭ সাল থেকে তিনি নিয়মিত সরকার পরিচালিত দুটি বন্দি শিবিরে শিকলবন্দ ছাত্রদের মান্দারিন ভাষা শেখানো শুরু করেন।
কেলবিনুর সিদ্দিক একজন উজবেক। তিনি জিনজিয়াংয়ে বেড়ে ওঠেন। ২৮ বছর তিনি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন।
সাক্ষাৎকারে তিনি সিএনএনকে বলেন, বন্দি হিসেবে যাদের ক্যাম্পে আনা হতো তারা দ্রুত অসুস্থ এবং দুর্বল হয়ে পড়তো। তিনি বেজমেন্টে ক্লাস নিতেন আর নিয়মিত ওপরে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনতেন। পাহারারত পুলিশকে জিজ্ঞাসা করে তিনি জেনেছেন, ওিইসব চিৎকার আসলে বন্দিদের আর্তনাদ।
তিনি বলেন, আমি ভয়াবহ বিয়োগান্তক ঘটনার সাক্ষী ছিলাম।
তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পের এক নারী পুলিশ কর্মকর্তা তাকে বলেন যে তিনি কয়েদিদের ধর্ষণের রিপোর্টের তদন্ত করছেন। ওই একই পুলিশ কর্মী বলেন, তার পুরুষ সহকর্মীরা মাতাল হওয়ার পর বলতে থাকে তারা কে কীভাবে মেয়েদের ধর্ষণ ও নির্যাতন করে।
উইগুর ক্যাম্প থেকে ছাড়া পাওয়া বন্দিদের বর্ণনার সঙ্গে সিদ্দিকের বর্ণনার মিল পাওযা গেছে।
এর আগে সিএনএনের একই প্রতিবেদনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তুরসুনাই জিয়াউদুন বলেন, ২০১৮ সালের মার্চ মাসে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং জিনজিয়াংয়ের গুলজা শহরের ঠিক বাইরে একটি কেন্দ্রে রাখা হয়। তখন তিনি কোনো অপরাধ করেননি।
তিনি ক্যাম্পে একাধিক গণধর্ষণের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে বলেন, আমি একটি মেয়েকে অন্য রুমে কাঁদতে এবং চিৎকার করতে শুনি। পাঁচ-ছয়জন লোককে ওই রুমে ঢুকতে দেখি। ভেবেছিলাম মেয়েটিকে তারা অত্যাচার করছে। কিন্তু এরপর যখন তারা আমাকে গণধর্ষণ করলো, তখন আমি বুঝতে পারলাম তারা ওই মেয়েটির সঙ্গে কী করেছিল।
২০২০ সালে তাকে চিকিৎসার জন্য সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর মিস জিয়াউদুন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতর থেকে সম্প্রচারকারী সংস্থার সাথে কথা বলেন। তিনি জানান, চীনা কর্তৃপক্ষের কঠোর আদেশে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি কাজাকস্তানে ফিরে আসেন।
তিনি জানান, ডাক্তাররা তার জরায়ু সরিয়ে ফেলেছে। সিএনএনের দেখা মেডিক্যাল রেকর্ডে দেখা যাচ্ছে, তার পেলভিক পেট এবং যোনিতে রক্তপাত হয়েছে। তিনি এখন যক্ষ্মায় ভুগছেন। তার এমন পরিনতির জন্য তিনি ক্যাম্পের চিকিৎসাকে দায়ী করেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন থেকেই বলছে, উইগুরদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালাচ্ছে চীন, যা গণহত্যার সামিল।
যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা উইগুরদের ওপর চীনের আচরণকে ‘গণহত্যা’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।
কিন্তু চীনা সরকার ক্রমাগত সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১
নিউজ ডেস্ক