বছরব্যাপী করোনা যুদ্ধ কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে বিশ্ব। তবে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির বিপদ এখনও কাটেনি।
বিশ্বের অনেক দেশই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে। এবার আসছে তৃতীয় ঢেউও। পাকিস্তানে করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে চলেছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশটিতে এক ধাক্কায় ফের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে করোনা-বিধির কড়াকড়ি শিথিল হওয়ার পর থেকেই বাড়ছে সমস্যা। গত সোমবার (১ মার্চ) পাকিস্তানে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৭৬ জন।
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের হাতেই পৌঁছেছে করোনা টিকা। চীনের করোনা টিকা নিয়েছে পাকিস্তান। তবে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের হাতে টিকা থাকলেও সেই করোনা টিকা নিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন অধিকাংশ পাকিস্তানি নাগরিক। করোনা টিকা নিতে অনিচ্ছুক হওয়ার সেই তালিকায় নাম রয়েছে বহু স্বাস্থ্যকর্মীরও।
অন্যদিকে লকডাউন তুলে নিয়ে স্কুল-কলেজ-অফিস-আদালত খুলে দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক জনাসমাগম হচ্ছে। সব মিলিয়ে করোনা সংক্রমণের জন্য ফের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পাকিস্তানে।
এতদিন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে ছাড় না থাকলেও সেই অনুমতিও ১৫ মার্চ থেকে দিচ্ছে ইমরান প্রশাসন। এর ফলে ফের সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে পাকিস্তানে।
পাকিস্তানে এ পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৮২ হাজার ৫২৮ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ১২ হাজার ৯৩৮ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪০৬ জন।
পাকিস্তান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (পিএমএ) সেক্রেটারি জেনারেল ডা. কায়সার সাজ্জাদ বলেন, আমরা এমন একটি সমাজে বাস করছি যেখানে লোকেরা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে না। এমনকি যারা মাস্ক পরে তাদের নিয়ে তারা হাসাহাসি করে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার ফল পর্যবেক্ষণ করেছি, তখন প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ সংক্রমণে ঘটনা ঘটতো। এর পর এক মাসের মধ্যে সরকারকে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ঘোষণা করতে হয়েছিল।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, কেবলমাত্র জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে টিকা দেওয়ার পরেই বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা উচিত। তাহলেই আমরা হার্ড ইমিউনিটির পর্যায়ে যেতে পারি। দুই সপ্তাহ আগে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে তিনটি কেস পাওয়া যায়। তিনজনই বিদেশ থেকে এসেছিলেন, তবুও পুরো মেলবোর্ন শহর পাঁচ দিনের জন্য বন্ধ ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে, আমরা এক হাজারেরও বেশি মামলাকে হালকাভাবে নিচ্ছি।
পাকিস্তানে টিকাদান কর্মসূচির অত্যন্ত ধীর গতির দিকে ইঙ্গিত করে ডা. সাজ্জাদ কায়সার সরকার দোষারোপ করে বলেন, কেউ এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে মাথা ঘামাননি। নামকরা ডাক্তারদের চেয়ে অভিনেতারা টিকাদান কর্মসূচিতে বেশি জড়িত। একজন ব্যক্তি কীভাবে কোনো অভিনেতার কাছ থেকে চিকিত্সা পরামর্শ নিতে পারেন? টিকাদান কর্মসূচির বিজ্ঞাপন পিক আওয়ারের সময় দেখানো উচিত। আমরা পিএসএল ম্যাচ চলাকালে বিজ্ঞাপনে রমরমা দেখি কিন্তু ম্যাচের সময় টিকা কর্মসূচি নিয়ে একটি বিজ্ঞাপনও দেখতে পাই না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২১
এমজেএফ