উনিশ শ’ একাত্তরের ২ এপ্রিলের ভোররাত। কলকাতা থেকে রওনা হয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি পুরনো লঝঝড়ে এএন-টুয়েল্ভ মালবাহী বিমান প্রচণ্ড শব্দ করে নামল দিল্লিতে।
বিমানের ভেতর থেকে নামলেন শেখ মুজিবের সহকর্মী তাজউদ্দীন আহমেদ, আমীর-উল ইসলাম এবং ভারতীয় দুজন কর্মকর্তা।
পরদিন রাতেই তাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে, যে বৈঠকের ব্যবস্থা করিয়ে দিয়েছিলেন বিএসএফ বা ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর প্রধান কে এফ রুস্তমজি।
পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে জনাকয়েক বুদ্ধিজীবী আগে থেকেই দিল্লিতে রয়েছিলেন, গোপনে তাদের দিয়ে দেখিয়ে নিশ্চিত করা হল দিল্লিতে যিনি এসেছেন তিনি আসলেই তাজউদ্দীন।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মুচকুন্দ দুবে তখন ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিসের তরুণ কর্মকর্তা। পরে বহুদিন তিনি বাংলাদেশ ডেস্কের দায়িত্বে ছিলেন, ঢাকাতেও বহু বছর ছিলেন ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের ভূমিকায়।
বর্ষীয়ান এই কূটনীতিবিদ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "রেহমান সোবহান ও আনিসুর রহমান - এই দুজন নামী অর্থনীতিবিদ ততদিনে ঢাকা থেকে অনেক কষ্ট করে দিল্লি এসে পৌঁছেছেন। "
"তাদের অর্থনীতিবিদ বন্ধু সুখময় চক্রবর্তী তখন যোজনা কমিশনে, তিনিই তাদের বৈঠকের ব্যবস্থা করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রীর সেক্রেটারি পি এন হাকসারের সঙ্গে। "
"রেহমান সোবহানের বর্ণনা থেকেই হাকসার প্রথম বুঝতে পারেন বাংলাদেশিদের ওপর কী অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানো হচ্ছে। "
ইন্দিরা ও তাজউদ্দীনের প্রথম সাক্ষাৎ
আনিসুর রহমান ও রেহমান সোবহান তাজউদ্দীনের পরিচয় নিশ্চিত করার পরই পরদিন রাত দশটা নাগাদ তাদের নিয়ে যাওয়া হয় দশ নম্বর সফদরজং রোডে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে।
ইন্দিরা গান্ধী অতিথিদের অপেক্ষায় বারান্দাতেই পায়চারি করছিলেন।
'তাজউদ্দীন আহমেদ: নেতা ও পিতা' বইতে তার কন্যা শারমিন আহমেদ সে বৈঠকের যে বর্ণনা দিয়েছেন তা এরকম:
"বাহুল্যবর্জিত স্টাডিরুমে তাদের আলাপচারিতা শুরু হয় এভাবে। ইন্দিরা গান্ধী প্রথমেই আব্বুকে প্রশ্ন করেন, "শেখ মুজিব কেমন আছেন?" আব্বু উত্তর দেন, "আমার যখন তার সঙ্গে শেষ দেখা হয় তখন তিনি সব বিষয় পরিচালনা করছিলেন। তাঁর যে পরিকল্পনা ছিল সে মতোই আমাদের কাজ চলছে। " আব্বু এই আলোচনায় খুব পরিষ্কারভাবে ইন্দিরা গান্ধীকে বললেন, "এটা আমাদের যুদ্ধ। আমরা চাই ভারত এতে জড়াবে না। এই স্বাধীনতার লড়াই আমাদের নিজেদের এবং এটা আমরা নিজেরাই করতে চাই। "
তবে নিজস্ব মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলার জন্য তাদের যে প্রশিক্ষণ, আশ্রয় ও অস্ত্র সরবরাহের দরকার হবে তাজউদ্দীন তা সেদিনই পরিষ্কার করে দেন।
অচিরেই লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর আশ্রয় ও আহারের ব্যবস্থা করার জন্যও মিসেস গান্ধীকে অনুরোধ জানান তিনি।
আগে সরকার, পরে স্বীকৃতি
সেই প্রথম বৈঠকেই স্বাধীন বাংলাদেশকে অবিলম্বে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যও ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন তাজউদ্দীন।
কিন্তু দিল্লিতে তার সফরসঙ্গী ও বিএসএফ কর্মকর্তা গোলক মজুমদার পরে জানান, ইন্দিরা গান্ধী তখন বলেছিলেন "ঠিক সময়ে স্বীকৃতি মিলবে - এখনও তার সময় হয়নি। "
তানভির মোকাম্মেলের তথ্যচিত্র 'তাজউদ্দীন আহমেদ : নি:সঙ্গ সারথি'-তে মি মজুমদার আরও জানিয়েছেন, মিসেস গান্ধী আগে তাদের একটি প্রবাসী সরকার গঠনের পরামর্শ দেন।
দিল্লিতে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ ওয়াচার শান্তনু মুখার্জি ভারত সরকারের হয়ে ঢাকাতেও বহুদিন কর্মরত ছিলেন।
সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলছিলেন, "তখন কাজ হচ্ছিল একেবারে ঝড়ের গতিতে। এপ্রিলের গোড়ায় তাজউদ্দীন ও তার সঙ্গীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন, আর দশ তারিখেই প্রবাসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠিত হল। "
"বারো তারিখে তাজউদ্দীন আহমেদ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিলেন। মার্চের ৩০ তারিখ বিকেলে তাঁর সঙ্গেই ভারতে প্রবেশ করা আমীর-উল ইসলাম তৈরি করলেন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের খসড়া। "
"ঠিক পাঁচ দিনের মাথায়, ১৭ এপ্রিল ভারতীয় সীমান্তের কাছে মেহেরপুরের একটা গ্রাম বৈদ্যনাথতলায় ক্যাবিনেটের সদস্যরা সবাই শপথ নিলেন, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। "
বাংলাদেশকে তখনই কূটনৈতিক স্বীকৃতি না-দেওয়া হলেও ভারতীয় ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ তার আকরগ্রন্থ 'ইন্ডিয়া আফটার গান্ধী'-তে লিখেছেন, ভারতের গোপন সরকারি নথিপত্রে কিন্তু মার্চ-এপ্রিল থেকেই মুক্তিযুদ্ধকে 'স্ট্রাগল ফর বাংলাদেশ' বলে উল্লেখ করা হচ্ছিল।
তিনি এই তুলনাও টেনেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রশক্তি যেভাবে ইংল্যান্ডের মাটিতে চার্লস দ্য গলের নেতৃত্বাধীন 'ফ্রি ফ্রেঞ্চ ফোর্স'-কে মদত দিয়েছিল, ঠিক সেভাবেই ভারতের সমর্থন পেয়েছিল বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার।
শান্তনু মুখার্জি জানাচ্ছেন, এই সমর্থনের একটা বড় দিক ছিল সামরিক সহায়তা - তবে প্রাথমিকভাবে মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব ও কৌশল স্থির করেছিল প্রবাসী সরকারের ক্যাবিনেটই।
মি মুখার্জির কথায়, "কর্নেল এমএজে ওসমানী, যিনি পরে বাংলাদেশের সেনাপ্রধানও হয়েছিলেন, সিলেটের লোক ছিলেন - মুক্তিবাহিনী গঠন করার পর তিনি তার কমান্ডার-ইন-চিফ হয়ে গেলেন। "
"সামরিক দৃষ্টিকোণে পুরো বাংলাদেশকে এগারোটা সেক্টরে ভাগ করে প্রতিটায় একজন করে সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত হলেন। "
একই সাথে চালু হল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, অর্থাৎ প্রবাসে বাংলাদেশের নিজস্ব রেডিও স্টেশন। "
"তখন কাজও হচ্ছিল তেল-খাওয়া মেশিনের মতো মসৃণভাবে ... ব্যাকআপ, সাপোর্ট, ট্রেনিং, কে আসবে, কে যাবে, কোথায় অফিস তৈরি হবে ..."
"ফলে দিল্লি থেকে ডাইরেকশনস, কলকাতায় এক্সিকিউশান, সেক্টরগুলোর অ্যাক্টিভেশন - যার ফলাফল আমাদের সবারই জানা, ইতিহাস যার সাক্ষ্য দেবে। "
পি এন হাকসারের ভূমিকা
তখন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অত্যন্ত আস্থাভাজন সেক্রেটারি ছিলেন পরমেশ্বর নারায়ণ হাকসার, যিনি পি এন হাকসার নামেই বেশি পরিচিত।
দুজনেই এলাহাবাদের লোক, দুজনেই কাশ্মীরি পন্ডিত - পিএন হাকসারকে ইন্দিরা গান্ধীর শুধু চোখ-কান নয়, 'অল্টার ইগো' বলেও বর্ণনা করেছেন তাঁর জীবনীকাররা।
দিল্লিতে ৪/৯ শান্তিনিকেতনে হাকসারের বাসভবন মার্চের শেষ দিক থেকেই হয়ে ওঠে ভারতের রাজধানীতে বাংলাদেশ আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু।
তার কন্যা নন্দিতা হাকসার আজ ভারতের সুপরিচিত মানবাধিকার আইনজীবী, একাত্তরে তিনি ছিলেন কলেজপড়ুয়া ছাত্রী।
নন্দিতা হাকসার বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "দিল্লিতে শুরুতে সবাই কিন্তু শরণার্থী সঙ্কট নিয়েই ভাবিত ছিলেন। কিন্তু বাবার ভূমিকাটা হল, তিনি বা ডিপি ধরের মতো প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ কিছু লোকজন প্রথম উপলব্ধি করেন শরণার্থী সমস্যার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে ভারতের সমর্থন। "
"স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি তখন গোটা ভারতের স্বত:স্ফূর্ত সমর্থন উপছে পড়ছে। মনে আছে, বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের সমর্থনে ক্যালকাটা ইয়ুথ কয়্যার দিল্লিতে গাইতে এসে আমাদের বাড়িতেই উঠেছিল। "
"ট্রাকে করে আমরা দিল্লির রাস্তায় চাঁদা তুলতে বেরিয়েছি, কয়্যারের রুমা গুহঠাকুরতা গাইছেন, মা শাড়ির আঁচল বিছিয়ে দিয়ে পয়সা নিচ্ছেন - কনট প্লেসে একজন ভিখারিও সেদিন নিজের ভিক্ষাপাত্র বাংলাদেশের জন্য উপুড় করে দিয়েছিলেন!"
স্বীকৃতি কখন, তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব
বস্তুত এপ্রিলেই বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিতে ইন্দিরা গান্ধীর দ্বিধার প্রধান কারণ ছিল, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম নিছক ভারতীয় চক্রান্তের অংশ হিসেবে পরিগণিত হতে পারত।
তাজউদ্দীন আহমেদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মঈদুল হাসান তার 'মূল ধারা '৭১' বইতে এ প্রসঙ্গে লিখেছেন:
"জাতীয় প্রস্তুতির এই অন্তর্বতীকালে ভারতের স্বীকৃতির প্রশ্নকে তাজউদ্দীন কেবল দাবি হিসেবে জীবিত রাখাই যুক্তিযুক্ত মনে করেন - উপযুক্ত সুযোগ ও সময়ের প্রতীক্ষায়। তাজউদ্দীনের এই উপলব্ধি অবশ্য তাঁর অধিকাংশ সহকর্মীর কাছে গৃহীত হয়নি - যাঁদের দাবিই ছিল ভারতের তৎদন্ডেই কূটনৈতিক স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবিলম্বে যুদ্ধযাত্রা। "
মুচকুন্দ দুবেও বিবিসিকে বলছিলেন, "বাংলাদেশের সংগ্রামে সঠিক নেতৃত্ব কোনটা হবে কিংবা কারা উপযুক্ত নেতা, কারা নন - মার্চ-এপ্রিল নাগাদ দিল্লিতে কিন্তু সেই ধারণাটাই ঠিকমতো গড়ে ওঠেনি। "
"দিল্লির অগ্রাধিকারের তালিকাতেও সেটা ছিল না - প্রথমদিকে গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ এ্যান্ড এ্যানালিসিস উইং বা 'র'-এর ভাসা ভাসা কিছু ইনপুটের ওপরই তারা নির্ভর করছিলেন। "
"প্রবাসী সরকার গঠনের পর পরই কিন্তু সেই সম্পর্কটা ঠিকমতো দানা বাঁধে, ইন্দিরা গান্ধী সরকারকে তারপর থেকে আর বিচ্ছিন্ন কিছু গোয়েন্দা তথ্যের ভরসায় থাকতে হয়নি। "
বাংলাদেশকে স্বীকৃতির প্রশ্নে দিল্লি সময় নিলেও ভারত একটার পর একটা রাজ্য সরকার কিন্তু ততদিনে নতুন একটি দেশকে স্বাগত জানিয়ে প্রস্তাব নিতে শুরু করেছে।
ভারতের থিঙ্কট্যাঙ্ক ভিআইএফের সিনিয়র ফেলো ও বাংলাদেশ গবেষক ড: শ্রীরাধা দত্তর কথায়, "ভারতীয় সেনার সক্রিয় সহযোগিতারও অনেক আগে থেকেই কিন্তু বিএসএফ কার্যত সীমান্ত খুলে দিয়েছিল, শরণার্থীদের প্রবেশ ছিল অবাধ। "
"আর বিএসএফ যেহেতু কেন্দ্রীয় বাহিনী, তাই তাতে দিল্লির সায় ছিল বলাই বাহুল্য। "
"এরই মধ্যে বিহার, ইউপি, আসাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরার মতো বহু রাজ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সমর্থনে তাদের বিধানসভায় প্রস্তাব নিতে শুরু করল, পার্লামেন্টের আলোচনাতেও কেন্দ্র বলল আমরা স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধী নই। "
"ফলে কেন্দ্রেরও আগে বিভিন্ন রাজ্য সরকারই কিন্তু ফর্ম্যালি সেই পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। "
ডিপ্লোম্যাটদের 'ডিফেকশন'
দিল্লির প্রচ্ছন্ন সমর্থনে তখন আর একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায় - এপ্রিল থেকেই কলকাতা ও দিল্লির পাকিস্তানি দূতাবাস থেকে দলে দলে বাঙালি কূটনীতিক বাংলাদেশের পক্ষে ভিড়তে শুরু করেন, প্রবাসে অস্থায়ী সরকারের মনোবল বাড়াতে যা প্রভূত সাহায্য করেছিল।
শান্তনু মুখার্জি বলছিলেন, "দিল্লির পাকিস্তানি হাই কমিশন থেকে দুজন ডিপ্লোম্যাট, কে এম শাহাবুদ্দিন আর আমজাদুল হক ডিফেক্ট করে যান এপ্রিলের ৬ তারিখেই। "
"আপনি দেখুন, তখনও মুজিবনগর সরকারের প্রতিষ্ঠাও হয়নি - অথচ স্বাধীনতার স্পিরিট এতই প্রবল ছিল যে তারা এত বড় ঝুঁকি নিয়ে ফেললেন। "
"মাসকয়েক পর অক্টোবরে হাই কমিশন থেকে বেরিয়ে এলেন পোড়খাওয়া ডিপ্লোম্যাট হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, যিনি পরে বাংলাদেশের স্পিকারও হয়েছিলেন। "
"তারও আগে এপ্রিলের ১৮ তারিখে স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে ডিফেক্ট করে যান কলকাতায় নিযুক্ত ডেপুটি হাই কমিশনার হোসেইন আলী ... শুধু তাই নয়, দূতাবাসের চ্যান্সেরির মাথায় তিনি পাকিস্তানের পতাকা সরিয়ে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকাও টাঙিয়ে দেন। "
বস্তুত একাত্তরের সেই আগুনঝরা দিনগুলোতে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থনের সার্বিক আবহে মানবিক, সাংস্কৃতিক, সামরিক বা কূটনৈতিক - সব ধরনের মাত্রাই ছিল।
মস্কোর সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি
কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বোধহয় সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মোড় ছিল সোভিয়েতের সঙ্গে ভারতের মৈত্রী চুক্তি সম্পাদন, ইন্দিরা গান্ধী যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন নির্জোট আন্দোলনের ভাবধারার সঙ্গে আপস করেই।
শ্রীরাধা দত্ত বলছিলেন, "রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের কুড়ি বছরের মৈত্রী চুক্তির পটভূমি কিন্তু ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধই। "
"কারণ ইন্দিরা গান্ধী ততদিনে বুঝে গেছেন আমেরিকার সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের আঁতাত কতটা জোরদার, আর চীনও সেখানে একটা বড় ভূমিকা পালন করছে। "
"এর মোকাবিলায় ভারতের একটা শক্ত সাপোর্ট দরকার ছিলই, আর সোভিয়েতের দিক থেকে সে প্রস্তাবও ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। "
"এজন্য পরে ভারতকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে, নির্জোট আন্দোলনের চ্যাম্পিয়ন হয়ে কীভাবে তারা এই চুক্তি করতে পারল?"
"কিন্তু সেই চুক্তিটা যে বাংলাদেশ যুদ্ধের কনটেক্সটেই সই হয়েছিল, এই জিনিসটা আমরা মাথায় রাখি না। "
প্রবাসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারকে সক্রিয় সমর্থন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক কেরিয়ারে প্রধান সিদ্ধান্তগুলোর একটি বললেও অত্যুক্তি হবে না।
একাত্তরে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, পাশের দেশে নির্মম গণহত্যা ও নির্বিচার ধর্ষণ চলছে দেখেও ভারতের পক্ষে চোখ বন্ধ করে থাকা কিছুতেই সম্ভব নয়।
কূটনৈতিক বিচক্ষণতার পাশাপাশি ধৈর্য, বিবেচনা ও কুশলতার ছাপ ছিল তার সেই সিদ্ধান্তের ছত্রে ছত্রে - যা ত্বরাণ্বিত করেছিল একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্মকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২১
নিউজ ডেস্ক