ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের সভাপতিত্ব করেছেন। 'আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য সমুদ্র নিরাপত্তা বৃদ্ধি' বিষয়ক একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন তিনি।
এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সমুদ্র বাণিজ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে বলেন, 'আমাদের সমুদ্রের পরিবেশ আমাদেরই বাঁচাতে হবে। আর সেই জন্য প্রথমেই প্ল্যাস্টিক বর্জ্য বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি অতিরিক্ত মাছ ধরার প্রবণতাও কমিয়ে আনতে হবে। এ ছাড়াও অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমুদ্র যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি 'সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ই দ্য রিজিওন (সাগর)' পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন একটি নিরাপদ, স্থিতিশীল সমুদ্র অঞ্চল তৈরি করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে ভারতের 'সাগর' পরিকল্পনা ভারতীয় সমুদ্র নিরাপত্তায় বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। ২০১৫ সাল থেকে এ বিষয়ে ভারত কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
সামুদ্রিক নিরাপত্তার জন্য পাঁচটি মূলনীতির কথা উল্লেখ করেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, মহাসাগর ভাগ করা একটি ঐতিহ্য। এটি ভবিষ্যতে সমুদ্রপথ আর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লাইফলাইন হতে পারে। সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যাতে সমুদ্রপথে ব্যবহার করা না হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে সমুদ্রপথে গোপনীয়তা বজায় রাখার কথাও বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি মহাসাগরের বৈধ ব্যবহার, সমুদ্রযাত্রী এবং উপকূলীয় সম্প্রদায়ের জীবন ও জীবিকার সুরক্ষার ওপর জোর দেন।
'আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য সমুদ্র নিরাপত্তা বৃদ্ধি' শীর্ষক বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে প্রেসিডেন্সিয়াল রেজ্যুলেশন পাস হওয়ায় বিশ্বে ভারতের অবস্থান শক্ত হলো। এর মাধ্যমে ভারত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ার পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেল। এই অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর উচ্চপর্যায়ের সদস্যদের অংশগ্রহণ দেখা যায়। বৈঠকে চারটি রাষ্ট্র/সরকারপ্রধান এবং ১০ জন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।
এটি ভারতের আন্তর্জাতিক অবস্থান এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোদির বৈশ্বিক মর্যাদাকে প্রতিফলিত করে। ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রথম 'সাগর' ধারণাটি সামনে এনেছিলেন। এর মূল প্রতিপাদ্য ছিল সাগরে সংঘাত বন্ধ করা ও 'এই অঞ্চলে সবার জন্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি' করা। এর পরে সিঙ্গাপুরে ২০১৮ সালে বক্তৃতা দিয়েছিলেন মোদি, সেখানে তিনি ভারতের ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় রূপরেখা প্রকাশ করেছিলেন। ২০১৯ সালে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী ব্যাংককে ইস্ট এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে 'ইন্দো-প্যাসিফিক মহাসাগরীয় উদ্যোগ' চালু করেন, সমুদ্র অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার জন্য সাতটি প্রস্তাব দেন মোদি।
এদিকে ভারতীয় নৌবাহিনী জলদস্যুতাবিরোধী অভিযান জোরদার করেছে, পাশাপাশি অংশীদার দেশগুলোকে প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করছে। সামুদ্রিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ একটি নতুন উদ্যোগ। এতে শ্রীলঙ্কা ও মরিশাসের সাহায্যের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে ভারত।
সূত্র : ইকোনমিক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার 'ভারতের সমুদ্রযাত্রা : লোথাল থেকে নিরাপত্তা পরিষদ' লেখা থেকে সংক্ষেপিত।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২১
নিউজ ডেস্ক