ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ভেঙে দেওয়া হলো মুসলিম অ্যাক্টিভিস্ট আফরিন ফাতিমার বাড়ি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০২ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২২
ভেঙে দেওয়া হলো মুসলিম অ্যাক্টিভিস্ট আফরিন ফাতিমার বাড়ি

বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুসলিম জনগোষ্ঠীর হৃদয়ের স্পন্দন হযরত মুহাম্মদ (সো.) সম্পর্কে আপত্তির মন্তব্য ও এর প্রতিবাদ বিশ্বজুড়ে। যে দেশের ক্ষমতাসীন দলের মুখপাত্র এমন মন্তব্য করেন, সে দেশ ভারতের নাগরিকরাও ক্ষোভে ফুঁসে উঠছেন বারে বারে।

এর খড়্গও পড়েছে কজনের ঘাড়ে। তাদের একজন আফরিন ফাতিমা। নবীর শানে বেয়াদবি মেনে না নিয়ে প্রতিবাদে অংশ নেন এ মুসলিম অ্যাক্টিভিস্ট। এর প্রতিদানও পেয়েছেন। ভেঙে দেওয়া হয়েছে তার বাড়ি।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরায় এ খবর দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২২ বছর বয়সি তরুণী আফরিনের বাবা জাভেদ মোহাম্মদ ভারতের ওয়েলফেয়ার পার্টির নেতা। নবী মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় ঘরে বসে থাকতে পারেননি আফরিন। অংশ নেন বিক্ষোভ-প্রতিবাদে। শুক্রবার (১০ জুন) বাবা-মেয়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে সহিংসতার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়। শনিবার (১১ জুন) উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদে তাদের বাড়ি খালি করতে নোটিশ দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। রোববার (১২ জুন) সকালে সরকার পক্ষের লোকজন বুলডোজার দিয়ে বাড়িটি ভেঙে দিয়ে যায়।

এ ঘটনার পর সমালোচকরা বলছেন, বিজেপিশাসিত উত্তরপ্রদেশে ‘বুলডোজার রাজনীতির’ শিকার হয়েছেন জাভেদ ও তার মেয়ে। নবী মুহাম্মদের বিরুদ্ধে করা মন্তব্যের প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের এমন কর্মকাণ্ড ‘প্রতিহিংসামূলক’।

স্থানীয় বহু সংবাদমাধ্যম ও মিডিয়া বুলডোজার দিয়ে আফরিনের বাড়ি ভাঙার দৃশ্য রেকর্ড করেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজ শহরের কর্তৃপক্ষ আফরিন ফাতিমার বাড়িটি ভেঙে ফেলছে। ঘটনাস্থল ঘেরা ছিল পুলিশের দাঙ্গা মোকাবিলা বাহিনী দিয়ে।

খবরে বলা হয়, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দোতলা ভবনটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। বাড়ির আসবাবপত্র, বই-ছবি একটি খালি প্লটে ফেলে দেওয়া হয়। এসব কিছুর মধ্যে একটি পোস্টার সবার চোখে পড়ে, যাতে লেখা ছিল- ‘যখন অন্যায় আইনে পরিণত হয়, তখন প্রতিরোধ কর্তব্য হয়ে ওঠে। ’

চলতি মাসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) দুই সদস্যের ইসলাম বিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদে দেশটির মুসলমানদের বিক্ষোভ শুরু করেন। কয়েকদিন পর বিক্ষোভ রূপ নেয় ধ্বংসযজ্ঞে। নয়া দিল্লির বিরুদ্ধে কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।

বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশ ভারত সরকারকে ক্ষমা প্রার্থনার দাবি করেছে। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর নূপুর শর্মা ও সাবেক দিল্লি মিডিয়া সেল প্রধান নবীন কুমার জিন্দালের মন্তব্য দেশটির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ডানপন্থীদের ঘৃণামূলক আচরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এদিকে, বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ বেড়ে যাওয়ায় নূপুর ও জিন্দালকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিজেপি। ধর্মীয় বিষয়ে দলের মুখপাত্রদের ‘অত্যন্ত সতর্ক’ হতে বলা হয়। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ বাড়তেই থাকে।

ভারতে বিক্ষোভে হতাহত হন অনেকে। শুরুর দিন থেকে বিক্ষোভ অঞ্চল ভেদে বাড়তে থাকে। উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজ শহরেও, যাতে যোগ দেন আফরিন ফাতিমা।

আল জাজিরাতে আফরিন জানান, শুক্রবার শহরে বিক্ষোভের কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় সদস্যরা তার বাবা মোহাম্মদ জাভেদ, মা পারভীন ফাতিমা ও  ছোট বোন সুমাইয়াকে তুলে নিয়ে যায়। তাকে জানানো হয়নি পরিবারের সদস্যদের আটক করা হচ্ছে নাকি গ্রেফতার! তাকে কোনো ওয়ারেন্টও দেখানো হয়নি।

রোববার সকালে পারভীন ও তার ছোট মেয়েকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তার আগে ৩০ ঘণ্টা তারা জেলবন্দী থাকেন।

আল জাজিরা জানিয়েছে, মুসলিম অ্যাকটিভস্ট ফাতিমা তাদের বাবা-মেয়ের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলার ঘটনাটিকে বেআইনি বলেও মন্তব্য করেন।

২২ বছরের এ তরুণী বলেন, বাড়ি ভেঙে ফেলার ঘটনাটি পুরোপুরি বেআইনি। কারণ ওটা আমার বাবার ছিল না। আমার মা বাড়িটির মালিক। আমরা প্রায় ২০ বছর ধরে ভবনটিতে বসবাস করছি, করও পরিশোধ করছি। কিন্তু কখনও এলাহাবাদ কর্তৃপক্ষ আমাদের বলেনি বাড়িটি অবৈধ।

শুক্রবারের বিক্ষোভের পর বাবা-মেয়ের বিরুদ্ধে সহিংসতার ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ আনা হয়, সে প্রসঙ্গে ফাতিমা বলেন, আমরা শুক্রবার বিক্ষোভ করিনি। আমাদের কেউই এলাহাবাদের বিক্ষোভে অংশ নিইনি। যেহেতু শুক্রবার ছিল, আমরা বাড়িতে ছিলাম। নামাজ আদায় করছিলাম।

জাভেদের পরিবারকে গ্রেফতারের ঘটনায় হয়েছে সমালোচনাও। প্রয়াগরাজ প্রশাসনের নাগরিক বিষয়ে কর্মরত এক ব্যক্তি সমালোচনা করে বলেন, তাদের গ্রেফতার করা ছিল অন্যায়।

বাড়ি ভাঙার ঘটনায় জাভেদের আইনজীবীরা এলাহাবাদ হাইকোর্টকে চ্যালেঞ্জ করেছে। সম্পত্তির ক্ষয়-ক্ষতির জন্য রাজ্য সরকারের কাছে কমপক্ষে ১০ কোটি রুপি জরিমানা দাবি করেছেন।

এলাহাবাদ পুলিশ তাদের কর্মকাণ্ডের ন্যায্যতা প্রমাণ করেছে। নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ফাতিমাদের বাড়ি ভাঙা হয়েছে বলে দাবি করেছে স্থানীয় পুলিশ। এক মুখপাত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, বাড়িটির কাঠামো অবৈধ ছিল। সেটি প্রয়াগরাজ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্ল্যান পাস না করিয়েই নির্মাণ করা হয়েছিল।

সূত্র: আলজাজিরা

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, ১৩ জুন, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।