ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

বন্দুকধারীর আত্মসমর্পণে কাটলো ব্যাংকের জিম্মি দশা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২২
বন্দুকধারীর আত্মসমর্পণে কাটলো ব্যাংকের জিম্মি দশা বাসাম আল-শেখ হুসেন

নিজের জমাকৃত অর্থ ফেরতের দাবিতে লেবাননের ব্যাংক অব বৈরুত জিম্মি করা অস্ত্রধারী বাসাম আল-শেখ হুসেন আত্মসমর্পণ করেছেন। বাবার চিকিৎসা খরচ যোগাতে তিনি ব্যাংকটিতে অর্থ জমা করেছিলেন।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সকালের দিকে বাসাম আল-শেখ হুসেন অস্ত্রসহ ব্যাংক অব বৈরুতে ঢুকে পড়েন। প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে ব্যাংকটির ৮ কর্মী ও দুই গ্রাহককে জিম্মি করে রাখেন তিনি। ব্যাংকটিতে দুই লাখ ডলার জমা করেছিলেন তিনি।

ব্যাংক এমপ্লয়িজ সিন্ডিকেটের প্রধান জর্জ আল-হাজ স্থানীয় গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, হুসেন তার জমাকৃত অর্থ ফেরত দিতে বলেছিলেন। অন্যথায় তিনি বিপজ্জনক কিছু ঘটাতে পারেন বলে হুমকিও দেন।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, একটি শটগান নিয়ে সকালে ব্যাংকে ঢুকে পড়েন হুসেন। তার হাতে একটি পেট্রলের ক্যানিস্টার ছিল। তিনি কোনো গ্রাহককে ক্ষতি করেননি। তবে, সতর্ক করার জন্য তিনটি গুলি ছোঁড়েন। জিম্মিদের নিজের সঙ্গে আটকে রেখেছিলেন হুসেন। তার জমাকৃত অর্থ ফেরত না দিলে শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেবেন বলেও হুমকি দেন তিনি।

ঘটনার সময় হুসেনের স্ত্রী মরিয়ম চেহাদি ব্যাংকের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। স্থানীয় সাংবাদিকরা বিষয়টি জানার পর তাকে ঘটনার ব্যাপারে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, আমার স্বামী যা করা দরকার, তাই করেছেন।

হুসেনের ভাই আতেফ বলেন, আমরা ভাই বখাটে নয়। তিনি অত্যন্ত ভদ্র। ব্যাংকে জমা রাখা অর্থ তার আয়ের। তিনি সেটি ফেরত পাওয়ার জন্য লড়ছেন। তিনি কারও কাছ থেকে কেড়ে নেন না। বরং নিজের পকেটে যা থাকে, তা দিয়ে অন্যকে সাহায্য করার চেষ্টা করেন।

বাসাম আল-শেখ হুসেন ব্যাংক জিম্মি করার পর তার সমর্থনে বেশ কিছু বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে লেবানিজ সরকার ও ব্যাংকের স্লোগান দেন। তারা আশা করছিলেন, হুসেন তার দাবীকৃত অর্থ ফেরত পাবেন। বিক্ষোভকারীরা তাকে নায়ক আখ্যা দিয়েছেন।

খবরে আরও বলা হয়, ব্যাংক অব বৈরুতে জমা রাখা ২ লাখ ডলার হুসেন তুলতে চাচ্ছিলেন তার বাবার চিকিৎসার জন্য। এ ছাড়া দেশটির বর্তমান যে পরিস্থিতি, সংসারের বিভিন্ন সামগ্রী কেনাকাটা ও অন্যান্য খরচ বহন করতে নিজের টাকাই ফেরত পেতে চাচ্ছিলেন তিনি।

খবরে বলা হয়, বেশ কয়েক ঘণ্টা আলোচনার পর হুসেন তার সঞ্চয় থেকে কিছু অর্থ নেওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করেন। পরে তার ভাইয়ের কাছে ৩৫ হাজার ডলার হস্তান্তর করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ তথ্য জানান, হুসেনের আইনজীবী দিনা আবু জুর।

পরে আত্মসমর্পণের পর খাবার সরবরাহকারী বাসাম আল-শেখ হুসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করে দ্রুত থানায় নিয়ে যায়। ব্যাংকের জিম্মি দশায় কেউ হতাহত হননি।

গত জানুয়ারিতেও প্রায় একই ঘটনা ঘটেছিল লেবাননে। এক কফি শপ মালিক তার কর্মচারীদের জিম্মি করেন ব্যাংক থেকে নিজের জমাকৃত অর্থ ফেরত পেতে। কর্মীদের হত্যার হুমকি দিলে লেবাননের একটি ব্যাংকে আটকে থাকা তার ৫০ হাজার ডলার ফেরত দেওয়া হয়।

আল জাজিরার খবরে আরও বলা হয়েছে, লেবানন তার আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। দেশটির ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটও দেখা দিয়েছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে লেবানিজ পাউন্ডের মূল্য ৯০ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে। জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশ দারিদ্র্যে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক নাগরিকদের জমাকৃত সঞ্চয় আটকে ফেলে। বৈদেশিক মুদ্রা উত্তোলনের ব্যাপারেও কঠোরতা ঘোষণা করা হয়েছে দেশটিতে। ২০১৯ সাল থেকে এ অবস্থা চলে আসছে।

বাংলাদেশ সময় : ১১১৫ ঘণ্টা, ১২ আগস্ট, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।