ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনে রুশ জয়ের স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে পুতিনের!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০২২
ইউক্রেনে রুশ জয়ের স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে পুতিনের!

চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এক রাশ স্বপ্ন বুনেছিলেন, সহজেই জয় করে ফেলতে পারবেন ইউক্রেন।

কিন্তু সে স্বপ্ন ভেস্তে যাচ্ছে!

গত সপ্তাহেও পুতিন তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা জানান। বলেন, সত্য আমাদের পক্ষে এবং সত্যই শক্তি। অর্থাৎ নাৎসিবাদকে পুঁজি করে ইউক্রেনে চালানো আগ্রাসন ও দেশটির চারটি প্রদেশ নিজেদের করে নেওয়ার তার যে প্রচেষ্টা, সেটি সফল হয়েছে তার। রেড স্কয়ারে দেওয়া বক্তব্যে এ ব্যাপারে দৃঢ় দাবি করে পুতিন বলেন, জয় আমাদেরই হবে।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়গুলোয় দেখা যায়, ইউক্রেনের বাহিনী মাত্র তিন দিনে দেশটির উত্তর–পূর্বাঞ্চলে ২ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটারের (৯৬৫ বর্গমাইল) বেশি এলাকা নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। তাদের আক্রমণের মুখে রুশ সেনারা লুহানস্ক প্রদেশ থেকে পিছু হটতে শুরু করে। কুপিয়ানস্ক রেলওয়ে জংশনও নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় ইউক্রেনীয় সেনারা।

ডোনেৎস্কে প্রচেষ্টা জোরদার করতে তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর বালাকলিয়া থেকেও সেনা প্রত্যাহার করে রাশিয়া। গত এপ্রিলে কিয়েভের আশেপাশের এলাকা থেকেও সেনা সরিয়ে নেয় রাশিয়া।

পুতিন তার স্বপ্ন সত্যি হওয়ার আশা করলেও বাস্তবে বিষয়গুলো ভিন্ন। কেননা তিনি ক্রেমলিনে তার অবৈধ সংযুক্তি চুক্তিতে সই করার পরও ইউক্রেনীয় বাহিনী তাদের দখলকৃত এলাকাগুলোয় এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান যুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য খসড়া হওয়ার পরিবর্তে লাখ লাখ পুরুষ রাশিয়া থেকে পালিয়েছে। কেননা, কিছুদিন আগেই পুতিন যুদ্ধ জয়ের জন্য তার দেশের পুরুষদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন।

যুদ্ধক্ষেত্রে বিষয়গুলো এতটাই বাজেভাবে চলছে রুশ প্রেসিডেন্ট ও তার অনুগতরা এখন দাবি করছে, ইউক্রেনে ‘ডি-নাজিফিকেশন’ ঘটানো ও পশ্চিমা জোটের বিরুদ্ধে এটি তাদের অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে রুশ ভাষাভাষীদের সুরক্ষার জন্য তারা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু সত্য রাশিয়ার পক্ষে নয়। পুতিনের যুক্তির বিপক্ষে রিডল রাশিয়ার সম্পাদক আন্তন বারবাশিন বলেছেন, তিনি একটি অন্ধ অঞ্চলে আছেন। কী ঘটছে তা তিনি দেখছেন না বলেই মনে হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বিশ্বাস, কিয়েভের ব্যাপারে পশ্চিমাদের শক্ত সমর্থন ও রাশিয়ার দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের নিজস্ব তীব্র প্রতিরোধে আটকা পড়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। ৭০ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট গত বিশ বছরেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার পর নিজের নেওয়া ব্যবস্থার শিকার হয়েছেন। তার স্বৈরাচারী শৈলী ও বুদ্ধিমত্তা তাকে বাঁধা দিচ্ছে।

আর ডট পলিটিক নামে একটি বিশ্লেষক ফার্মের প্রধান তাতায়ানা স্ট্যানোভায়া এ ব্যাপারে বলেছেন, পুতিনের ধারণা নিয়ে আসলে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে না। তার সঙ্গে যারা কাজ করেন, তারা সবাই বর্তমান বিশ্ব ও ইউক্রেনের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানেন। তারা পুতিনের প্রত্যাশা সম্পর্কেও জানেন। তার সঙ্গে কাজ করা মানুষগুলো এমন তথ্যও দিতে পারেন, যা পুতিনের দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করে।

সর্বশেষ ভাষণে পুতিন বলেছিলেন, সোনায় মোড়ানো ক্রেমলিন ঝাড়বাতির নিচে দেখতে বেশ সুন্দর। যা থেকে একটি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার প্রদর্শন করে। রাশিয়া একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র। আমার দেশ একটি ভীতু পশ্চিমা বিশ্বকে সম্মান শিখতে বাধ্য করেছে। এবং কিয়েভ আবারও মস্কোর কাছে পরাধীন।

পুতিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলো তাকে মোহিত করে রেখেছে। যদিও তিনি নিজের নেওয়া সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসেন না। আন্তন বারবাশিন বলেন, ক্রেমলিন যে বড় অঙ্ক কষেছিল, সেটি শেষ হয়নি। বোঝা যাচ্ছে, পুতিনের প্ল্যান বি আছেন। কিন্তু রুশ জনগণকে সামনের সারিতে ঠেলে দেওয়া ও আশা করা সহজেই ইউক্রেনকে বগলদাবা করা যাবে, সেটিও সত্য নয়। তার কষা অঙ্কই তাকে ইউক্রেনে আরও অগ্রসর হতে বাধা দেবে।

উল্লেখ্য, গত ২১ সেপ্টেম্বর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে পুতিন বলেছিলেন, তারা অখণ্ডতা হুমকির মধ্যে পড়লে রাশিয়া ও জনগণকে রক্ষায় তিনি সব ধরনের ব্যবস্থা নেবেন। যারা পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেইল করতে চায়; বাতায় উল্টো পথেও বয়ে যেতে পারে, সে ধারণা সবার রাখা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পুতিন বলেন, এসব চলতে থাকলে মস্কো তার বিশাল অস্ত্রাগারের শক্তি নিয়ে জবাব দেবে।

পারমাণবিক যুদ্ধ নিয়েও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পারমাণবিক যুদ্ধ এড়াতে মস্কো পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভাও এক বিবৃতিতে এ কথা জানান। তিনি বলেন, রাশিয়া কখনো পারমাণবিক যুদ্ধের অনুমতি না দেওয়ার নীতিকে সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ব্যাপারে মস্কোর অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু গত ২১ সেপ্টেম্বর পুতিন যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সেটির সঙ্গে তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কথায় মিল খুঁজে পাচ্ছেন না বিশ্লেষকরা।

এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভের ভাষ্য। কদিন আগেই তিনি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কথা উল্লেখ করেছিলেন।

দিমিত্রি বলেছিলেন, ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে আবেগ না দেখিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিকেই গুরুত্ব দেয় রাশিয়া। একই সঙ্গে চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের আহ্বানের ব্যাপারেও মনে করিয়ে দেন তিনি।

পুতিনের বক্তব্য ও তার নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি হিসেবে দেখছে পশ্চিমারা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন হুমকিগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার কথা জানিয়েছে।

সূত্র: বিবিসি

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।