ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ব্রিটেনের অন্যতম ধনী শ্রীচাঁদের চিকিৎসা হচ্ছে না, সম্পত্তি নিয়ে কাড়াকাড়ি স্বজনদের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২২
ব্রিটেনের অন্যতম ধনী শ্রীচাঁদের চিকিৎসা হচ্ছে না, সম্পত্তি নিয়ে কাড়াকাড়ি স্বজনদের

সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে পারিবারিকভাবে অযত্নের শিকার হয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটেনের অন্যতম ধনী পরিবারের অভিভাবক শ্রীচাঁদ পরমানন্দ হিন্দুজা। তার বয়স এখন ৮৬ বছর।

বর্তমানে তিনি ডিমেনশিয়া (স্মৃতিভ্রংশ) রোগে ভুগছেন। কিন্তু সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে তার সঠিক চিকিৎসা দিচ্ছে না পরিবারের সদস্যরা।

এমনই বিস্ফোরক তথ্যে উঠে এসেছে ব্রিটেনের আদালতের বিচারকের মন্তব্যে।

এ কারণে শ্রীচাঁদ পরমানন্দের সঠিক যত্ন ও চিকিৎসার জন্য সরকারি নার্সিং হোমে ভর্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

ব্রিটেনের কোর্ট অব প্রোটেকশনের দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হেইডেন বলেছেন, যথেষ্ট সুযোগ ও আর্থিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পরিবার তার (শ্রীচাঁদ পরমানন্দ) সঠিক যত্নের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণেই তাকে একটি পাবলিক (সরকারি) নার্সিং হোমে ভর্তি করার নির্দেশ দেওয়া হলো।

লিখিত রায়ে বিচারপতি হেইডেন বলেন, যত্নাদির সব ধরনের প্যাকেজসহ একটি প্রাইভেট বাসভবনের ব্যবস্থা করা শ্রীচাঁদ পরমানন্দের জন্য ‘শান্তি ও মর্যাদা’ অর্জনের সর্বোত্তম উপায় হবে।

‘যত্ন প্যাকেজের স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিত করতে এ ধরনের পরিকল্পনার জন্য একটি আর্থিক নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন’- যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, তার জন্য উপযুক্ত আবাসন ও যথাযথ যত্নের ব্যবস্থা করা হয়নি এবং তাকে তার নিজের পরিবারের সদস্যদের আচরণ দ্বারা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে রাখা হয়েছে।

বিচারপতি হেইডেন বলেন, আমি সম্পূর্ণরূপে সরকারি আইনজীবীর বিশ্লেষণ স্বীকার করছি যে, শ্রীচাঁদ পরমানন্দের সর্বোত্তম প্রাপ্য খুব বেশি প্রান্তিক (নগন্য) হয়ে গেছে।  

তিনি বলেন, প্রচুর সম্পদ, চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও শ্রীচাঁদের ক্ষেত্রে এ অযত্ন সত্যিই উদ্বেগজনক ও গভীরভাবে দুঃখজনক।

বিচারপতি হেইডেন বলেন, আমাকে বলা হয়েছিল তিনি একজন প্রিয় এবং সম্মানিত মানুষ। তার সঙ্গে যা ঘটেছে এটা মোটেও ঠিক হয়নি। তাকে অসম্মান করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বিশ্বের শীর্ষ ধনী শিল্পগ্রুপদের মধ্যে অন্যতম হিন্দুজা গ্রুপ। অটোমোবাইল, কেমিক্যালস, ব্যাংকিংসহ ১১ খাতে ব্যবসা রয়েছে তাদের। গ্রুপের বিভিন্ন সংস্থার মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।

সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ চার ভাই- শ্রীচাঁদ, গোপীচাঁদ, প্রকাশ ও অশোক। হিন্দুজা ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার উদ্দেশে বছর খানেক আগেই আদালতে আবেদন জানান বড় ভাই শ্রীচাঁদ।

প্রয়াত পরমানন্দ হিন্দুজা প্রতিষ্ঠিত হিন্দুজা শিল্পগোষ্ঠীর বয়স ১০৮ বছর। পরমানন্দের প্রয়াণের পর থেকে যৌথভাবেই পারিবারিক ব্যবসা চালিয়েছেন চার ভাই। গাড়ি, ব্যাংকিং, গ্যাস, তেল, স্বাস্থ্য পরিষেবা, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৩৮টি দেশজুড়ে ছড়ানো হিন্দুজাদের ব্যবসা। প্রতিবছর ‘নিয়ম করে’ ব্রিটেনের সেরা ধনীদের তালিকায় ঠাঁই পান হিন্দুজা ভাইয়েরা। কিন্তু সুখের সেই সংসারেই এখন ঘনিয়েছে অশান্তির মেঘ।

৮৬ বছরের শ্রীচাঁদ এখন গুরুতর অসুস্থ। স্মৃতিভ্রংশ রোগেও ভুগছেন। তার হয়ে আইনি লড়াইয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন দুই মেয়ে বিনু ও শানু। শানুর ছেলে করমই বকলমে দাদুর তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা তদারকি করছেন।

সম্প্রতি জেনেভায় একটি সাক্ষাৎকারে করম বলেন, দাদু বলতেন, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে হলে সপ্তাহে একবার সদস্যদের একত্রিত হয়ে সিনেমা দেখা উচিত। আমরা সে রকমই করতাম। সবাই একত্রিত হয়ে সবকিছু ভালো-খারাপ ভাগ করে নিতাম।

কিন্তু এভাবে কয়েক দশক ধরে পারিবারিক বন্ধন অটুট থাকলেও এবার হিন্দুজা সাম্রাজ্যের ভাগাভাগি অনিবার্য হয়ে উঠেছে বলেও স্বীকার করে নেন তিনি।

২০১৪ সালের একটি যৌথ ঘোষণাপত্র ঘিরেই হিন্দুজা পরিবারে বিবাদের সূচনা। চার হিন্দুজা ভাইয়ের সই করা ওই ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল, কোনো এক ভাইয়ের হাতে থাকা সম্পত্তি আদতে চার ভাইয়েরই। যেকোনো ভাই অন্য ভাইদের নিয়োগ করতে পারবেন সেই সম্পত্তির তদারকিতে। কিন্তু শ্রীচাঁদ ও তার কন্যাদের দাবি, ওই যৌথ ঘোষণাপত্রের কোনো আইনি বৈধতা নেই। তাই শ্রীচাঁদের নামে থাকা ব্রিটেন ও সুইজারল্যান্ডের হিন্দুজা ব্যাংক তার নিজস্ব সম্পত্তি। গোপীচাঁদ, প্রকাশ ও অশোক সেই যুক্তি মানতে নারাজ। তারা এখনও ‘অখণ্ড হিন্দুজা সাম্রাজ্যের’ তত্ত্বেই অনড় রয়েছেন।  

সূত্র: স্কাইনিউজ, ডেইলি মেইল

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২২
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।