ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

ইবাদতের মারকাজখ্যাত হাজীগঞ্জ ঐতিহাসকি বড় মসজিদ

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২৩
ইবাদতের মারকাজখ্যাত হাজীগঞ্জ ঐতিহাসকি বড় মসজিদ

চাঁদপুর: চাঁদপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পূর্বে রয়েছে ইবাদতের মারকাজখ্যাত হাজীগঞ্জ ঐতিহাসকি বড় মসজিদ কমপ্লেক্স।  

দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদ দেশ ও বিদেশে সবার কাছে খুবই পরিচিত।

মসজিদের নয়নাভিরাম পরিবেশ দেখলে মনে প্রশান্তি জাগে। এই কমপ্লেক্সটি এখন উপজেলার সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

জানা গেছে, স্থানীয় বাসিন্দা আহমাদ আলী পাটওয়ারী ১৩২৫ বঙ্গাব্দের দিকে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করে বিশাল সম্পত্তি ওয়াকফ করেন। ওই সম্পত্তিতেই গড়ে ওঠে হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ কমপ্লেক্স। মসজিদের ৯ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি হিসেবে থাকেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।

১৩৩৭ বঙ্গাব্দের ১৭ আশ্বিন আহমদ আলী পাটওয়ারী (রহ.)’র পরম ইচ্ছায় হযরত মাওলানা আবুল ফারাহ জৈনপুরী (রহ.) এর পবিত্র হাতে পাকা মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। মসজিদের প্রথম অংশ (পূর্ব) ৪৭৮৪ বর্গফুট, মাঝের অংশ ১৩০০৬ বর্গফুট এবং শেষাংশ (পশ্চিম) ১৬১৫ বর্গফুট। সর্বমোট মসজিদের আয়তন ২৮৪০৫ বর্গফুট।

মসজিদের প্রথম অংশের উপরের দিকে সুরা ইয়াছিন ও সুরা জুমআ লিপিবদ্ধ ছিল। সংস্কারের সময় তা উঠে যায়। মসজিদের অনন্য সুন্দর মেহরাবটি কাচের ঝাড়ের টুকরো নিখুঁতভাবে কেটে কেটে আকর্ষণীয় নকশায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে। মাঝের অংশটি ৭৭টি আকর্ষণীয় পিলার ও ঝিনুকের মুজাইক দিয়ে নির্মিত হয়। তৃতীয় অংশে রয়েছে তিনটি বিশাল গম্বুজসহ আকর্ষণীয় বিশাল সুউচ্চ মিনার। ১৯৫৩ সালে ১২২ফুট উঁচু এই সুউচ্চ মিনারটি নির্মাণ হয়।

কারুকার্যখচিত মসজিদের সবশেষ পূর্ব প্রাচীরের পবিত্র কালেমা শরিফ খচিত চিনা বাসনের টুকরো দিয়ে তৈরি মনোরম ফুলের ঝাড়ের ন্যয় আকর্ষণীয় করে সাজানো বিশাল ফটক। মসজিদের প্রবেশের সুবিশাল ফটকটি দর্শনার্থীদের মন কেড়ে নেয়। পাথরের সাজে সজ্জিত অসংখ্য তারকাখচিত তিনটি বড় বড় গম্বুজ পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

মসজিদ কমপ্লেক্স থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গছে, এই মসজিদের জুমার নামাজের আজান ও একামতের উদ্বোধনী দিবসে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ চারজন মন্ত্রী এসেছিলেন। এ মসজিদে নামাজ পড়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীসহ আরও অনেকে। বিভিন্ন সময় এসেছেন বরেণ্য আউলিয়ারাও।

স্থানীয়ভাবে প্রচলিত আছে, এই মসজিদ কমপ্লেক্সটি আল্লাহর অলীগণের রুহানি ফয়েজ ও বরকতে শিরক-বিদআত মুক্ত এবং ইবাদতের মারকাজ হিসেবে খ্যাত। মসজিদের কারামত ও ফয়েজ-বরকতে এই উপজেলা গৌরবান্বিত। যে কারণে অনেকেই নিয়ত ও মানতের অর্থ এখানে দান করেন। এই রেওয়াজ বহুবছর থেকে চালু আছে। এখানে নারীদের জন্য নামাজের সুব্যবস্থা আছে। দূর-দুরান্ত থেকে এখানে এসে নামাজ আদায় করেন নারীরা।

মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লি নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আসলে সকল মসজিদে নামাজ আদায় করা সমান। কিন্তু এই মসজিদের পরিবেশ আমাদেরকে খুবই আকর্ষিত করে। যার কারণে অনেক দূর থেকে নারী-পুরুষ এসে নামাজ আদায় করেন এখানে।

প্রবীণ মুসল্লি মো. আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, এই মসজিদের সৌন্দর্য মুসল্লিদের টানে। এখানে আসলে যে বেহেশতি পরিবেশ পাওয়া যায়, সেটি অন্যস্থানে নেই।

মসজিদের খতিব হাফেজ মুফতি আব্দুর রউফ বাংলানিউজকে বলেন, এই মসজিদে প্রতি জুমআর দিন প্রায় ২০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। রমজান মাসের শেষ জুমআয় প্রায় লক্ষাধিক মুসল্লির নামাজ আদায় করেন। মসজিদের দ্বিতীয় তলায় মহিলাদের জন্য পৃথক নামাজের ব্যবস্থা আছে। শুধুই তাই নয়, অনেকেই পরিবারের সব সদস্যদের নিয়ে এখানে এসে নামাজ পড়েন। মসজিদের পাশপাশি এখানে মাদ্রাসায় প্রায় ১১০০ শিক্ষার্থী অধ্যায়ণরত।

হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ কমপ্লেক্সের অধীনে রয়েছে আবাসিক ও অনাবাসিক মাদরাসা ও এতিমখানা। এর মধ্যে রয়েছে আহমাদিয়া কামিল মাদরাসা, মুনিরিয়া নুরানি মাদরাসা, ফোরকানিয়া মাদরাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং। এ ছাড়া মসজিদের অর্থ জোগানের জন্য স্থায়ী আয়ের উৎস হিসেবে রয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মচারী মিলিয়ে কর্মরত আছেন প্রায় ২০০ জন।

ঐতিহাসিক মসজিদটির প্রথম মোতওয়াল্লি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রতিষ্ঠাতা আহমাদ আলী পাটওয়ারী। তার মৃত্যুর পর দায়িত্ব পান তার তৃতীয় ছেলে মো. মনিরুজ্জামান পাটওয়ারী। তার মৃত্যুর পর মোতওয়াল্লির দায়িত্ব নেন বড় ছেলে ড. মো. আলমগীর কবির পাটওয়ারী।

ড. মো. আলমগীর কবির পাটওয়ারী বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি মাসে দান বাবদ যে টাকা পাওয়ায় যায়, তা দিয়ে মসজিদ কমপ্লেক্সের ব্যয় নির্বাহ সম্ভব হয় না। বাকি টাকা আসছে দোকান-মার্কেট থেকে। বর্তমানে এ ওয়াক্ফ এস্টেট ১০ কোটি টাকারও বেশি ঋণগ্রস্ত। তা সত্ত্বেও সর্বোত্তম সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, নিরবচ্ছিন্ন অজুর পানি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা, ওয়াজ-মাহফিলসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা, রমজান মাসে রোজাদারদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা, ইতেকাফকারীদের সেবা প্রদান, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা-এসব চালিয়ে যাচ্ছি। মাদরাসাগুলোর সংস্কার, উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণসহ যে কোনো দুর্যোগে স্থানীয় পর্যায়ে সামাজিক কার্যক্রমেও সাধ্যমত আর্থিক সহযোগিতা করা হচ্ছে মসজিদের পক্ষ থেকে। এই কমপ্লেক্স হাজীগঞ্জ তথা জেলার উন্নয়নে মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।