সিলেট: সিলেট থেকেই শুরু হলো দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের আয়োজনে ‘কুরআনের নূর’ আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা-২০২৪।
এর বাছাই পর্বে অংশ নেওয়া সিলেট বিভাগের অন্তত পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম দিনে জাতীয় পর্যায়ের জন্য ১১ জনকে ইয়েস কার্ড দিয়েছেন বিচারকরা।
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ৯টায় সিলেটের জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজিরবাজার মাদরাসা প্রাঙ্গণে বাছাই পর্ব শেষে বিকাল ৪টায় ১১ জনকে ইয়েস কার্ড দেওয়া হয়।
কুরআন মুখস্থ, তাজবিদের অনুসরণ, কণ্ঠের মাধুর্য —এ বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়েই সেরা হাফেজ নির্বাচন করেছেন বিচারকরা।
ইয়েস কার্ড দেওয়ার সময় প্রতিযোগিতার প্রধান বিচারকের দায়িত্বে থাকা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম শায়খুল হাদিস মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকি আন নদভী বলেন, প্রতিযোগীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ১০ জনকে বাছাই করার কথা। তবে দুইজনের প্রাপ্ত নম্বর সমান হওয়ায় সিলেটের ১১ জনকে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত করা হলো।
এর আগে সকাল ৮টায় প্রতিযোগিতার রেজিস্ট্রেশন পর্ব শুরু হয়। তারও আগে থেকে খুদে হাফেজদের মিলনমেলায় পরিণত হয় সিলেটের জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজিরবাজার মাদরাসা প্রাঙ্গণ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কুরআনের হাফেজদের উৎসাহ দিতেই এই আয়োজন। দেশসেরা হাফেজদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছেন তারা। আর প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চান খুদে হাফেজরা।
প্রতিযোগীদের প্রত্যাশা, সিলেটের সেরা থেকে দেশসেরা হয়ে বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা। এর মাধ্যমে ইসলামের খেদমতের পাশাপাশি দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চান হাফেজরা। আর এমন সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা তাদের।
আয়োজকরা জানান, এবারের কুরআনের নূর প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ের প্রথম বিজয়ী পাবে ১০ লাখ টাকা ও সম্মাননা। দ্বিতীয় বিজয়ী পাবে সাত লাখ টাকা ও সম্মাননা। তৃতীয় পুরস্কার পাঁচ লাখ টাকা ও সম্মাননা। চতুর্থ ও পঞ্চম পুরস্কার দুই লাখ টাকা করে এবং সম্মাননা। এছাড়া ষষ্ঠ থেকে অষ্টম স্থান অর্জনকারী বাকি তিনজন পাবে এক লাখ টাকা করে আর্থিক পুরস্কার ও সম্মাননা। এবারও জাতীয় পর্যায়ের আট বিজয়ী, তাদের পরিবার ও ওস্তাদকে ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব পাঠানো হবে।
অন্যদিকে প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রথম বিজয়ী পাবে ১৫ লাখ টাকা ও সম্মাননা। দ্বিতীয় বিজয়ী পাবে ১০ লাখ টাকা ও সম্মাননা এবং তৃতীয় বিজয়ী পাবে পাঁচ লাখ টাকা ও সম্মাননা।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মানিক বলেন, গত বছর দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর সাহেবের সঙ্গে দেখা করি। তখন টিভিতে একটা রিয়েলিটি শো চলছিল। তখন আমরা কুরআন প্রতিযোগিতা আয়োজনের কথা বলতেই তিনি তাৎক্ষণিক সেটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন। ফলে ওই বছরে ছোট পরিসরে এটি শুরু করি। এবার বড় পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, পবিত্র কুরআনের পাখিদের সহযোগিতা করা। একটা ছেলে জিপিএ-৫ পেলে পুরস্কৃত হয়। তাহলে আমাদের কুরআনের আলোর পাখিরা পাবে না কেন? গত বছর আমরা সফলভাবে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে পেরেছি। এবছরও আমরা শুরু করেছি। এবার ব্যতিক্রম হচ্ছে, গতবার ছিল কেবল জাতীয় পর্যায়ে, এবার একটা জাতীয় পর্যায় হবে, একটা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ১৫টি দেশকে আমন্ত্রণ করেছি। এসব দেশ থেকে যতজন পাই, তাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কুরআনের নূর প্রতিযোগিতা হবে। আর যারা জাতীয় পর্যায়ে উন্নীত হবে, তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে।
সিলেট অঞ্চলের অডিশন সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়। এতে অংশ নেয় সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের ৫ শতাধিক প্রতিযোগী।
অনুষ্ঠানে শুরুতেই বিভিন্ন স্থান থেকে আগত প্রতিযোগীদের কার্ড ও ব্যাজ পরানো হয়। এরপর একে একে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। পরবর্তীতে সবাইকে সারিবদ্ধভাবে বসানোর পর নাস্তা সরবরাহ করেন আয়োজকরা। এরপর ক্রমান্বয়ে শুরু হয় প্রতিযোগিতা।
প্রতিযোগীদের ৫টি ভাগে ভাগ করে যাচাই-বাছাই করা হয়। প্রথম পর্বের অধিবেশন শেষে জুমার নামাজের বিরতি দিয়ে বেলা ২টা থেকে দ্বিতীয় অধিবেশন শুরুতে খাবার পরিবেশন করা হয়। দ্বিতীয়ার্ধের অনুষ্ঠান শেষে বিকেল ৪টায় সিলেটের অডিশনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২৩
এনইউ/এসএএইচ