ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

কসম ভঙ্গের কাফফারা

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৩
কসম ভঙ্গের কাফফারা

বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যার কসম করতে হয়, সে যেন আল্লাহর নামে কসম করে, অথবা চুপ থাকে’। (বুখারি: ২৬৭৯)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করা বা কসম করা শিরক ও কুফর।

তাই কখনো শপথ করলে একমাত্র আল্লাহর নামেই করতে হবে। নিজের মাথা, বুক বা শরীর ছুঁয়ে, মসজিদ ছুঁয়ে, সন্তানদের কসম করে, বিদ্যা, মাটির নামে বা বিভিন্ন জিনিস ছুঁয়ে কসম করা- এসব কাজ সম্পূর্ণ হারাম।

আর কথায় কথায় আল্লাহর নামে শপথ করাও পছন্দনীয় বিষয় নয়। তবু কেউ শপথ করলে তা পূরণ করা আবশ্যক। আল্লাহর নামে কসম করে তা ভেঙে ফেললে বা পূরণ না করতে পারলে ‘কাফফারা’ আদায় করতে হয়।

প্রসঙ্গত, কেউ যদি কোনো কাজ করা বা না করার শপথ করে, পরে তার মনে হয়, শপথের বিপরীত কাজটিই কল্যাণকর, তাহলে তার কর্তব্য হবে শপথ ভেঙে কল্যাণকর কাজটি করা এবং শপথের জন্য কাফফারা দিয়ে দেওয়া।

যেমন- কেউ শপথ করলো, স্ত্রীকে তালাক দেবে, গাড়ি বিক্রি করে দেবে, বাড়ি পরিবর্তন করবে, তার ভাইয়ের বাড়িতে প্রবেশ করবে না অথবা কারো সঙ্গে কথা বলবে না, তারপর তার কাছে স্পষ্ট হলো যে তার শপথের বিপরীত কাজই তার জন্য কল্যাণকর, তাহলে ওই শপথ ভেঙে কল্যাণকর কাজটি করবে।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা শপথ কসম ভঙ্গের কাফফারা বিষয়ে পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন-


لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَـٰكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا عَقَّدتُّمُ الْأَيْمَانَ ۖ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ ۖ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ ۚ ذَٰلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ ۚ وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

অর্থ: ‘আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ওই শপথের জন্যে যা তোমরা মজবুত করে বাধ। অতএব, এর কাফফরা এই যে, দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেণির খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। অথবা, তাদেরকে বস্তু প্রদান করবে অথবা, একজন ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে দেবে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না, সে তিন দিন রোজা রাখবে। এটা কাফফরা তোমাদের শপথের, যখন শপথ করবে। তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর’।  সূরা: আল মায়েদাহ, আয়াত: ৮৯)

নবীজি (সা.) নিজেও এ রকমই করতেন। আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত নবীজি (সা.) বলেছেন- 

إِنِّي وَاللَّهِ إِنْ شَاءَ اللَّهُ لاَ أَحْلِفُ عَلَى يَمِينٍ فَأَرَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا إِلاَّ كَفَّرْتُ عَنْ يَمِينِي وأَتَيْتُ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ 


অর্থ: ‘আল্লাহর কসম! ইনশাআল্লাহ কোনো বিষয়ে কসম করার পর তার বিপরীত কাজ উত্তম মনে হলে আমি কাফফারা দেই এবং উত্তমটিই করি’। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

কসমের কাফফারা হলো দশজন দরিদ্র ব্যক্তিকে দুই বেলা তৃপ্তি সহকারে খাবার খাওয়ানো অথবা দশজন দরিদ্র ব্যক্তিকে এক জোড়া করে কাপড় দেওয়া। অথবা একজন কৃতদাস মুক্ত করা (বর্তমানে যেহেতু দাসপ্রথা নেই, তাই এভাবে কাফফারাও দেওয়া যাবে না)। এভাবে কাফফারা আদায় করার সামর্থ্য না থাকলে লাগাতার তিন দিন রোজা রাখতে হবে।

রোজা রাখার ব্যাপারে শাইখ উসাইমীন বলেন, ‘যদি কেউ ক্রীতদাস না পায়, পোশাক বা খাবার দিতে না পারে তাহলে সে তিনদিন রোজা রাখবে। এ রোজাগুলো লাগাতরভাবে রাখতে হবে। মাঝে কোনদিন রোজা ভাঙ্গা যাবে না। (ফাতাওয়া মানারুল ইসলাম: ৩/৬৬৭)

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৩
জেএইচ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।