সপ্তাহের অন্য কোনো দিনের চেয়ে জুমাবারের গুরুত্ব বেশি। জুমার দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলা হয়েছে।
সপ্তাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হওয়ার কারণে জুমার দিনের বিশেষ কিছু আদব ও শিষ্টাচার রয়েছে। কিছু জুমার আগে, কিছু মসজিদের, কিছু খুতবার সময়ের আর কিছু নামাজের আগে-পরের।
সেগুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা-
১. জুমার দিন গোসল করা। যাদের উপর জুমা ফরজ তাদের জন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসুল (সাঃ) ওয়াজিব করেছেন (বুখারি, হাদিস নং: ৮৭৭, ৮৭৮)।
পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসাবে সেদিন নখ ও চুল কাটা একটি ভাল কাজ।
২. জুমার নামাজের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। (বুখারি, হাদিস নং: ৮৮০)
৩. মিস্ওয়াক করা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ১০৯৮; বুখারি, হাদিস নং: ৮৮৭)
৪. গায়ে তেল ব্যবহার করা। (বুখারি, হাদিস নং: ৮৮৩)
৫. উত্তম পোশাক পরিধান করে জুমা আদায় করা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ১০৯৭)
৬. মুসুল্লিরা ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিজি, হাদিস নং:৫০৯, ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ১১৩৬)
৭. মনোযোগ সহ খুতবা শোনা ও চুপ থাকা- এটা ওয়াজিব। (বুখারি, হাদিস নং: ৯৩৪, মুসলিম, হাদিস নং: ৮৫৭)
৮. আগে ভাগে মসজিদে যাওয়া। (বুখারি, হাদিস নং:৮৮১, মুসলিম, হাদিস নং: ৮৫০)
৯. পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন। (আবু দাউদ, হাদিস নং: ৩৪৫)
১০. জুমার দিন ফজরের নামাজে ১ম রাকাতে সুরা সাজদা (সুরা নং ৩২) আর ২য় রাকাতে সুরা দাহর (সুরা নং : ৭৬) পড়া। (বুখারি, হাদিস নং: ৮৯১, মুসলিম, হাদিস নং: ৮৭৯)
১১. সুরা জুমা ও সুরা মুনাফিকুন দিয়ে জুমার নামাজ আদায় করা। অথবা সুরা আলা ও সুরা গাশিয়া দিয়ে জুমা আদায় করা। (মুসলিম, হাদিস নং: ৮৭৭)
১২. জুমার দিন ও জুমার রাতে বেশি বেশি দুরুদ পড়া। (আবু দাউদ, হাদিস নং: ১০৪৭)
১৩. এ দিন বেশী বেশী দোয়া করা। । (বুখারি, হাদিস নং: ৯৩৫)
১৪. মসজিদে মুসুল্লিদের মাঝে ফাঁক করে সামনের দিকে এগিয়ে না যাওয়া। (বুখারি, হাদিস নং:৯১০)
১৫. মুসুল্লিদের ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে আগানোর চেষ্টা না করা। (আবু দাউদ, হাদিস নং: ৩৪৩)
১৬. কাউকে উঠিয়ে দিয়ে, সেখানে বসার চেষ্টা না করা। (বুখারি, হাদিস নং: ৯১১, মুসলিম, হাদিস নং: ২১৭৮)
১৭. খুতবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলে তখনও দুই রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করা ছাড়া না বসা। (বুখারি, হাদিস নং: ৯৩০)
১৮. জুমার দিন নামাজের আগে মসজিদে জিকর বা কোনো শিক্ষামুলক হালকা না করা। অর্থাৎ ভাগ ভাগ হয়ে, গোল গোল হয়ে না বসা, যদিও এটা কোনো শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হোক। (আবু দাউদ, হাদিস নং: ১০৮৯)
১৯. কেউ কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। (নাসায়ি, হাদিস নং: ৭১৪, বুখারি, হাদিস নং: ৯৩৪)
২০. মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধুমপান না করা। (বুখারি, হাদিস নং: ৮৫৩)
২১. ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়াগা বদল করে বসা। (আবু দাউদঃ ১১১৯)
২২. ইমামের খুৎবা দেওয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা। (আবু দাউদ, হাদিস নং: ১১১০, ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ১১৩৪)
২৩. খুতবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা। (আবু দাউদ, হাদিস নং: ১১০৮)
২৪. জুমার দিন সুরা কাহফ পড়া। এতে পাঠকের জন্য আল্লাহ তাআলা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। (হাকেম, হাদিস নং: ২/৩৬৮, বায়হাকি, হাদিস নং: ৩/২৪৯)
২৫. জুমার আযান দেওয়া। অর্থাৎ ইমাম মিম্বরে বসার পর যে আযান দেওয়া হয় তা। (বুখারি, হাদিস নং: ৯১২)
২৬. জুমার ফরজ নামাজ আদায়ের পর মসজিদে ৪ রাকাত সুন্নাত আদায় করা। (বুখারি, হাদিস নং: ১৮২, মুসলিম, হাদিস নং: ৮৮১)
২৭. যেখানে জুমার ফরজ আদায় করেছে, উত্তম হল ঐ একই স্থানে সুন্নাত না পড়া। অথবা কোন কথা না বলে এখান থেকে গিয়ে পরবর্তী সুন্নাত সালাত আদায় করা। (মুসলিম, হাদিস নং: ৭১০, বুখারি, হাদিস নং: ৮৪৮)
২৮. খুতবার সময় খতিবের কোনো কথার সাড়া দেওয়া বা তার প্রশ্নের জবাব দানে শরিক হওয়া জায়েজ। (বুখারি, হাদিস নং: ১০২৯, মুসলিম, হাদিস নং: ৮৯৭)
২৯. হানাফি আলেমগন বলেছেন, ভিড় প্রচণ্ড হলে সামনের মুসুল্লির পিঠের ওপর সেজদা দেওয়া জায়েজ। (আহমাদ, হাদিস নং: ১/৩২)। প্রয়োজনে পায়ের ওপরও দিতে পারবে। (আর রাউদুল মুরবি)
৩০. ইমাম সাহেব মিম্বরে এসে হাজির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাসবিহ-তাহলিল, তাওবা-ইস্তিগফার ও কোরআন তেলাওয়াতে ব্যস্ত থাকা।
বাংলাদেশ সময়:০৭৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩
এসআই