ইসলামে গিবত ও পরনিন্দা করা কবিরা গুনাহ তথা বড় পাপ। আর গিবতের মধ্যে দুই ধরনের গিবত সবচেয়ে ভয়াবহ।
১. আলেমদের গিবত করা
নবী-রাসুলদের পর আলেমরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ।
সাধারণ কোনো মানুষের চেয়ে তাঁদের মর্যাদা অনেক বেশি। কেননা তাঁরা নবীদের উত্তরাধিকারী। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আবেদের ওপর আলেমের মর্যাদা তেমন, তারকারাজির ওপর চাঁদের মর্যাদা যেমন। নিশ্চয়ই আলেমরা নবীদের ওয়ারিশ বা উত্তরসূরি।
নবীরা কোনো দিনার-দিরহামের ওয়ারিশ রেখে যান না; বরং তাঁরা ইলমের ওয়ারিশ রেখে যান। যে ব্যক্তি সেই জ্ঞান লাভ করতে পেরেছে, সে প্রভূত কল্যাণ লাভ করেছে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৮২)
সুতরাং আলেমদের মান-মর্যাদা যেহেতু বেশি, তাই তাঁদের পরনিন্দায় পাপের ভয়াবহতাও বেশি। সাধারণ মানুষের গিবত করা মৃত মানুষের গোশত ভক্ষণের মতো জঘন্য পাপ; কিন্তু আলেমদের গোশত আরো বিষাক্ত।
তাঁদের গিবত করলে বান্দার ঈমান ধ্বংসের মুখে পতিত হয়। ইহ ও পরকালে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ.) বলেন, ‘আলেমদের গোশত বিষাক্ত। যে ব্যক্তি এর ঘ্রাণ নেবে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে। আর যে ব্যক্তি এটা ভক্ষণ করবে সে মৃত্যুবরণ করবে। ’ (আল-মুঈদ ফি আদাবিল মুফিদ ওয়াল মুস্তাফিদ, পৃষ্ঠা ৭১)
ইবনু আসাকির (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আলেম-উলামার সমালোচনায় স্বীয় জিহ্বাকে প্রবৃত্ত করবে, আল্লাহ তার দৈহিক মৃত্যুর আগেই অন্তরের মৃত্যু দিয়ে তাকে পরীক্ষা করবেন। ’ (দাইউস সুলুক, ১/৩৯০)
সুতরাং আলাপ-আলোচনায়, গল্প-আড্ডায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় আলেমদের ব্যক্তিগত দোষ-ত্রুটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করা অন্যান্য কবিরা গুনাহর চেয়েও অনেক প্রভাব বিস্তারকারী মহাপাপ। কেননা এর প্রভাব শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
২. মৃত মানুষের গিবত করা
মৃত মানুষের দোষ-ত্রুটি চর্চা করার ভয়াবহতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। রাসুলুল্লাহ (সা.) মৃত মানুষের গিবতের ব্যাপারে আলাদাভাবে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, তোমাদের কোনো সঙ্গী মারা গেলে তাকে ছেড়ে দাও। তার সম্পর্কে কোনো কটূক্তি কোরো না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৯৯)
ইমাম মানাভি (রহ.) বলেন, ‘জীবিত ব্যক্তির চেয়ে মৃত ব্যক্তির গিবত করা বেশি ভয়াবহ। ’ (আত-তায়সির শারহু জামিইস সাগির ১/১৪২)
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩
জেএইচ