ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

অবধারিত চিরন্তন পরিণতি ‘মৃত্যু’

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩
অবধারিত চিরন্তন পরিণতি ‘মৃত্যু’

যার সূচনা হয়েছে তার সমাপ্তি ঘটবেই। যার জন্ম হয়েছে, তার মৃত্যু হবেই।

এটা মহান আল্লাতায়ালার শাশ্বত চিরন্তন বিধান। এ অমোঘ বিধানের কোনো পরিবর্তন পরিবর্ধন নেই। পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে চির ও অনড় সত্য হলো মৃত্যু।  

প্রত্যেক প্রাণীকে মরতে হবে। ছারপোঁকা থেকে শুরু করে প্রাণওয়ালা যত সৃষ্টিজীব আছে সবাইকে মৃত্যুর অবশ্যম্ভাবী স্বাদ নিতে হবে। প্রাণত্যাগের এই বিধান থেকে জগতের কোনো তাবৎ পরাশক্তি কোনো প্রযুক্তি কাউকে বাঁচাতে পারবে না।

এখানে সবাই অক্ষম। মৃত্যুর নির্ধারিত সময় থেকে এক সেকেন্ড কমবেশি করার ক্ষমতা রাখেনা জগতের কোন দাপটশালী মোড়ল। মৃত্যুর অনীবার্য স্বাদ হর  প্রাণীকে পান করতে হবে। আল্লাহ বলেন, “প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু”। সূরা আনয়াম ১৮৫।  

এই আয়াতের তাফরিরে ব্যাখ্যাকাররা বলেন, প্রত্যেক প্রাণওয়ালা প্রাণীই মরণশীল। বেলা শেষে সূর্য যেমন সব পাঠ চকিয়ে বিদায়ী হয়। তাকে বিদায় নিতে হয় । দিবাকরের অস্ত পথ যেমন কেউ রুখতে পারে না।

ঠিক তদ্রুপ মানুষের মৃত্যুর সময় যখন আসন্ন হবে, মৃত্যুর ঘণ্টা ধ্বনি যবে বেজে উঠবে তখন কেউ মৃত্যুকে প্রতিহত করতে পারবে না। নির্ধারিত সময় থেকে পূর্বপরে মৃত্যু ঘটাতে সক্ষম হবে না। আল্লাহ বলেন, “যখন তাদের (মৃত্যুর) সময় হয় তখন তারা মুহূর্তকাল অগ্রবর্তী ও পশ্চাতবর্তী হতে পারে না”। সূরা নাহল ৬১।  

কখন কোন মানুষের বা প্রাণীর তিরোধান হবে এটা কেউ জানেনা। দুনিয়াতে আগমনের পরিক্রমা সিরিয়াল আছে, প্রথমে দাদা পরে পিতা তারপর নাতি। কিন্তু যাবার কোন সিরিয়াল নেই। যখন যার ডাক আসে তাকে তখনি পরপারে চলে যেতে হবে। সামন্য সময়ের ফুরসৎ দেয়া হবে না। কুরআনে পঠিত হয়েছে, “যখন কারো কর্ম-সময় পূর্ণ হয়ে যাওয়ার মুহূর্ত  এসে পড়ে, তখন আল্লাহ তাকে কখনই অধিক অবকাশ দেন না”। সূরা মুনাফিকুন ১১।  

মৃত্যু কাউকে জানান দিয়ে আসে না। কোন সময় বা স্থান কাল নির্ধারিত জায়গা ধরে উপস্থিত হয় না। মানুষ জানে না কার মৃত্যু কোথায় কোন জমিনে হবে। আল্লাহ বলেন, “কোন প্রাণীই জানেনা আগামিকাল সে কী উপার্জন করবে। এবং  কেউ জানেনা তার মৃত্যু হবে কোন জমিনে”। সূরা লোকমান ৩৪।  

দুনিয়ার জগত হলো ক্ষণস্থায়ী। একদিন জগত নির্মূল নাশ হয়ে যাবে। পৃথিবী তার অস্তিত্ব হারাবে। পৃথিবীতে কোন মানুষের চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে না। এই ধ্বংসশীল দুনিয়াতে মানুষও ধ্বংসশীল। আদম জাতিও ক্ষণস্থায়ী। একজন মুসাফির ভবঘুরে যেমন আপন ঠিকানাবিহীন পথ প্রান্তরে ঘুরে বেড়ায়, তার চলতে পথে কোন নির্ধারিত বাসস্থান থাকে না, তেমনি দুনিয়াতে মানবজাতির পরোক্ষ কোন বাসস্থান নেই। যা আছে তা ক্ষণস্থায়ী। দুনিয়ার ময়দানে মানব হল মুসাফির। পৃথিবীর পথে সে হল বাউণ্ডুলে পথিক। তার হায়াতের নির্ধারিত সময়ের ভেতর পূঁজি সংগ্রহ করে পথ চলতে হবে। মুসাফির হয়ে পথের পাথেয় যোগাড় করতে হবে। ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত, ‘“তিনি বলেন রাসুল সাঃ আমার বাহুমূলে ধরলেন। তারপর বললেন, “দুনিয়াতে এভাবে কাটাও যেন তুমি মুসাফির বা পথিক”। হযরত ইবনে উমর বলেন, যখন সন্ধ্যা হয়ে যায় সকাল বেলার অপেক্ষা করো না। আর যখন সকাল হয়ে যায় সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। সুস্বাস্থের দিনগুলোতে রোগব্যাধির প্রস্তুতি নাও। আর জীবদ্ধশায় থাকাকালীন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করো”’। বোখারি ৬৪১৬।

 এ কথা যখন দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট, কোরআন হাদিস তার প্রমাণ বহন করে যে, মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। সবাইকে মৃত্যুর উন্মুক্ত দরজায় প্রবেশ করতে হবে। তা আমাদের মম চিত্তকে পরিশুদ্ধ করা প্রয়োজন। কবরে সুখে থাকার উপকরণ সংগ্রহ করা লাযেম। মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করা দরকার । প্রত্যেকটা কাজের প্রারম্ভে করোটিতে মৃত্যু নামক বাস্তব শব্দের চিত্র আঁকা অতিজরুরি। হাদিসে বিধৃত হয়েছে, আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাঃ বলেছেন- (দুনিয়ার) স্বাদ গন্ধকে বিলুপ্তকারী মৃত্যুকে তোমরা বেশি বেশি স্মরণ করো। তিরমীযি ২৩০৭।

নশ্বর পৃথিবীর শাশ্বত চিরন্তন সত্য হলো মৃত্যু। মৃত্যুর চেয়ে অপরিবর্তনীয় অনড় শব্দ জগতের অভিধানে খুব কম। আখেরে সবাইকে জগত ছেড়ে পরপারে যেতে হবে এটা স্বাভাবিক। সুতরাং ধরার সব পাঠ শেষ করে ইসলামী জীবন ধারণ করে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে মৃত্যুর প্রহর গোনা বুদ্ধিমানের কাজ।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।