ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

ইসলামের দৃষ্টিতে জনপ্রতিনিধিদের যেসব গুণ থাকবে 

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২৪
ইসলামের দৃষ্টিতে জনপ্রতিনিধিদের যেসব গুণ থাকবে  প্রতীকী ছবি

হাদিসে বলা হয়েছে, অযোগ্য লোকের নেতৃত্ব লাভ কিয়ামতের আলামত। রাসুল (সা.) বলেন, যখন কোনো অনুপযুক্ত ব্যক্তির ওপর কোনো কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তখন তুমি কিয়ামতের অপেক্ষা করবে।


(বুখারি, হাদিস : ৫৯)

তাই জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে খুব সতর্ক হওয়া উচিত।  

নিম্নে ইসলামের দৃষ্টিতে জনপ্রতিনিধির মধ্যে যেসব গুণ থাকা আবশ্যক তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো -

১. সচ্চরিত্রবান হওয়া : মানুষ তার জনপ্রতিনিধির দ্বারা প্রভাবিত হয়। তার রুচি ও অভ্যাসের প্রভাব তার এলাকার আইন-শৃঙ্খলায় লক্ষ্য করা যায়। তাই জনগণের উচিত, জনপ্রতিনিধি হিসেবে যোগ্য ব্যক্তিকে বেছে নেওয়া। সৎ ব্যক্তির গুণ নিয়ে হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, নবী (সা.) অশ্লীল ভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে নৈতিকতায় সর্বোত্তম। (বুখারি, হাদিস : ৩৫৫৯)

২. সত্যবাদী হওয়া : জনগণের প্রতিনিধি হওয়ার সবচেয়ে আবশ্যকীয় যোগ্যতা হলো মুত্তাকি হওয়া, সত্যবাদী হওয়া। কারণ যার মধ্যে আল্লাহর ভয় নেই, যে সত্যবাদী নয়, সে কখনো কারো কল্যাণে কাজ করবে না; বরং লোভ-লালসার মোহে পড়ে সামান্য স্বার্থে জনগণের অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলবে।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির সঙ্গে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা কথা বলবেন না, তাদের (গুনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না। বর্ণনাকারী আবু মুআবিয়া বলেন, তাদের প্রতি তাকাবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (এরা হলো) বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক বা রাষ্ট্রপ্রধান ও অহংকারী দরিদ্র ব্যক্তি।
(মুসলিম, হাদিস : ১৯৬)

৩. জনদরদি হওয়া : যে সব সময় জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে, জনগণের সুখ-দুঃখে তাদের পাশে থাকবে, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করবে না- এমন লোককেই জনপ্রতিনিধি হিসেবে বেছে নেওয়া উচিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, এমন আমির যার ওপর মুসলিমদের শাসনক্ষমতা অর্পিত হয়, অথচ এরপর সে তাদের কল্যাণ সাধনে চেষ্টা না করে বা তাদের মঙ্গল কামনা না করে; আল্লাহ তাকে তাদের সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। (মুসলিম, হাদিস : ৪৬২৫)

৪. ন্যায়পরায়ণ হওয়া : হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘সাত রকমের লোক, যাদের আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাঁর ছায়ায় আশ্রয় দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া হবে না। ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক...’ (বুখারি, হাদিস : ৬৮০৬)

৫. জ্ঞানী ও শিক্ষিত হওয়া : জ্ঞান ও শিক্ষা না থাকলে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা সম্ভব নয়, জনগণের অধিকার অনুধাবন ও তা সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। জনগণের দাবিগুলো ওপর মহলে যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করে জনগণের কল্যাণের দাবি আদায় করাও সম্ভব নয়। তাই জনপ্রতিনিধি হতে হলে অবশ্যই তার মধ্যে দ্বিনি ও জাগতিক শিক্ষা থাকা আবশ্যকীয়। মিসরের রাজা হজরত ইউসুফ (আ.)-কে মন্ত্রিত্ব গ্রহণের প্রস্তাব করলে তিনি সে মন্ত্রালয়ের দায়িত্ব প্রার্থনা করেন, যে মন্ত্রণালয়ের সংকট দূর করার স্বচ্ছ জ্ঞান মহান আল্লাহ তাঁকে দিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ইউসুফ বলেন, আমাকে দেশের ধনভাণ্ডারের ওপর কর্তৃত্ব প্রদান করুন; আমি তো উত্তম রক্ষক, সুবিজ্ঞ। ’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত  : ৫৫)

উল্লেখ্য, সাধারণ অবস্থায় যদিও পদ বা নেতৃত্ব প্রার্থনা করা বৈধ নয়; কিন্তু ইউসুফ (আ.)-এর এই পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে জানা যায় যে বিশেষ অবস্থায় যদি কোনো লোক এটা মনে করে যে জাতি ও রাষ্ট্রের ওপর আসা সংকটের উচিত ব্যবস্থার যথাযথ যোগ্যতা আমার মধ্যে বিদ্যমান, যা অন্যের মধ্যে নেই, তাহলে সে নিজের যোগ্যতা অনুসারে এই বিশেষ পদ প্রার্থনা করতে পারে। ইউসুফ (আ.) মূলত পদ প্রার্থনাই করেননি; বরং তখন মিসরের রাজা তাঁর সামনে এর প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

৬. স্বেচ্ছাচারী না হওয়া : এই গুণ জনপ্রতিনিধিকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে সাহায্য করে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি তোমাদের আমার ইচ্ছামতো কোনো জিনিস দিই না এবং আমার ইচ্ছামতো তোমাদের তা থেকে বঞ্চিত করি না। আমি তো শুধু কোষাধ্যক্ষ বা বণ্টনকারী। আমাকে যেখানে ব্যয়ের নির্দেশ দেওয়া হয় সেখানেই ব্যয় করি। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৯৪৯)

৭. আমানতদার হওয়া : জনপ্রতিনিধিত্ব একটি আমানত। এর যথাযথ হক আদায়ের জন্য জনপ্রতিনিধির মধ্যে আমানত রক্ষার যোগ্যতা থাকতে হবে। তা না হলে এটিই তার জন্য লাঞ্ছনার কারণ হবে। আবু জার (রা.) বলেন, আমি আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কি আমাকে প্রশাসক পদ প্রদান করবেন? তিনি তখন তাঁর হাত দিয়ে আমার কাঁধে আঘাত করে বলেন, ‘হে আবু জার, তুমি দুর্বল, অথচ এটি হচ্ছে একটি আমানত। (দায়িত্ব আদায়ে অবহেলা হলে) আর কিয়ামতের দিন এটা হবে লাঞ্ছনা ও অনুশোচনা। তবে যে এর হক সম্পূর্ণ আদায় করবে তার কথা ভিন্ন। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৬১৩)

৮. সুবিচার করার যোগ্যতা রাখা : সাধারণত জনপ্রতিনিধিকে মানুষের অনেক সমস্যা সমাধান করতে হয়, বিরোধ মীমাংসা করতে হয়, অনেক ক্ষেত্রে বিচারও করতে হয়। তাই একজন যোগ্য জনপ্রতিনিধি হতে হলে অবশ্যই সত্যকে অনুধাবন ও সুবিচার করার যোগ্যতা থাকতে হবে। বুরাইদা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, নবী (সা.) বলেছেন, বিচারকরা তিন প্রকারের হয়ে থাকে। দুই প্রকারের বিচারক হচ্ছে জাহান্নামি এবং এক প্রকারের বিচারক হচ্ছে জান্নাতি। জেনেশুনে যে লোক (বিচারক) অন্যায় রায় প্রদান করে সে হচ্ছে জাহান্নামি। সত্যকে সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি না করেই যে লোক (বিচারক) মানুষের অধিকারসমূহ নস্যাৎ করে সে লোকও জাহান্নামি। আর যে লোক ন্যায়সংগতভাবে ফায়সালা প্রদান করে (বিচারক) সে জান্নাতের অধিবাসী। (তিরমিজি, হাদিস : ১৩২২)

৯. প্রতিশোধপরায়ণ না হওয়া : ব্যক্তিগত কারণে প্রতিশোধপরায়ণ না হওয়া নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় গুণ, যা প্রিয় নবী (সা.)-এর মধ্যে বিদ্যমান ছিল। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) কোনো ব্যক্তিগত ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন না। অবশ্য কেউ আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে, তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার প্রতিশোধ নিতেন। (বুখারি, হাদিস : ৬১২৬)

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২৪
এসএএইচ                                                                                                                                     
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।