নামাজ ইসলাম ধর্মের পাঁচটি রোকনের মধ্যে দ্বিতীয়। প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক ও বুদ্ধি-জ্ঞান সম্পন্ন, নারী পুরুষ নির্বিশেষে, প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফরজ বা অবশ্যকরণীয় একটি ধর্মীয় কাজ।
নামাজ শুরুর আগে কেবলার দিকে ফিরে তাকাতে হয়। পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেছেন- قَدْ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ ۖ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا ۚ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۚ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ ۗ وَإِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا يَعْمَلُونَ
অর্থ: ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বারবার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর। যারা আহলে-কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, এটাই ঠিক পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আল্লাহ বেখবর নন, সে সমস্ত কর্ম সম্পর্কে যা তারা করে’। (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ১৪৪)
অতএব, নতুন কোনো জায়গায় গেলে নামাজের জন্য প্রথমে কেবলা নির্ণয়ের চেষ্টা করা জরুরি। আর কেবলা নির্ণয় করতে সে এলাকার মসজিদের মিম্বার দেখে, কেবলার চিহ্ন দেখে, সূর্যের গতিপথ দেখে বা কাউকে জিজ্ঞাসা করে অথবা পারিপার্শ্বিক সব কিছু বিবেচনা (তাহাররি) করে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া। এভাবে নামাজ পড়লে নামাজ আদায় হয়ে যাবে। এ পদ্ধতিতে সাধারণত কেবলা নির্ণয়ে ভুল হয় না। কোনো ব্যতিক্রম হিসেবে যদি ভুলও প্রমাণ হয় তবু কেবলা নির্ণয়ের চেষ্টা করে নামাজ পড়ার কারণে নামাজ আদায় হয়ে যাবে। দ্বিতীয়বার সেই নামাজ পড়তে হবে না।
তবে যদি কেবলা নির্ণয়ের প্রচলিত পদ্ধতির কোনো একটাও অবলম্বন না করে অনুমানের ভিত্তিতে কেবলা ধরে একদিকে ফিরে নামাজ পড়া হয়, আর পরে প্রমাণ হয় তা কেবলার দিক ছিল না, তাহলে নামাজ পুনরায় পড়তে হবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে মোবাইলে, চাবিতে, ট্রলি ব্যাগে বা নানা উপকরণে কম্পাস থাকে তা দিয়ে কেবলা নির্ণয় করা যায়। যদি তা ত্রুটিমুক্ত হয় এবং ইতোপূর্বে সঠিকভাবে কেবলা দেখিয়ে থাকে, তাহলে প্রয়োজনীয় সময়ে কেবলা নির্ণয়ের জন্য তা ব্যবহার করা যেতে পারে। কেবলা নির্ণয়ের চেষ্টা করে নামাজ পড়ার পর কোনো কারণে কেবলা ভুল প্রমাণিত হলে ওয়াক্তের মধ্যেই জানা গেলে নামাজ পুনরায় পড়ে নেওয়াই উত্তম। তবে ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেলে নামাজ আদায় হয়ে গেছে বলে গণ্য হবে। দ্বিতীয়বার আর পড়তে হবে না। তাই আপনি যদি হুট করে একদিকে ফিরে নামাজ আদায় করে থাকেন তাহলে আবারও নামাজ পড়ে নিতে হবে। (ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/৬৪, ফাতাওয়া শামি: ২/১১৬, তাতার খানিয়া : ২/৩৪)
কেবলা সম্পর্কে আমাদের একটি বিষয় জেনে রাখা বিশেষ জরুরি- যারা কাবা শরিফের পূর্বে অবস্থান করে তাদের জন্য কেবলা পশ্চিম দিক। আবার যারা কাবা শরিফের দক্ষিণে অবস্থান করে তাদের জন্য কেবলা উত্তর দিক। আর যারা কাবা শরিফের উত্তরে অবস্থান করে তাদের কেবলা দক্ষিণ দিক। মূল কথা কথা হলো- যে যেখানেই অবস্থান করুক না কেন, বাইতুল্লাহ তথা কাবা শরিফ-ই মুসলিম উম্মাহর কেবলা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২৪
জেএইচ